নুরনবী সরকার: [২] সালমা আক্তার। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী। দীর্ঘ দেড় বছর পর স্কুল খোলায় খুবই উচ্ছাসিত ছিল। তাই খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠে। আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখা স্কুল ব্যাগ ও বই নিয়ে বিদ্যালয়ে যায়। কিন্তু বিদ্যালয় এসে রঙ্গীন টিনের সেই সৌন্দর্যময় বিদ্যালয়টি দেখতে না পেয়ে মন খারাপ হয় তার। সহপাঠীদের কাছে জানতে পারে ১ মাস আগে তিস্তা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে তার বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থা শুধু পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নয়। গত ২৭ আগষ্ট একই ইউনিয়নের পুর্ব হলদীবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হয়ে যায় একই এলাকার কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিও। তবে বিদ্যালয় দু’টি পুণঃস্থাপনের জন্য স্থান নির্ধারণ নিয়ে দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব।
[৩] ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবেল ইসলাম বলেন, অনেকদিন পড়ে স্কুলে এসে আমার খুব ভাল লাগছে। কিন্তু আমাদের বিদ্যালয়টি কিছুদিন আগে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাই একটি চরে টিনের চালা করে ক্লাস করছি। এই টিনের চালা ও গরম বালুর উপর ক্লাস করতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। উপরে টিনের তাপ ও নিচে বালুর তাপ। আমাদের বিদ্যালয়ে যদি জরুরীভাবে ভালো ক্লাস রুম করে না দেয় তাহলে আমরাদের ক্লাস করতে খুব কষ্ট হবে।
[৪] সড়েজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গত ২৭ জুলাই ও পুর্ব হলদীবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গত ২৭ আগষ্ট তিস্তা নদীর ভাঙ্গনের শিকার হয়। পুর্ব হলদীবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাটিকাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের পুরাতন ভবন ৩টি কক্ষে পাঠদান দেয়া হচ্ছে। পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওই এলাকার সাত ভাইয়ের বালু চরে একটি টিনের চালা করে পাঠদান দেয়া হচ্ছে। প্রচন্ড রোদের কারণে ওই টিনের চালার মধ্যে ক্লাস করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। স্থানীয় প্রশাসন বিদ্যালয় ২টি পুণঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলে ওই বিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
[৫] ওই এলাকার হাফিজুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম বলেন, পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে ভেঙ্গে যাওয়ায় এই চরটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আগে যে চরে বিদ্যালয়টি ছিলো ওই চরে এখন মাত্র ২০/২৫টি পরিবার বসবাস করে। বর্তমানে যে স্থানে টিনের চালা করে বিদ্যালয় তৈরী করা হয়েছে সেই চরে দেড় শতাধিক পরিবার বসবাস করে। সে কারণে এই স্থানে ভালো মানের ক্লাস রুম তৈরি করলে অনেক বাচ্চা লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। দেখে মনে হচ্ছে, এই চরটি সহজে নদী ভাঙ্গনের শিকার হবে না। আগে যেখানে স্কুল ছিলো ওই স্থানে যদি আবারও স্কুল তৈরি করা হয় তাহলে আগামী বন্যায় আবারও নদী ভাঙ্গনের শিকার হতে পারে বিদ্যালয়টি।
[৬] পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহিনুর ইসলাম বলেন, বর্তমান যে চরে টিনের চালা করা হয়েছে ওই চরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। সে কারণে ওই চরে বিদ্যালয়টি পুণঃস্থাপনসহ জরুরী ভাবে ক্লাসরুম তৈরি করা প্রয়োজন।
[৭] পাটিকাপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মুজিবুল আলম সাহাদাত বলেন, এবার নদী ভাঙ্গনে আমার ইউনিয়ন দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা টিনের চালায় কষ্টে ক্লাস করছে। তাদের জন্য জরুরী ভিত্তিতে পরিবেশ উপযোগী ক্লাসরুম তৈরি করা প্রয়োজন।
[৮] হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মামুন বলেন, আমি বিদ্যালয় দুটি পরিদর্শন করেছি। জরুরী ভিত্তিতে বিদ্যালয় দুটির স্থান নির্ধারণ করে অবকাঠামো তৈরির ব্যবস্থা করা হবে।