দিপু তৌহিদুল: মার্কেটে একটা প্রোডাক্টের নিয়মিত মূল্য ১০০০ টাকা, অথচ সেই একই পণ্য আপনি অন লাইন শপিং এ ৫০০ টাকায় পেয়ে ক্রয় করলেন, অথচ একবারও ভাবলেন না এটা কি ভাবে সম্ভব হচ্ছে। এই না ভাবার মূল কারণ একটাই ‘লোভ ’। তাদেশের লোকজন জন্মগতভাবে চরম লোভী, তারা লোভের কারণে যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, কিন্তু নিজেরা যে লোভী এটা মোটেও স্বীকার করবে না। তাদের লোভ আর হিংসা এমনই উচু মানের যে নিজে খেতে না পারলে, দরকার হলে সেটা নষ্ট করে ফেলবে, যাতে ভিন্ন কেউ সুফল বঞ্চিত হয়। বাংলাদেশে অন লাইন শপিং বিজনেসটা দাড়িয়ে আছে প্রতারণার উপর। ৯৬ এর শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, ডেস্টিনি- যুবক কেলেঙ্কাকারি দেখার পরেও তারা পুনরায় লোভের কারণেই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ডটকম, ই অরেঞ্জ ইত্যাদির মতো ই কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর পাতা সহজতর ফাঁদে পা দিয়ে দিয়েছে। অতীত থেকে এদেশের লোকজনের শিক্ষা গ্রহণের কোনো সংস্কৃতি নেই, যার মূল একটাই তারা জাত লোভী। বাংলাদেশিদের লোভ ইঁদুরের ঘনঘন বাচ্চা জন্ম দেওয়ার মতো কিছুর সঙ্গেই খুব ভালো যায়।
যেই প্রতারকরা তাদের মিশন কর্মকান্ডগুলো শেষ করে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে বা নিচ্ছিলো, অমনি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে আছিলা বাঁশ খাওয়া গ্রাহকরা চিৎকার চ্যাঁচামেচি করা শুরু করেছে। তাদের কেউ কেউ আবার সরকারের নিকট ক্ষতিপূরণও দাবি করছে, যা চরম অনৈতিক ও অপরাধ। লোভে পড়ে ই-কমার্স বিনিয়োগ করার সময় অবশ্যই আপনি জানতেন, কোনো না কোনোদিন এর একটা শেষ আছেই। তিন তাস খেলার সময় কি আপনি নিশ্চিত থাকেন টেক্কার ট্রয় আপনার হাতেই পড়বে । না জানেন না, অর্থাৎ খেলার সময়ই আপনি নিশ্চিতই থাকেন জুয়া খেলছেন। ঠিক তেমনি ই-কমার্স বিনিয়োগ করার সময় বোঝা উচিত ছিলো, ওটা ঠিক তিন তাস না হলেও জুয়াই - আর যে কোনো জুয়াতে একজনই জেতে। অর্ধেক দামে আপনার নিজের বাপ কিংবা শ্বশুরও যে জিনিস দিতে সক্ষম নয়, সেটিকে ই-কমার্স ওয়ালারা দিয়ে দিচ্ছে - এমনি এমনি। আপনি কি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান মালিকদের বইন জামাই কিংবা বেয়াই লাগেন? অসীম লোভের কারণেই এসব ই-কমার্স বিনিয়োগকারীদের চড়িয়ে দাঁত ফেলে দেওয়া যুক্তি সঙ্গত কাজ। তাদের যেকোনো প্রতিবাদ সমাবেশ পিটিয়ে ভেঙ্গে দেয়া উচিত।
এবার ভিন্ন কথা, ই-কমার্স বিনিয়োগটা করার সময় যখন নাগরিকরা কু কান্ড করেছে-তখন সরকারের আর্থিক নিয়ন্ত্রণকারি সংস্থাগুলো কার বাল ছিঁড়ে আঁটি বাধতেছিলো? তাদের কাজ কি ছিলো আর তারা এসব প্রতারণা প্রতিরোধে কি কি ভূমিকা ঠিক কোন পর্যায়ে নিয়েছে? নাকি এসব কান্ডে তারাও জড়িত? যেহেতু সরকারের আর্থিক নিয়ন্ত্রণকারি সংস্থাগুলো কোনো কাজই করেনি, সেহেতু দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। যদিও কোনো আমলেই তাদের কোনো কিছু হয়নি, এবারও হবে না। এদেশের গণমাধ্যম ও লোকজন নিজেদের বারবার ধর্মপ্রাণ মুসলিমের দেশ বলে দাবি করে, অথচ নিজেরাই কিন্তু ধর্মের আদেশ অস্বীকার করে অভ্যস্ত। অর্থ আর সম্পদের বিষয় আসলে,তারা ধর্মের বই বন্ধ করে দেয়। হজরত আলী (রা.) বলেন, মানুষের লাগামহীন চাহিদার ঘোড়া সম্পর্কে সূরা তাকাসুর নাজিল হওয়ার আগে একটি হাদিস আমরা কোরআনের মতো আওড়াতাম। হাদিসটি হলো নবিজি (সা.) বলতেন, ‘আদম সন্তানের লোভ এক লাগামহীন ঘেড়ার মতো। তাকে যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও দেওয়া হয়, সে বলবে আমার আরেকটি চাই, আরেকটি চাই। এমনিভাবে তার লোভ বাড়তেই থাকে। একমাত্র কবরের মাটি ছাড়া তার পেট কিছুতেই শান্ত হয় না।’ ‘আলহাকু মুত্তাকাসুর। হাত্তাজুরতুমুল মাকাবির। বেশি বেশি পাওয়ার লোভ তোমাদেরকে আমৃত্য মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে।’ (সূরা তাকাসুর, আয়াত : ১-২।) মানুষের ‘চাহিদা’ এমন এক জিনিস যা অল্পে তুষ্ট হয় না। যতোটুকু প্রয়োজন তার চেয়েও অনেক অনেক বেশি পাওয়ার আশায়, বেশি লাভের নেশায় সে মোহাবিষ্ট থাকে। অর্থাৎ ‘ই কমার্স বাণিজ্য করতে গিয়ে বাংলাদেশের লোকজন লোভের কারণে প্রতারণা মূলক কর্মে জড়িয়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লোভীদের এমন শাস্তি প্রাপ্য। এখন চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে কোনো লাভ হবে না। যারা এসব করেছে, তারা আপাতত চৌদ্দ শিকে আরামে থাকবে, কিছু আড়াল দেন দরবার করে একটা সময় বের হয়ে বাইরের দেশে ফুটেও যাবে। যারা ধরাগুলো খেয়েছে, তারাও আবার নতুন করে বাঁশ খুজতে বের হয়ে যাবেন। ফেসবুক থেকে