শেখ আদনান ফাহাদ: বাড়িতে গেলে আমি বড় মানুষদের কাছ থেকে দূরে থাকি। এলাকার, প্রাইমারি, হাইস্কুলের বন্ধু, বড়ভাই, ছোটভাইদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে, খেলাধুলা করে, ঘুরাঘুরি করে সময় কাটাই। রাত নেমে এলে নিরব বাজার দিয়ে যখন বাড়ি ফিরি তখন দুইএকজন বাজারে ধরে। ‘তুমি এই রাস্তাটা নিয়া কিছু করলা না! আমি কী করবো? আমি তো জনপ্রতিনিধি নই। বাজারে গেলে দুই একজন ধরবেই। বন্ধুরাও বলে। এতো খারাপ রাস্তা বাংলাদেশের আর কোথাও আছে বলে জানা নেই। অথচ এলাকায় বর্তমানেই এমপি আছেন তিনজন। একজন নির্বাচিত, দুইজন সংরক্ষিত আসন থেকে। পদ্মা সেতু হয়ে গেলো, দেশজুড়ে এতো উন্নয়ন, কিন্তু কালীবাজারের মেইন রাস্তা কেউ কাজ করে না। খোঁজ নিয়ে জানলাম, আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা গেছে বলে এই রাস্তাটি এতোদিন মেরামত হয়নি।
আমার আব্বা ভাষা সংগ্রামী, মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। মহকুমা ছাত্রলীগের অন্যতম সংগঠক। আব্বার পেছনে ঘুরে কতো লোক চাকরি পেয়ে, বড় মানুষ হয়ে আজ গাড়ি-বাড়ির মালিক। এতো ঘৃণা, হিংসা তাহলে কেন? আমি সিরিয়াস হলাম। বাড়ি থেকে বড় ভাই শেখ মোতাহার হোসেন বারবার ফোন করে বিরক্ত করে। আমি একবার সিরিয়াস হয়ে বন্ধু, ছোটভাই তানভীর শরীফ, এলজিআরডি সচিব মহোদয়ের পিএস এর কাছে বললাম। তানভীর বললো, একটা দরখাস্ত দিতে। রিয়াদ ভাই লিখে দিলে সেই দরখাস্ত সাইন করে সরাইলের প্রকৌশলীর কাছে দিলো। বর্তমান ইউএনও সাহেবও খুব আগ্রহ নিয়ে হেল্প করলেন। সরাইলের বড় ভাই মাহফুজ আলী ভাই, আমার আপন বোনের মতো, বোন রোকেয়া বেগমও খুব তৎপর ছিলেন।
এদিকে শেখাবাদের বিশিষ্ট সুহৃদ, বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মারুফা আক্তার পপি আপা, শিক্ষা সচিব মহোদয়ের পিএস, আমার শিক্ষক কাজী শাজাহান স্যারকে আমি সম্পৃক্ত করি। তারাও খুব হেল্প করেছেন। বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় ও যোগাযোগ মাধ্যমে রাস্তাটির দূরবস্থার চিত্র তুলে ধরেছেন দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার সরাইল প্রতিবেদক শেখ সিরাজুল ইসলাম,দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সরাইল প্রতিনিধি মাহবুব খান ও দৈনিক আজকের পত্রিকার সংবাদদাতা এম মনসুর আলী, আমার বড় ভাই, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিষ্ট্রার শেখ এনায়েত রাসেল ও কালীকচ্ছ বাজারের ব্যবসায়ী শেখ সজলকেও বিশেষ ধন্যবাদ জানাই। শেখ সজল বিশেষ ধন্যবাদ প্রাপ্য। যদিও আমি অনেক পরে দেখেছি ভিডিও। খুব সুন্দর করে তিনি মোবাইল ফোনের ব্যবহার করেছেন। ছোটলোকের টিপ্পনী সহ্য করে সজল ভাই লিখে গেছেন, ভিডিও করেছেন। এটা অনেক বড় ব্যাপার।
সর্বশেষ আপডেট হচ্ছে, আজ সকালে আমার মেইলে কালিকচ্ছ-গলানিয়া সড়কের মেরামত প্রকল্প অনুমোদনের পুরো ডকুমেন্ট এসেছে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে। পাশাপাশি কারা এই সড়কের প্রকল্প অনুমোদনের বিরোধিতা করেছে তার প্রমাণও এসেছে। এলাকাবাসী খুব ক্ষুব্ধ। হিংসা করলে নিজেদেরই শরীর খারাপ হবে। হিংসা বাদ দিন। আমি তো এলাকায় গিয়ে রাজনীতি করি না। আমাদের আব্বা অধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ আবু হামেদ ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসহ এমএ পাশ করে এলাকায় গিয়ে সারাজীবন কাটিয়েছেন। এলাকায় শিক্ষা বিস্তার করতে গিয়ে নিজের পরিবারকে আজীবন অভাবের মধ্যে রেখেছেন। ঢাকায় থাকলে আমরা হতাম কোটিপতি পরিবার। ধানমন্ডি, গুলশানে, আমেরিকায় বাড়ি থাকতো আমাদের। আমরাও গ্রাম কেন্দ্রিক।
এতে কিছু বড় মানুষের হিংসা হয়। এটা আপনাদের অসুখ। গ্রামের মানুষ কিন্তু আমাদের ভালোবাসে। এই একটা রাস্তা হলে সাধারণ মানুষ খুব উপকৃত হবে। আমাদের এটাই লাভ। আমরা তো ঠিকাদারও না। আমাদের পরিবারের কী লাভ? বাজারের সঙ্গেই আমাদের বাড়ি। আমাদের কষ্ট খুব সামান্যই হয়। কিন্তু গলানিয়া, চানপুর, শাহপুরসহ কালীকচ্ছ ইউনিয়নের যারা এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন বাজারে আসা-যাওয়া করেন তাদের কষ্ট অসীম। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়ন অভিযাত্রা থেকে যারা সাধারণ মানুষকে দূরে রাখে তারা জনগণের শত্রু। ফেসবুক থেকে