আখিরুজ্জামান সোহান, মারুফ হাসান: [২] মানব ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো চাকা। মানব সভ্যতার জন্য নিঃসন্দেহে এটি একটি মাইলফলক। সভ্যতার সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন আসে চাকা আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। কালের পরিক্রমায় ও নানা বিবর্তনে আজ এই চাকা আমাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের মধ্যে একটি। একবার ভাবুন তো, এ চাকা না থাকলে আমাদের জীবন কেমন হতো? পায়ে চলা সাইকেল থেকে বিশাল এরোপ্লেন, সবই অচল এ চাকা ছাড়া। আবিষ্কারের পর থেকে এ চাকার অনেক উন্নতি হয়েছে। এভিয়েশন ফর এভিয়েটরস, অউন্ডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড
[৩] এখন বিভিন্ন গাড়িসহ অন্যান্য যানবাহনে ব্যবহার হচ্ছে বাতাস ভর্তি চাকা। যার রিং এর উপর থাকে টায়ার। এই টায়ার তৈরি হয় সিনথেটিক রাবার, প্রাকৃতিক রাবার এবং বিভিন্ন ধরনের ফ্রেব্রিক্স রাসায়নিক উপাদান দিয়ে। টায়ারের মধ্যে বায়ু ভর্তি টিউব ব্যবহারের ফলে চাকা আরো বেশি কার্যকর হয়ে থাকে। সাধারণত ভূ-পৃষ্টে চলাচলকৃত যানবাহনগুলো যেমন : বাস, ট্রাক বা গাড়ি ইত্যাদিতে এ ধরনের চাকা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
[৪] কিন্তু মজার বিষয় হলো উড়োজাহাজ বা আকাশ যানের চাকায় কিন্তু সাধারণ বাতাসের পরিবর্তে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু কেন? উড়োজাহাজের চাকায় নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করা হয় এই গ্যাসের নিষ্কিয় ধর্মের কারণে।
[৫] উড়োজাহাজের ট্যাক্সিং এর জন্য সবচেয়ে যা জরুরি তা হলো ল্যান্ডিং গিয়ার। এখানেই এর চাকাগুলো যুক্ত থাকে। ল্যান্ডিং গিয়ার ব্যবহার করেই উড়োজাহাজ উঠা নামা করতে থাকে। বড় বড় যাত্রীবাহী বিমানগুলো ৩০ হাজার ফুট থেকে ৬৫ হাজার ফুট উচ্চতা দিয়ে চলাচল করে। আর এই উচ্চতায় বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়েও কম। সাধারণত বাতাসে সবসময় অক্সিজেন এবং জলীয় বাষ্প থাকবেই। যদি বিমানের চাকায় সাধারণ বাতাস ব্যবহার করা হয় তাহলে এই নিম্ন তাপমাত্রার জলীয় বাষ্প জমাট বেঁধে ছোট ছোট বরফের টুকরাতে পরিণত হবে। আর এতে চাকার চাপ পরিবর্তন হয়ে যাবে। এ অবস্থায় বিমান অবতরণ করলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
[৬] একই সাথে সাধারণত বাতাসে শতকরা ২০ ভাগ অক্সিজেন থাকে। অক্সিজেন এর সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে টায়ারের রাবারকে অক্সিডাইজ করে ফেলে। অক্সিডাইজ রাবারের সহনশীলতা অনেক কম থাকে। তাই বিমান অবতরণের সময় টায়ার ফেটে জেতে পারে। এ ছাড়াও বিমান যখন অবতরণ করে তখন এক একটি চাকায় প্রায় ৩৮ টন চাপ পরে এবং বিমানের গতি থাকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। বিপুল পরিমাণ চাপ এবং প্রচুর গতি বেগের কারণে বিমান যখন রানওয়ে স্পর্শ করে তখন রানওয়ের সঙ্গে প্রচণ্ড ঘর্ষণ তৈরি হয়। আর এই ঘর্ষণের ফলে তৈরি হয় আগুনের স্ফুলিঙ্গ ও প্রচুর তাপ। যেহেতু অক্সিজেন একটি দহন সহায়ক গ্যাস, তাই আগুন লেগে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
[৭] অপরপক্ষে নাইট্রোজেন গ্যাসের মেল্টিং পয়েন্ট মাইনাস ২১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই মাইনাস ৪৪ ডিগ্রি বা তার চেয়েও কম তাপমাত্রায় এর কোনো পরিবর্তন হয় না বা চাপ অপরিবর্তিত থাকে। আবার এ গ্যাস নিষ্ক্রিয় হওয়ায় অতিরিক্ত চাপ এবং তাপেও এটি আগুন লাগতে দেয়না। তাই বিমান অবতরণের সময় এই অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে এই গ্যাস। তাই ইদানিং রেসিং কারেও নাইট্রোজেন গ্যাসের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।