খালিদ আহমেদ: [২] চলমান অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে কৃষিখাতে ঋণের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ২১০ কোটি টাকা হয়েছে। ব্যাংকগুলো এখন কৃষিখাতে বিভিন্ন ধরণের তহবিল দিচ্ছে।
[৩] বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, সম্প্রতি অনেকেই শিল্পখাতে চাকরি হারিয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষিখাতের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছেন। এটি সার্বিকভাবে কৃষি ঋণ বণ্টনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
[৪] বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য কৃষিখাতে ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে, যার ১৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে অর্জিত হয়েছে। ১ বছর আগে, একই সময়সীমার মধ্যে অর্জন ছিল লক্ষ্যমাত্রার ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশ।
[৫] বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিরীন আখতার জানান, মহামারির কারণে সৃষ্ট মন্দায় অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে কৃষিখাতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তারা হাঁস-মুরগী, মাছ এবং গবাদি পশু উৎপাদন ও পালনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।
[৬] তিনি আরও জানান, এই প্রেক্ষাপটে কৃষি ঋণের চাহিদা বাড়ছে এবং আগামীতেও এই চাহিদা বাড়তে থাকবে।
[৭] এছাড়াও কৃষি ঋণ পরিশোধের পরিমাণও সম্প্রতি বেড়েছে। যা ব্যাংকগুলোকে এ খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে সহায়তা করছে।
[৮] গত সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, কৃষিখাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৫৭ কোটি টাকা, যেটি গত বছরের একই সময় পর্যন্ত ঋণের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম।
[৯] শিরীন জানান, কৃষক ও খামারিরা মূলত ভোক্তা হিসেবে খুবই ভালো এবং তারা অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলার মুখোমুখি হলেও সময় মতো ঋণ পরিশোধ করেন।
[১০] ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি জানান, কৃষিখাতে ডাইভারসিফিকেশনের কারণে কৃষি ঋণ বিতরণে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
[১১] তিনি জানান, অনেক কৃষক এখন বিভিন্ন ধরণের ফুল ও ফল উৎপাদন করেন, যা আগে দেখা যেতো না। ব্যাংকগুলোও তাদের মাঝে ঋণ বিতরণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে।
[১২] এছাড়াও ঋণ পরিশোধের ধারা শিল্পখাতের চেয়ে ভালো হওয়ার কারণে ঋণদাতারা চেষ্টা করছেন এই খাতে বেশি ঋণ বিতরণ করতে।
[১৩] এমরানুল হক বলেন, 'শিল্পখাতে একজন গ্রাহককে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিতে হয়। সেই ঋণগ্রহীতা যদি খেলাপি হয়ে যায়, তাহলে পুরো ব্যাংককে তার দায় নিতে হয়।'
[১৪] তিনি জানান, কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ করা শিল্পখাতের চেয়ে বেশি নিরাপদ এবং এ কারণেই ব্যাংকগুলো ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্রমশ কৃষকদের বেশি পছন্দ করছে।
[১৫] অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম জানান, যেসব ব্যাংক তাদের বার্ষিক কৃষি ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।
[১৬] মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, বেসরকারি ব্যাংকগুলো সম্প্রতি কৃষি ঋণ বিতরণের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিষদ কৃষি ঋণ বিতরণ প্রকল্পগুলোর ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে বলেও তিনি জানান।