নিউজ ডেস্ক: ঢাকার চারপাশে নদীগুলো একসময় ছিল ঢাকার সৌন্দর্যের কেন্দ্রভূমি। কিন্তু বর্তমানে দূষণের ফলে সেই সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। বিশেষ করে বুড়িগঙ্গা নদী তো মৃতপ্রায়। নাব্য সংকট এবং কলকারখানা ও ট্যানারির দূষিত বর্জ্য, অবৈধ দখল, ময়লা-আবর্জনার স্তূপ নদীতে ফেলার কারণে প্রতিনিয়ত বেড়েছে দূষণ। দুর্গন্ধ ছড়াত নদীর পানি। এবার সেই বুড়িগঙ্গার পানি নিয়ে গবেষকরা দিলেন সুখবর। তারা জানিয়েছেন, লকডাউনের কারণে পানিতে বেড়েছে দ্রবীভূত অক্সিজেন। কমেছে লবণাক্ততার পরিমাণ। পানির দুর্গন্ধও কমেছে।
স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়নকেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর এবং ২০-এর এপ্রিল এর তুলনায় ২১ সালের আগস্টে বুড়িগঙ্গার পানির মান ভালো ছিল। পানির মান নির্ণয়ের অন্যতম নির্দেশক হচ্ছে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বুড়িগঙ্গার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের গড় মান ছিল ১.৭ মিলিগ্রাম প্রতি লিটারে। ২০২০ সালে সেটি ছিল ১.৮ মিলিগ্রাম। আর ২০২১ সালে দ্রবীভূত অক্সিজেন ছিল ৪.২৬ মিলিগ্রাম, অর্থাত্ আগের বছরের তুলনায় পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মান প্রায় ২ দশমিক ৫ গুণ ভালো পাওয়া গেছে। অবশ্য বাংলাদেশের আদর্শ মান ৫ মিলিগ্রাম প্রতি লিটারে। যে কারণে বুড়িগঙ্গার পানি এখনো আদর্শ মানের ওপরে উঠতে পারেনি। তাই এর আরো উন্নতির প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অন্য দিকে বুড়িগঙ্গার পানিতে ২০১৯ ও ২০২০ সালে পানির ঘোলাত্বের মানও আদর্শ মানের চেয়ে ১ থেকে ৩ গুণ কম ছিল, যা ২০২১ সালে এসে বেশ উন্নতি হয়েছে। বুড়িগঙ্গার পানিতে গড় ঘোলাত্বের পরিমাণ এখন প্রতি লিটারে ৫ এনটিইউ। বুড়িগঙ্গার পানি গত দুই বছরের তুলনায় বর্তমানে ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি পরিষ্কার বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। এর কারণ হিসেবে গবেষকরা বলছেন, যেসব শিল্পকারখানা নদী দূষণের জন্য দায়ী বর্তমানে করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে লকডাউনের কারণে বেশির ভাগ শিল্পকারখানায় উত্পাদন ছিল কম এবং বর্ষাকালে দূষণ কম হওয়ায় এমন ফল পাওয়া গেছে।
ক্যাপসের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, মানুষের শরীরের মতো বুড়িগঙ্গা নদীর শরীরের বেশ কিছু টিউমার এবং ক্যানসার রয়েছে। নদী দখল হচ্ছে নদীর টিউমার, আর ক্যানসার জীবাণু হচ্ছে স্যুয়ারেজ ও কলকারখানার বর্জ্য নিষ্কাশনের লাইন দিয়ে প্রবাহিত দূষিত তরল। দখল যদি দূর করা যায় তাহলে দূষণ অনেকাংশে কমে আসবে। বর্তমানে সময়ে লকডাউন এবং বর্ষা মৌসুমের কারণে নদীর পানির মান অর্থাত্ নদীর স্বাস্থ্যের বেশ উন্নতি হয়েছে। তবে যেসব পয়েন্টে বর্জ্য লাইন এসে মিলিত হয়েছে, সেসব পয়েন্টে এর মান পূর্বের মতোই পরিলক্ষিত হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, নদীর পানি দূষণের কারণে নদীতে এখন আর মাছ পাওয়া যায় না, কিন্তু একটা সময় বুড়িগঙ্গা নদীর মাছ ধরে অনেক মানুষের সংসার চলত। ঢাকার চারপাশে পাঁচটি নদীকে রক্ষা করতে হবে। নদী পর্যবেক্ষণের জন্য নির্ধারিত অভিভাবক জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং নদী রক্ষা আইন শক্তিশালী করতে হবে। সূত্র: ইত্তেফাক
আপনার মতামত লিখুন :