মুসা কলিম মুকুল: পরম আনন্দ প্রকাশে। কিষাণী গোলজান বিবি আর কবি রবীন্দ্রনাথ দুজনেই প্রকাশে অপরূপ। দুজনেই সৃষ্টিতে অনন্য। গোলজানের শিমের মাচা না রবীন্দ্রনাথের ‘সোনার তরী’ কোনটার বেশি রূপ, অর্থময়তা? কে জানে! তবে গোলজানের সহজাত সৃষ্টিকর্ম যে সহজ নয় সে কবিগুরু খুব জানেন। জীবনভর তিনি গোলজানের বন্দনা গেয়েছেন, গেয়ে আনন্দ কুড়িয়েছেন, গেয়ে বিখ্যাত হয়েছেন।
গোলজানের বন্দনা গাওয়া রবীন্দ্রনাথের খ্যাতিটিকেই বড় আকর্ষণীয় লাগে। লোকেও বিখ্যাত হতে চায়, আত্মপ্রচারে ঢেলে দেয় নিজেকে। পরীমনি বিখ্যাত হয়ে ওঠে গোলজান আর রবীন্দ্রনাথের চেয়ে। গোলজান আর রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির পেছনে, প্রকাশের পেছনে যে সাধনা রয়ে গেছে তার খবর একুশ শতকের মিডিয়া পায় নাকো। নীরবে ভালো লাগছে’র চেয়ে সজোরে ভালো বলছে’র কতো কদর! খ্যাতিই মোক্ষ! লোকে যেকোনো মূল্যে বিখ্যাত হতে চায়, প্রচারিত হতে চায়, ভাইরাল হতে চায়। এই চাওয়া নেশাগ্রস্তের মতন, জম্বির মতন- প্রাণের প্রকাশ কোথা এখানে? নেই, থাকে না। প্রচারক্লান্ত প্রাণ তাই পালাতে চায় সমাজ আর প্রকৃতি হতে, চেতনার থেকে পালিয়ে বাঁচতে মাদকের আশ্রয় খোঁজে খ্যাতিমান।
আত্মপ্রচারের বাইরে কীসের প্রকাশ আর? কী বিরাজে আত্মার অন্তরে? আর কিছু নয়? অতএব, দেখিয়ে বেড়াও। গা দেখিয়ে বেড়াও, ক্ষমতা দেখিয়ে বেড়াও, ব্যাংক-ব্যালান্স-শওকত দেখিয়ে বেড়াও। বাহবার কাঙালেরা প্রচুর বাহবা দেবে, দেয়। বড় কবিরও বড় নাম, বড় টাউটেরও বড় নাম, বড় গা দেখানিরও তারকাখ্যাতি। নামটাই দেখা যায় সহজে, সুনাম হোক, দুর্নাম হোক, নামটাই যেন সব।
জনগণ তাঁদের পরলোকগত বীরদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার প্রকাশ করতে কতো প্রতিষ্ঠানকে সেইসব মহৎ নামে ভূষিত করে। জ্যান্ত মানুষ নিজের স্মৃতি ছড়াতে জনগণের ব্রিজ-ভার্সিটি-স্টেডিয়াম নিজ নামে নামকরণ করাচ্ছে- এও দেখতে হচ্ছে আত্মপ্রচারের এ শতকে! নাম ছড়ানো পরীমনিকে পেড়ে এনে, ধরে এনেও নিজ নাম ছড়াচ্ছে লোকে। রাজদ্রোহী রাখালছেলেকে জাদুর বাঁশি উপহার দেওয়া সেই পরীর রূপ কোথায় আজ? কোথায় রোকেয়া, প্রীতিলতা, তারামন, দীপালি? কোথায় সীমার মাঝে অসীমের প্রকাশের অমর সাধকেরা? পরীর মুক্তি হোক। ডানা মেলুক চরাচরের আকাশে আকাশে, রূপকথার রূপ ধরে, মুক্তিপাগল মানুষের হৃদয়ের দেশে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :