শেখ রাসেল- জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান। সবার আদরের ছিলো সে। পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাকে আদর করতো। মায়ের আদর ছিলো। বোনেরাও তাকে ভীষণ আদর করতো। ভালোবাসতো। স্কুলের শিক্ষকেরাও তাকে ভালোবাসতেন। গৃহশিক্ষক গীতালি চক্রবর্তীর ভীষণ আদরের ছিলো শেখ রাসেল। সকলকে সে মাতিয়ে রাখতো। মেতে থাকতো। সহপাঠীরাও তার সঙ্গে খেলতো। আনন্দ করতো। প্রাণসঞ্চারি একটা শিশু, যে দেশের জন্য বড় সম্পদ হতো পারতো। দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারতো বেঁচে থাকলে।
সবার আদরের- নিষ্পাপ, নির্মল শিশু শেখ রাসেলের প্রাণ গেলো ঘাতকের নির্মম আঘাতে। ঘাতকের হাত একবারও কাঁপলো না। আল্লাহকেও ভয় পেলো না। কী অপরাধ সে করেছিলো? কেন তাকে জীবন দিতে হলো? সে তো রাজনীতি করেনি। রাজনীতি বুঝেনি। বোঝার মতো বয়সও ছিলো না। একটা নিষ্পাপ শিশু। মানবতাবিরোধী মানবতাহীন কিছু পশু তাকেসহ বঙ্গবন্ধুর গোটা পরিবারকে হত্যা করেছিলো সেদিন। যা মানব ইতিহাসে এক ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞ ছিলো। সভ্য জগতে এমনটি করতে পারে কেউ? কোথাও কি আর ঘটেছে এমন হত্যাকাণ্ড যেখানে নারী-শিশুকেও রেহাই দেয়নি ঘাতকেরা।
হত্যাকারীদের কাছে রাসেলের আকুতি ছিলো মায়ের কাছে যাওয়ার। কী করেছিলো ঘাতকেরা তার সঙ্গে? ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে যখন একদল তরুণ সেনা কর্মকর্তা ট্যাঙ্ক দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডিস্থ ৩২ নম্বর বাসভবন ঘিরে বঙ্গবন্ধু ও তার ব্যক্তিগত কর্মচারীদের সঙ্গে শিশু শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়। আতঙ্কিত হয়ে শিশু রাসেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমি মায়ের কাছে যাবো’।
পরবর্তী সময়ে মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মিনতি করেছিলেন, ‘আমাকে হাসু আপার (শেখ হাসিনা) কাছে পাঠিয়ে দাও’। ব্যক্তিগত কর্মচারী এএফএম মহিতুল ইসলামের ভাষ্যমতে, ‘রাসেল দৌড়ে এসে আমাকে জাপটে ধরে। আমাকে বললো, ভাইয়া আমাকে মারবে না তো? ওর সে কণ্ঠ শুনে আমার চোখ ফেটে পানি এসেছিলো। এক ঘাতক এসে আমাকে রাইফেলের বাঁট দিয়ে ভীষণ মারলো। আমাকে মারতে দেখে রাসেল আমাকে ছেড়ে দিলো। শেখ রাসেল কান্নাকাটি করছিলো যে ‘আমি মায়ের কাছে যাবো, আমি মায়ের কাছে যাবো’। এক ঘাতক এসে তাকে বললো, ‘চল তোর মায়ের কাছে দিয়ে আসি’। বিশ^াস করতে পারিনি যে ঘাতকরা এতো নির্মমভাবে ছোট্ট সে শিশুটাকেও হত্যা করবে। রাসেলকে ভেতরে নিয়ে গেলো এবং তারপর ব্রাশ ফায়ার’।
শেখ রাসেল অমর। সব শিশুর মধ্যে বেঁচে থাকবে। সব শিশুর অনুপ্রেরণা। দুরন্ত, দুর্বার শিশু শেখ রাসেল বাস করুক সব শিশুর অন্তরে।
পরিচিতি : প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