সাবিনা শারমিন: এক লোকের একটি পোস্ট বাতাসে উড়ে এসে পাতে এসে বসেছে। বিষয় পরীমণির উরু দেশের ছবি আর সোহেল তাজ এর সিক্স প্যাক বিষয়ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেককেই দেখলাম ছবিটি শেয়ার করে নিজের মনের আনন্দে যা যা লেখার তা তা লিখে দিয়ে এক প্রকারের জৈবিক আনন্দ নিচ্ছে। এদের দুজনের ছবি নিজের প্রোফাইলে ব্যবহার করে পোস্ট দিতে হবে, নিষিদ্ধ আনন্দ নিতে হবে, এটি আমার নিজের কাছে বাড়াবাড়ি মনে হয়। যাহোক, সেই পোস্টদাতা লিখেছেন, ‘বাঙালির সিক্সপ্যাক শরীর অবশ্যই সারপ্রাইজিং আর পরীমনির নগ্ন শরীর আর সিগারেট টানায় কোনো সারপ্রাইজ নেই। তার ছবিতে যেটুকু সারপ্রাইজিং সেটি হলো অশ্লীল বাণী। তার পোশাক খুলে ফেললে কী কী দেখা যাবে তা গণমাধ্যম জানে’।
ভালো, ভালো বেশ ভালো কথা। জ্ঞানগর্ভ কথা! অনেকেই এই একই বিষয়ে পোস্ট দিলেও আমি একজন পোস্টদাতার পোস্ট উদাহরণ হিসেবে নিয়েই সামগ্রিক মানুষের কমন মানসিকতার বিষয়টি নিয়ে আলাপ করতে ইচ্ছে হলো। তাতে তার নাম উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করছি না। কয়েকটি কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। জন্মসূত্রে অনেকেই প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর সন্তান হয়। জন্ম হয় ভূমিদস্যুর গর্ভেও এক আনভীরের। তিন্নি নামের যে মেয়েটিকে ব্রিজ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো সেও কিন্তু রত্নগর্ভার সন্তান ছিলো। বলতে চাই কেউ জালেমের ঘরে জন্ম নিয়ে যদি আলেম হয় সেটি একেবারেই তার নিজস্ব অর্জন। আবার কেউ আলেমের ঘরে জন্ম নিয়ে যদি জালেম হয় তাও একেবারেই তার নিজস্ব দায়। তবে আমরা গোবরের মানুষেরা সবসময় গোবরে পদ্মফুল ফোটাতে চাই এটা আমাদের আশা। আমরা অন্ধকারে গন্ধরাজ ফোটাতে চাই এটি আমাদের স্বপ্ন।
বাংলাদেশ সংগঠনে তাজউদ্দীন আহমদের নাম নিতে গেলেও হয়তো দশবার মাথা নোয়ানোর পর তাঁর নাম উচ্চারণ করা উচিত বলেই আমি মনে করি। এরকম একজন রাজনৈতিক নেতার দেখা বাঙালির ভাগ্যে জুটেছিলো সেটা আমাদের কাছে মেঘ না চাইতেই জল! এরকম মহান একজন নেতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তার সন্তান জনাব সোহেল তাজ কথা প্রসঙ্গ ক্রমেই বলতে হচ্ছে। তবে সকল বাবার সন্তান নিজ নিজ বাবার মতোই হবেন তাও আশা করা ভুল। তবে বাবার রাজনৈতিক অবস্থানের চলমান বংশানুক্রমিক প্রক্রিয়াতেই তিনিও একদিন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের জন্য, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য তার অবদানের কথা হিসেব করতে গেলে কি পাওয়া যাবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত নেবেন এটি একেবারেই তার নিজস্ব ব্যাপার। তবে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য, দেশের মানুষের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের জন্য, দেশের সাধারণ গণমানুষের স্বার্থে তার উল্লেখযোগ্য কোনো অবদানের কথা সাধারণ মানুষ বলতে পারবেনা। আরেকটু স্পষ্ট করে বলতে গেলে তার বাবার নাম ছাড়া তার নিজস্ব অর্জনের খাতায় উল্লেখ করার মতো কিছু কি রয়েছে?
