জহিরুল ইসলাম: [২] লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল মহাসড়কের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত। এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বাচ্ছন্ধে চলাচলের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। সাড়ে ১০ কিলোমিটারের সড়ক সংস্কার ও নির্মাণে বরাদ্দের একশ কোটি টাকা দিয়ে এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে যথাযথভাবে কাজ করাতে তদারকি করেছেন সড়ক বিভাগ।
[৩] অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মেঘনার উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেনি। আর্থসামাজিক উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া এ জেলার সড়ক ও সেতু ব্যবস্থার উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার। এর মধ্যে একটি প্রকল্প হচ্ছে লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল মহাসড়ক। এ সড়ক বাস্তবায়নে সরাসরি সুফল ভোগ করবে লক্ষ্মীপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। ইতোমধ্যে সড়কটির উন্নয়ন কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলায় এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে অচিরেই আমূল পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।
[৪] জানা গেছে, বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর জাতীয় মহাসড়কের বরিশালের চর কাউয়া থেকে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। প্রকল্পের আওতায় লক্ষ্মীপুর অংশে রয়েছে মজু চৌধুরীর হাট ফেরিঘাট থেকে লক্ষ্মীপুর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণ। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। কাজটি পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মো. মাইনউদ্দিন রাশী লিমিটেড।
[৫] রোববার (৮ আগস্ট) সকাল থেকে ওই সড়কের ১০ কিলোমিটার ঘুরে নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে দ্রুত গতির কর্মযোগ্য লক্ষ্য করা গেছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনসাধারণের বহু কাংক্ষিত মহা-সড়কটি মজিববর্ষের উন্নয়নের অংশ হিসাবে ১৮ ফুট থেকে ৩৬ ফুট প্রশস্থতায়নের কাজ লক্ষ্মীপুর অংশে এখন দৃশ্যমান। এ সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশালসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত হবে।
[৬] লক্ষ্মীপুর মজু চৌধুরীর হাট ফেরিঘাট থেকে লক্ষ্মীপুর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার সড়কটির গত ৩-৪ বৎসর কোনো উন্নয়ন ও মেরামত কাজ না হাওয়ায় চলাচলে এ অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তির অন্ত ছিলো না। খানাখন্দকে পরিপূর্ণ ছিলো সড়কটি। এতে সড়কে প্রায়ই যানবাহন আটকা পড়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেত। বর্তমানে সড়কটির উন্নয়ন কাজ যথাযথভাবে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলায় এই সড়কে যাতায়ত করা মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সড়কের কাজ শেষ হলে এই অঞ্চলের উৎপাদিত কৃষি পণ্য নদী থেকে আহরিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহণসহ জনসাধারণের অবাধ যাতায়াত সহজতর হবে এবং প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যের।
[৭] স্থানীয় রিয়াদ হোসেন, মাহমুদ হাসান, রেজাউল হক ও মোশারফ হোসেন জানান, সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, শাখা প্রকৌশলী ও কার্যসহকারী চলমান নির্মাণ কাজের তদারকি করতে প্রায় প্রতিদিনই সড়কটিতে আসেন। পাশাপাশি ঠিকাদারেরও নিজস্ব প্রকৌশলীরা কাজ তদারকি করছেন। লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল মহাসড়কের ললক্ষ্মীপুর অংশের নির্মাণ কাজ কার্যাদেশ অনুসরণ করা হচ্ছে। বালুভর্তি (ফিলিং) করে যান চলাচল এবং যোগাযোগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি পুরনো লেন মিলিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সড়কটি নির্মাণে উন্নতমানের পাথর ও ইট ব্যবহার হচ্ছে। নির্ধারিত ৭০ ভাগ বালু ও ৩০ ভাগ খোয়ার সংমিশ্রণে করা হচ্ছে সাববেইজ। আমদানিকৃত ৮০ ভাগ কালোপাথর ও ২০ ভাগ সিলেটসেন্ট বালু দিয়ে মেকাডমের কাজ এগিয়ে চলছে। এদিকে বেইজ-২ এ ৮০ ভাগ ইটের খোয়া ও ২০ ভাগ সিলেটসেন্ট দিয়ে মেকাডমের কাজ ও স্টকইয়ার্ডে বেসিক প্ল্যান্ট বসিয়ে বেইজ কোর্স এবং ওয়ারিং কোর্স করা হয়েছে। এছাড়া বাইরে থেকে মাটি এনে (ক্যারিং করে) রাস্তার পার্শ্ব বাঁধাই করা হয়েছে।
[৮] সড়কটির নির্মাণের বিষয়ে ললক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত দত্ত বলেন, বর্তমান সরকার মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী উন্নয়নের যে মহাযজ্ঞ হাতে নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় লক্ষ্মীপুর মজু চৌধুরীর হাট ফেরিঘাট থেকে লক্ষ্মীপুর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার সড়কটির উন্নয়ন কাজ এগিয়ে চলছে। সড়কটির উন্নয়ন কাজের গুনগত মানের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আশা করি সড়কটির কাজ সুন্দরভাবে যথাযথ নিয়মে সম্পন্ন হবে এবং এর সুফল ভোগ করবে লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশালসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। সম্পাদনা: হ্যাপি