মুহাম্মদ মিজানুর রহমান: আখিরি জামানার নবীর উম্মত আমরা। অন্যান্য নবি-রাসূলগণের উম্মতের তুলনা আমাদের হায়াত অনেক কম। কিন্তু আল্লাহ রব্বুল আলামিন এই সামান্য হায়াতের মধ্যে সওয়াব অর্জনের অনেক বড় বড় সুযোগ সৃষ্টি করে রেখেছেন। যার মাধ্যমে আমরা অগণিত পুণ্য হাসিল করতে পারি। এমন রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এমন দিন রয়েছে যা মর্যাদায় পরিপূর্ণ। সে রকম একটি দিন হলো ইয়াওমুল জুমা। মহানবী (সা.) নিজেই এই দিনটির শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলেছেন।
সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন
‘জুমার দিন আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম ও সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। এমনকি এই দিনটি আল্লাহর কাছে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার চেয়েও উত্তম।’ (ইবনে মাজাহ)। এই দিনে পৃথিবীর প্রথম মানব ও নবি হজরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। আবার এই দিনে তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে।
গোনাহ মাফের দিন
হাদিসে বলা হয়েছে,‘জুমার দিনে যে ব্যক্তি গোসল করে জুমার নামাজে যায়, সামর্থ্য অনুযায়ী নামাজ আদায় করে, তারপর ইমামের খুতবা শেষ করা পর্যন্ত নীরব থাকে। ইমামের সাথে নামাজ আদায় করে। এমন ব্যক্তির তার এ জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত ও অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (মুসলিম)। তাই এ দিনের বরকত হাসিলের জন্য সব ধরণের কবিরাহ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আর সবরকমের পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
সওয়াব অর্জনের দিন
মহানবী (সা.) বলেন,‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে নিজে সকাল সকাল গোসল করল এবং অন্যকে গোসল করালো, এরপর ইমামের কাছে গিয়ে বসে মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনল, ঐ ব্যক্তির প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে সে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব পাবে।’ (তিরমিজি)।
দোয়া কবুলের দিন
হাদিস শরিফে এসেছে, শুক্রবার জুমার দিন ইমাম যখন খুতবা দেওয়া শুরু করে তখন থেকে সালাত শেষ করা পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়ে থাকে। ঐ দিন বিকেল বেলায় আসরের নামাজের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে।
ফিতনা থেকে নাজাতের দিন
রাসূল (সা.) বলেছেন,‘কোনো মুসলমান যদি জুমার দিনে বা জুমার রাতে মৃত্যুবরণ করেন আল্লাহ তায়ালা এ ব্যক্তিকে কবরের ফিতনা থেকে রক্ষা করবেন।’ (তিরমিজি)।
দরুদ পাঠের দিন
জুমার দিন রাসূলের শানে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করতে হয়। কারণ এই দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এই দিনেই তিনি ইন্তেকাল করেন। আর এই দিনেই কেয়ামত হবে। পুরো সৃষ্টিজগতকে অজ্ঞান করা হবে। অতএব এই দিনে রাসূলের উপর অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করতে হবে। কারণ মানুষের পঠিত এই দরুদ রাসূলের সম্মুখে পেশ করা হয়। (আবু দাউদ)।
মুমিনের এই দিন
রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,‘যে ব্যক্তি জুমার দিন জুমার নামাজের উদ্দেশে গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করে, সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করে, এরপর জুমার নামাজে আসে আর অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে সামনে অগ্রসর না হয়ে নির্ধারিত নামাজ আদায় করে, ইমাম খুতবার জন্য ওঠার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে, তার এই আমলের কারণে আগের জুমা থেকে পরের জুমা পর্যন্ত তার সব ছোট-খাটো পাপ মোচন হয়ে যায়।’ (আবু দাউদ)।