পরীমনির বিষয়ে আর কথা বলতে ইচ্ছে না হলেও রাষ্ট্রের একজন অত্যাচারিত মানুষ হিসেবে তার কথা বার বার বলা যায়। পরীমনির হাতে লেখা বার্তা ও কান্ডে মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে এগুলো অনেকের মাথা ও কানের উপর দিয়ে চলে গেছে ! সে কি বোঝাতে চেয়েছে , এর অন্তর্নিহিত গূঢ়ার্থ কি, বেদনা কি ,যন্ত্রণা কি তা অনেকেই বুঝতে চেষ্টা না করেই উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে। কারণ সে নারী এবং সুন্দর। তাই বার্তা না বুঝেই আমরা বুঝি শুধু এইটা যে সে উরু দেখালো কেনো? আর আমাদের সমস্যা হল বার্তা মগজে যাবার আগেই উরুতে আটকা পরে যায়।
ব্যর্থ পুরুষেরা ব্যর্থতা ঢাকতে যখন মা তুলে গালাগাল দেয় তখন সেটি হয় ব্যাডাগিরি। কিন্তু পরীমনির মতো একজন অত্যাচারিত মানুষ যখন পরিহাস করে নিজের দিকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় তখন আমাদের সকলের জাত যায়, মান সম্মান যায় ,ইজ্জত হারায় ,ছেলেমেয়ে নষ্ট হয়ে যায়।
আজ পরীমনি বেঁচে আছে বলে সে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেই যাচ্ছে। সে মুনিয়ার মতো মরে গেলে আমাদের সকলের প্রব্রতি চরিতার্থ করার সুযোগ হয়ে যেতো। পরীমনি সেই সুযোগ আমাদের দেয়নি। তাকে টেনে হিঁচড়ে মাটিতে ফেলে পিষে ফেললে আমাদের মনে বড়ই আনন্দ হতো। সেই নিষিদ্ধ বলিদানের আনন্দ থেকে এই অসীম সাহসী কন্যা আমাদের বঞ্চিত করেছে। যাক যা বলতে চেয়েছি তা বলি। বাংলাদেশে হাজারটি সমস্যা। এখানে নিরীহ মানুষদের চোর ডাকাত সাব্যস্ত করে রিমান্ডে নিয়ে পায়খানা পেশাব বের করে মেরে ফেলা হয়। কিন্তু ভুমি দস্যু খুনীদের রাজার মতো সম্মানে কুর্নিশ করা হয়।
এটি সবাই দেখেছে পরীমনির কথা আমাদের দেশের সকলেই কম বেশী প্রতিবাদ করেছে। এটি অন্যায়ের প্রতি প্রতিবাদের এক নব জাগরণ। অনেক গুণী সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীরা অবশেষে পরীমনির মুক্তির কথা বলেছেন। কিন্তু যারা বলেছেন তারা অনেকেই মুনিয়ার কথা বলেন নাই। এর কারণ তারা ওই ভুমি দস্যুদের পত্রিকায় লেখালিখি করেন।হালে মুনিয়ার কথা বলতে গিয়ে যদি সপ্তাহে একদিন লেখাটি বন্ধ হয়ে যায় !
যাহোক, ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি ,সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করতে চাইলে সকলের রাজনৈতিক অবস্থানের প্রয়োজন হয়না। আমি জনাব সোহেল তাজকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই,পরীমনি নয়, আপনি মুনিয়ার ন্যায্য বিচারের জন্য একটু ভাবুন। মুনিয়া এখন মাটির সাথে মিশে গেছে। ওর বিচার চাইবার ভাষা নেই।পরীমনির বার্তা বোঝার জন্য অনেক আমলোক রয়েছে। আপনি না হয় আত্মহত্যার মোড়কে হত্যা হওয়া মানুষের পাশে থাকুন। ফেসবুক থেকে