নিউজ ডেস্ক: ভারতের কলকাতায় স্থাপিত কোম্পানি স্যাভোরটিজ প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে ক্রোকারি, কাটলারির মতো সিরামিক পণ্য আমদানি করতে আগ্রহী। একই পণ্য আমদানিতে আগ্রহ দেখিয়েছে হেরিটেজ ইন্ডিয়া। এদিকে চীনের কিছু প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে পাট, সয়ামিল, কাঁঠাল, আম, চাল, ছাগল, ইল মাছ ও কাঁকড়া নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বণিক বার্তা
রফতানিকারক হিসেবে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পরিচিতি বাড়ছে। সবশেষ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৩৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করে। যার ৮১ শতাংশই তৈরি পোশাক খাতের। তবে রফতানি খাতের সবচেয়ে বড় এ পণ্যের পাশাপাশি চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে বৈচিত্র্যময় সব পণ্যের। চীন ও ভারতের মতো বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে আগ্রহ দেখিয়েছে ১৫টি দেশের ৪৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এ দেশগুলো ৩৫ ধরনেরও বেশি পণ্য আমদানি করতে আগ্রহী। বিদেশে স্থাপিত বাংলাদেশের বাণিজ্যিক উইংয়ের মাধ্যমে এ আগ্রহ প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো।
সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ মোট ১৮টি খাতভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠনকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। চিঠিতে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনগুলোকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৪৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আগ্রহের বিষয়টি জানিয়েছে ইপিবি। সেখানে প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানাসহ পণ্যের বিবরণও তুলে ধরা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে চিঠিতে ইপিবি বলেছে, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের বাণিজ্যিক উইংয়ের মাসিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট বাজারে বাংলাদেশী রফতানি পণ্য ও সম্ভাবনাময় নতুন পণ্য আমদানির জন্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করে। বিভিন্ন বাণিজ্যিক উইং থেকে প্রাপ্ত রফতানি সম্ভাবনায় পণ্যের নাম ও আগ্রহী আমদানিকারকের তথ্য-সংক্রান্ত একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) মো. হাফিজুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, রফতানি খাতে বৈচিত্র্য আনতে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ রয়েছে। বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের বাণিজ্যিক উইংগুলোর সহযোগিতাও নেয়া হচ্ছে। উদ্যোগগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নে দেশের রফতানি খাতে বৈচিত্র্য আনা সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা করছি।
ইপিবির পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা দেশগুলোর মধ্যে আছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চীন, ভারত, ইরান, জাপান, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া।
চিঠির শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ার তিন কোম্পানির আগ্রহের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার সাউদার্ন হাইড এক্সপোর্টস প্রা. লিমিটেড বাংলাদেশের চামড়া ও পাদুকা পণ্য নিতে আগ্রহী। এএফএ অস্ট্রেলিয়া আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের ফার্নিচার আমদানিতে। আবার দেশটির দ্য থেরাপেটিক গুডস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নামের কোম্পানির আগ্রহ বাংলাদেশ থেকে ওষুধ আমদানিতে।
কানাডার অটোয়ায় স্থাপিত ওয়েস্ট ইস্ট গ্রুপসহ আরো তিনটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এসব পণ্যের মধ্যে আছে লঞ্জারি, টি-শার্ট, জিন্স প্যান্ট ও জ্যাকেট। দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে মাছ আমদানিতে।
চীনের বেইজিংয়ে স্থাপিত জুঝহোউ জিনকিয়াও পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড বাংলাদেশ থেকে ছাগল আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছে। আরেক কোম্পানি জিয়াংসু নুওয়িদা সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি আগ্রহী পাট আমদানিতে। এছাড়া সয়ামিল, কাঁঠাল, আম, আলু, সুগন্ধি চাল, ইল ও কাঁকড়া আমদানির আগ্রহও দেখিয়েছে চীনের প্রতিষ্ঠান।
