এ বি এম কামরুল হাসান: করোনায় একদিনে এত মৃত্যু ও সনাক্ত জাতি আগে কখনো দেখেনি। মৃত্যুতেও গতকাল রেকর্ড, প্রায় আড়াইশ। সনাক্তেও রেকর্ড, পনেরো হাজার। প্রায় সাড়ে তিন মাস যাবৎ নানা নামে লকডাউন চলছে। কখনো ঢিলেঢালা, কখনো কঠোর। ঈদের আগের লকডাউনের কারণে মৃত্যু ও সনাক্ত কিছুটা কমেছিল। ঈদে লকডাউনকে ছুটি দেওয়াতে গতকাল আবার সর্বোচ্চ। এ ধারা আরো কিছুদিন থাকবে বলে মনে হচ্ছে। এদিকে মানুষ মাস্ক পরছে না, স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, লকডাউন মানছে না। তাই এ মুহূর্তে টিকাই মুক্তির অন্যতম উপায়। টিকাদান কর্মসূচিকে জোরদার করা ছাড়া গতি নেই।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে টিকাপ্রাপ্তি বিষয়ে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। আমরাও আশ্বস্ত হয়েছি। একুশ কোটি টিকার সংস্থান হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব টিকা দেশে আসছে বা আসবে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃঢ় অবস্থানের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে । একুশ কোটি টিকার মধ্যে সাত কোটি জনসন এন্ড জনসনের এক ডোজের টিকা, সাত কোটি লোককে দেয়া যাবে। বাকি চৌদ্দ কোটি দু ডোজের টিকা আরো সাত কোটি লোককে দেয়া সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে অর্ধকোটি মানুষকে দু'ডোজ টিকা দেয়া সম্পন্ন হয়েছে। সব মিলিয়ে সাড়ে চৌদ্দ কোটি লোক টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আসবে। এটি আশাপ্রদ খবর। কিন্তু হতাশ হয়েছি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দ্বিতীয় ঘোষণায়- মাসে এক কোটি টিকা দেয়া হবে। তার মানে, একুশ মাস লাগবে একুশ কোটি টিকা শেষ করতে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ টিকাদান শেষ হবে দু হাজার তেইশ সালের এপ্রিল মাসে।
এতো গেলো কোভিড টিকা সংগ্রহের খতিয়ান। এবার আসা যাক, কোভিড টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অবস্থান। বিশ্বে সবকটি ডোজ টিকা মিলেছে চৌদ্দ শতাংশ মানুষের, এক ডোজ মিলেছে তেরো শতাংশের। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবকটি ডোজ মিলেছে দশ শতাংশের, এক ডোজ মিলেছে সতেরো শতাংশের। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সবকটি ডোজ মিলেছে দুই দশমিক ছয় শতাংশের, এক ডোজ মিলেছে এক শতাংশের। সার্কভুক্ত দেশ সমূহের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। মালদ্বীপে দু'ডোজ টিকা পেয়েছে আটচল্লিশ শতাংশ, শ্রীলংকায় প্রায় সাড়ে আট শতাংশ, ভারতে প্রায় সাত শতাংশ, নেপালে প্রায় পাঁচ শতাংশ, পাকিস্তানেও তিন শতাংশের ওপরে। দু'ডোজ টিকা প্রাপ্তিতে ভুটানই কেবল আমাদের নিচে- শূন্য দশমিক চৌত্রিশ শতাংশ, তবে তাদের তেষট্টি শতাংশ জনগোষ্ঠী এক ডোজ টিকা পেয়েছে। এসব তথ্য 'আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা ডট অর্গ' থেকে প্রাপ্ত। যেসব দেশ মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি নাগরিককে দু'ডোজ টিকার আওতায় এনেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও সিঙ্গাপুর।
বৈশ্বিক করোনা টিকার গতি ও বাংলাদেশের অবস্থান বিবেচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মাসিক কোটি টিকা দেয়ার ঘোষণা শম্বুক গতি বটে। কোটি সংখ্যাটি শুনতে অনেক বড় হলেও দেশের মোট জনসংখ্যার নিরিখে এটি নগন্য। মাসে এক কোটি টিকা দেয়ার ঘোষণায় আমরা আম জনতা বুঝি, আশি ভাগ মানুষের টিকা পেতে সময় লাগবে আরো একুশ মাস। আমরা বুঝি টিকা দানের গতিতে উন্নত বিশ্ব থেকে আমরা বিশগুন পেছনে আছি, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আছি সবার নিচে । তাই টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। অনেক দেশে টিকাদানকে বেগবান করতে শিক্ষিত বেকারদেরকে খণ্ডকালীন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের কথা ভাবা যায়। স্কুল কলেজে ছুটি চলছে, ছাত্র শিক্ষকদেরকে কাজে লাগানো যেতে পারে। টিকা দিবে নার্স,প্যারামেডিক। আনুষঙ্গিক কার্যাদি করবে খণ্ডকালীন নিয়োগপ্রাপ্তরা, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্র শিক্ষকবৃন্দ। যেদেশের মানুষ মাস্ক পরে না, স্বাস্থ্য বিধি মানে না, লকডাউন মানে না; সেদেশে টিকাছাড়া মুক্তি নাই। যেখানে টিকাতেই মুক্তি, সেখানে জোরদার টিকাদান কর্মসূচিতেই সবার স্বস্তি। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট
আপনার মতামত লিখুন :