নিউজ ডেস্ক: বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে দুই দিনব্যাপী বৈঠক শেষ করেছে বিএনপি। শনিবার বিকাল সাড়ে তিনটায় গুলশানস্থ বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন। শুক্রবার প্রথম দিনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুইদিন চলা এ বৈঠকে আইনজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সাংবাদিক, কৃষিবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, প্রযুক্তিবিদসহ ৩২টি পেশাজীবী সংগঠনের ১৯০ জন নেতা অংশ নেন। মানবজমিন
বৈঠকে দেশ ও বিদেশের সমসাময়িক রাজনীতি, ২০দলীয় জোটের বিষয়, বিশেষ করে জামায়াতের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, রাজনৈতিক মাঠে নিজের মিত্র দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যের আলোচনার বিষয়েও বিএনপি’র হাইকমান্ডের কাছে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন পেশাজীবী নেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক, দু’দিক থেকেই সরকারকে চাপে ফেলতে হবে। রাজনৈতিকভাবে চাপে ফেলতে পারলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। এই চিন্তা নিয়ে বিএনপিকে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করার পরামর্শ দিয়েছেন নেতারা।
শনিবার বৈঠক শেষে বের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, আন্দোলন সংগ্রাম করা একটি গণতান্ত্রিক দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার। মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে, ন্যায়ের শাসনের দাবি জানাবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে সাধারণ মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা সেটা যদি মানুষ প্রকাশ করতে না পারে তাহলে তো সমস্যা। সেই সঙ্গে যারা আন্দোলন করবেন তারা যেন মনে রাখেন, আন্দোলন যেন সহিংস না হয়। যাতে করে সাধারণ জনগণ এই আন্দোলনে অংশ নিতে ভয় না পায়। কারণ সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ না থাকলে শুধু কর্মীদের দিয়ে আন্দোলন হয় না। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। আমরা ’৬৯ সালে আন্দোলন করেছি। তখন দেখেছি সাধারণ মানুষ কীভাবে আন্দোলনে শরিক হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন সবকিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন সেই কালচার দেশে নেই। সাধারণ মানুষকে আন্দোলনমুখী করতে হবে। তাহলে দেশ ও মানুষের মঙ্গল হবে।
বৈঠকের বক্তব্যের বিষয়ে অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, আজকের (গতকালের) বৈঠকে একটা বিষয়ে আমি বলার চেষ্টা করেছি সেটা হচ্ছে, মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আছে, হতাশা আছে, দুঃখ আছে, রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যেও এসব আছে। এসবকে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। আমি বলেছি, বিএনপি সাংগঠনিকভাবে কতোটুকু প্রস্তুত? কারণ এখন আন্দোলন করা যেকোনো সময়ের চাইতে কঠিন। সেদিকটাও আপনাদের মনে রাখতে হবে। এখন হঠকারিতার কোনো অবকাশ নেই।
শনিবার বৈঠকের শুরুতে উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এর আগে আমাদের দলের নেতৃবৃন্দ মতামত দিয়েছেন। গতকাল পেশাজীবীরা মতামত দিয়েছেন। আজ আপনাদের কাছে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক দিক বিবেচনায় এনে সুনির্দিষ্ট মতামত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, জাতীয় প্রেস, ইউট্যাব, বিএফইউজে, ডিইউজে, ডিআরইউ, জিয়া পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম, জি-৯, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া জিয়া পরিষদ, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া সাদা দল, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ইকবাল মাহমুদ টুকু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, তথ্য গবেষণা সম্পাদক রিয়াজুদ্দিন নসু, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মনির হোসেন, বেলাল আহমেদ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার।
পেশাজীবী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডা. মাহবুবউল্লাহ, শওকত মাহমুদ, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, কামাল উদ্দিন সবুজ, আবদাল আহমেদ, ইউসুফ হায়দার, আব্দুল লতিফ মাসুম, ওবায়দুল হক, ছবিরুল হাওলাদার, এড. আসাদুজামান আসাদ, কাদের গনি চৌধুরী, খোরশেদ আলম, বাছির জামাল, মাহমুদা হাবিবা, মাহমুদ হাসান, ডা. ফাইজুল ইসলাম ফারুকী, গাজী আব্দুল হক, রাশিদুল ইসলাম, রাশেদুল হক, দিদারুল আলম, আল-আমিন, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান, এসএম ফজলুল হোক, শামসুল আলম, এমজে আবেদীন, অধ্যাপক তোফাজ্জেল হোসেন, অধ্যাপক একেএম মতিনুর রহমান, মাসুদা কামাল, সুলাইমান, ইদ্রিস আলী, মোজ্জাবের হোসেন, শফিকুল আলম দোলন প্রমুখ।