ভারতের নয়াদিল্লির শিল্প এলাকায় স্থাপিত মাদারসন সুমি সিস্টেমস লিমিটেড বাংলাদেশ থেকে কপার ওয়্যার আমদানি করতে আগ্রহী। এদিকে অ্যাপসেলন এক্সিম প্রাইভেট লিমিটেড পাটজাত থলে আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ট্রিনিটি গ্রুপ আগ্রহী বাংলাদেশের আনারসে। তবে কোম্পানিটি মূলত ক্যানড আনারস আমদানি করতে চাইছে। আবার সীগাল ফরোয়ার্ডিং এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড বাংলাদেশ থেকে ফুটওয়্যার বা পাদুকা আমদানি করতে চাইছে বলে ইপিবির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ট্রান্সফরমারের যন্ত্রাংশ কেনার আগ্রহও রয়েছে ভারতীয়দের। এক্ষেত্রে আগ্রহী বাংলাদেশী রফতানিকারকদের বাণিজ্যিক উইংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে ইপিবির চিঠিতে।
ইরানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোও বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে আগ্রহী। দেশটির আরিয়ানা তানপৌশ কোম্পানির আগ্রহ দেখিয়েছে তৈরি পোশাক আমদানির জন্য। একই পণ্য আমদানিতে আগ্রহ দেখিয়েছে নভিন পসরগাদ কো., ইরান টেক্সটাইল এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। পাটজাত সুতা আমদানির আগ্রহ রয়েছে নিমা বাফট কাসান কোম্পানির। আরটি নামের কোম্পানির আগ্রহ টেক্সটাইল পণ্যে। কার ব্যাটারি আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছে জাফর দোখত লারি নামের এক ব্যক্তি। এছাড়া ট্রপিক্যাল ফল আমদানির আগ্রহ নারিয়ান কো. এবং ইরান-ইন্ডিয়া জয়েন্ট কমিটি অব কমার্স। ফাতাল-ই সবজ কো. আগ্রহ প্রকাশ করেছে কৃষি পণ্য আমদানিতে।
জাপানের টোকিওতে স্থাপিত এপিআই কোম্পানি লিমিটেড বাংলাদেশ থেকে মধু আমদানি করতে চায় বলে জানিয়েছে ইপিবি। এ বিষয়ে আগ্রহী বাংলাদেশের রফতানিকারককে যোগাযোগের জন্য বাণিজ্যিক উইংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
স্পেনের মাদ্রিদে স্থাপিত জুকার জিন্স বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক পণ্য আমদানিতে আগ্রহী। একই পণ্য আমদানিতে আগ্রহ রয়েছে দেশটির মেলবা টেক্সটাইল, ক্লকিং ক্লথস এবং আলবাজুল সার্ভিসিয়স ইন্টেগ্র্যালস ডিপার্টমেন্টের।
সুইজারল্যান্ডের ফেডারেশন অব মাইগ্রস কো-অপারেটিভ মিডিয়া অফিস বাংলাদেশ থেকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা পণ্য ও হোম টেক্সটাইল আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আগারওয়াল এজির আগ্রহ বাংলাদেশের তাজা ফল ও সবজি আমদানিতে। আবার আইসিটি সুইজারল্যান্ড নামের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের প্রযুক্তি সেবা নিতে আগ্রহী।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে বাংলাদেশের ব্যক্তিগত সুরক্ষা পণ্য আমদানিতে। এছাড়া এসডব্লিউ কোম্পানির আগ্রহ পাটজাত পণ্যে। যুক্তরাজ্যের আগ্রহ পালপ কাপ আমদানিতে। এছাড়া দেশটির পিমকো প্রজেক্ট পার্টনার্স আমদানি করতে চাইছে টেরাকোটা প্লান্ট পটস।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোম্পানিগুলোর আগ্রহ বাংলাদেশে প্লাস্টিক পণ্য, সফটওয়্যার, সী-ফুড, পাটজাত পণ্য আমদানিতে। ফ্রান্সের কোম্পানিগুলোর আগ্রহ রয়েছে পাটজাত পণ্যে। জার্মানির বার্লিনে স্থাপিত এমঅ্যান্ডএস ফ্যাব্রিক্স নামের একটি কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে কাপড় আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। রাশিয়ার একটি কোম্পানির আগ্রহ রয়েছে হোম টেক্সটাইল পণ্যে।
দক্ষিণ কোরিয়া শিন হান কো. লিমিটেড বাংলাদেশ থেকে গ্লিটার এবং গ্লিটার পাউডার আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আবার স্টিলওয়ার্ল্ড, কোরিয়া স্পেশাল স্টিল কোম্পানি, অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালস অ্যান্ড টেকনোলজি—এ কোম্পানিগুলো স্টিল ও জাহাজ ভাঙা কাঁচামাল আমদানিতে আগ্রহী। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফিশারিজ সায়েন্স বাংলাদেশ থেকে মাছ আমদানিতে আগ্রহ জানিয়েছে।
দেশে রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এ বিষয়ে বলেন, রফতানি খাতে বৈচিত্র্য আনতে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক উইংগুলোর সহযোগিতা আমাদের বহুদিনের প্রত্যাশা। এ প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে আমদানিকারকদের আগ্রহের পণ্য সম্পর্কে অবগত করার এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। আশা করছি, দ্রুতই এর সুফল পেতে শুরু করবে রফতানিকারকরা, যা কাজে লাগবে বাংলাদেশের উন্নয়নে।