গৌতম চক্রবর্তী: আমেরিকা এখনও বোধহয় পুরোপুরি আফগানিস্থান ছাড়তে পারেনি। তার আগেই তালেবানে কাবুল দখল করলো। তিন লাখ আফগান সেনা আর প্রায় পঁচিশ হাজার স্পেশালি ট্রেন্ড আফগানিস্তানের স্পেশাল ফোর্স হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো আশি হাজার তালেবান সেনার সামনে। তাও এতো কম সময়ে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো আমাদের (ভারত) স্বাধীনতা দিবসেই আফগান মেয়েরা পরাধীন হলো। শরিয়া নামক ভয়ংকার বর্বর ১৪০০ বছর আগের আইনে এখন চলবে আফগানিস্তান, যেখানে মেয়েদের ফের খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকতে হবে।
বিশ্ব রাজনীতি বেজায় জটিল। আমেরিকার স্বার্থ শেষ, তাই তারা টাকা বা জনবল নষ্ট করবে না আফগানিস্তানে। চীনের ব্যবসার সুযোগ আপাতত বৃদ্ধি পাচ্ছে তালেবানের ক্ষমতা দখলের মধ্যদিয়ে। কদিন আগেই তালেবান আর চীনের মিটিং হয়ে গেছে। তালেবান কথা দিয়েছে চিনের বিচ্ছিন্নতাবাদে তারা মদত দেবে না। এদিকে পাকিস্তান বেজায় আনন্দিত। একটা শত্রু দেশ এক ঝটকায় বন্ধু হয়ে গেলো। এবার এদের কাজে লাগানো যাবে ভারতকে খোঁচাখুঁচি করতে। যদিও আম আফগান নাগরিক পাকিস্তানকে মোটেই বন্ধু ভাবে না, বরং ভারী সন্দেহের চোখে দেখেন। তাঁরা ভারতকে অনেক কাছের মনে করে। আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের কাছে ভারতীয়দের আলাদা সম্মান। সোশ্যাল মিডিয়া আর ইউটিউবে যাদের সামান্য ঘোরাঘুরি আছে, এটা তাঁরা জানেন।
অতীতের ভুল থেকে তালেবানেরা শিক্ষা নিয়েছে। ফলে এখনই মারদাঙ্গা শুরু করবে না। চাপটা আস্তে আস্তে দেবে, মানুষকে সইয়ে সইয়ে সভ্যতার উল্টো দিকে চাকা ঘোরাবে। যা আগের থেকে অনেক বেশি ভয়ংকার। ফলে এই রেজিমকে সরানোর জন্য অনেক বেশি সময় লাগবে। তবে ইস্ট তুর্কমেনিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট নিয়ে খোঁচাখুঁচি করলে চীন তালিবানকে ছেড়ে দেবে না। এদিকে পাকিস্তানেরও মাথাব্যাথা আছে। তাঁদের দেশেও তালিবান আছে, যারা পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করে শরিয়া আনতে চায়। হ্যাঁ, সাথে আমাদের দেশেও লস্কর সহ এক গাদা জঙ্গিগোষ্ঠী জল হাওয়া পাবে।
সোভিয়েত শাসন সরানোর জন্য আমেরিকা অর্থ অস্ত্র আর ধর্মকে ব্যবহার করেছিল। তৈরি হয়েছিল তালেবান। ফ্র্যাঙ্কেন্সটাইন তৈরির দাম দিয়েছে আমেরিকা, ৯/১১ তার সাক্ষী। আজ পাকিস্তান আর চীন সরাসরি বা পেছনের দরজা দিয়ে তালিবানকে সমর্থন করেছে নিজের নিজের স্বার্থে। চিনের ব্যবসা চাই, আর পাকিস্তানের বন্ধু চাই; ভারতে ঝামেলা পাকানোর মতো। সময় বলবে, নিজের নাক কেটে পরের কতোটা যাত্রা ভঙ করলো এরা। এতো দ্রুত ক্ষমতা দখলে প্রভূত বৈদেশিক সাহায্য দরকার, লড়াইয়ের রসদ অস্ত্র এসব না হলে পাবে কোথায় তারা? দাম এদেরও দিতে হবে আগামী দিনে।
আমাদের সাথে সরাসরি আফগানিস্তানের স্থল যোগাযোগ নেই। ফলে উৎপাত খানিক কম হবে। পাকিস্তান আফগানিস্তানের ভূমি ব্যবহার করবে আমাদের বিরুদ্ধে, এটা চোখ বন্ধ করে বলা যায়। তাই খানিক উৎপাত আমাদের দেশেও হবে। সাথে গণতন্ত্র প্রিয় উদার মানুষদের আরও সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে গোটা উপমহাদেশে। দুনিয়া তথা দেশের যাবতীয় সমস্যার শিকড় হিসাবে তাঁদেরই চিহ্নিত করা হবে। ইসলামিস্ট শরিয়াপন্থীরা তাঁদের মারবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান আর হিন্দুত্ববাদীরা শরিয়ার জুজু আর তালেবানি উদাহরণ দেখিয়ে তাঁদের দিনরাত গাল দেবে আমাদের দেশে। সাথে সকল ভারতীয় মুসলমানকে দায় নিতে হবে তালেবান পাকিস্তান সহ যাবতীয় জেহাদি কর্মকাণ্ডের। তা তিনি যতোই উদার গণতন্ত্রপ্রিয় দেশপ্রেমী হোন না কেন। আপাতত ধর্মীয় রাজনীতি দুই পা এগোলো, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার দুই পা পিছিয়ে গেলো। তবে মানব সভ্যতার ইতিহাসের চাকা উল্টোদিকে আজীবন ঘোরানো যায় না। সময় আসবে। নারী স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার আমাদের পৃথিবীর ভবিষ্যৎ। যা হাজার চেষ্টাতেও পরিবর্তন সম্ভব নয়। লড়াই চলবে, চলতেই থাকবে। আজ বা কাল, বিজয় আসবেই। ফেসবুক থেকে