অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: টেরান্স টাও (Terence Tao) হলো বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে মেধাবী গণিতবিদদের মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে সে University of California, Los Angeles সেখানকার গণিতের অধ্যাপক। সে মাত্র দশ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করেছিলো যা এখন পর্যন্ত এটা সবচেয়ে কম বয়সে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একটি রেকর্ড। শুধু তাই না সে সবচেয়ে কম বয়সে (১৩) স্বর্ণপদক জয়ী হওয়ার রেকর্ডও তার। মাত্র ২১ বছর বয়সে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করে। আর আমরা চাকরির বয়স সীমা ৩০/৩৫ করার আন্দোলন করি। আমাদের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স পাশ করতে করতেই ২৪-২৬ বছর হয়ে যায়। অথচ এই সময়টাই জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়। জহির রায়হান মাত্র ৩৭ বছর বেঁচেছিলেন। অথচ এই ৩৭ বছরে এমন সৃষ্টিশীল কাজ করে ফেলেছেন যা আমরা ১০০ বছর বেঁচেও করতে পারি না। বব মারলে বেঁচে ছিলেন মাত্র ৩৬ বছর। এই ৩৬ বছরে এমন কাজ করে গেছেন যে গোটা পৃথিবীর মানুষ তাকে মনে রাখবে। আমাদের সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী আমাদের শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে কীভাবে সেশন জ্যাম কমিয়ে অতি দ্রুত শিক্ষার্থীরা পাশ করে বের হতে পারে সেই ব্যবস্থা করা। শুধু পাশ না কীভাবে মানসম্পন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে সেই দিকেও নজর দেওয়া উচিত।
মাত্র ২১ বছর বয়সে টেরান্স টাও UCLA - তে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেয়। আর ঠিক তার ৩ বছরের মধ্যে সে পূর্ণ অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগ পান। মানে ২৪ বছর বয়সেই অধ্যাপক। কল্পনা করা যায়? টেরান্স টাও যদি বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেত সে নিয়োগ পেত প্রভাষক হিসাবে আর ৩ বছর পরে বড়জোর সে সহকারী অধ্যাপক হতো। আমাদের এখানে কারো যদি প্রভাষক অবস্থাতেই ধরি ৪০ টা আন্তর্জাতিক ভালো মানের গবেষণা পত্র থাকে তবুও শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নেই এই অজুহাতে তাকে সহকারী অধ্যাপকই থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় গবেষণা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সহকারী অধ্যাপকের যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের যতো অধ্যাপক আছে সকলের চেয়ে অনেক বেশি মানসমম্পন্ন গবেষণা পত্র থাকে তাতেও কোনো লাভ নেই। অর্থাৎ ব্যতিক্রমী ট্যালেন্টেড মানুষদের জন্য যে ব্যতিক্রমী নিয়ম থাকতে হয় নাহলে ব্যতিক্রমী মানুষ তৈরি হয়না- এই ধারণাটাই আমাদের নেই। তাহলে ব্যতিক্রমী মানুষ তৈরি হবে কীভাবে? PS: টেরান্স টাও সম্মন্ধে জানতে পারি কয়েকদিন আগে রাউফুল আলমের একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে। লেখক : শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।