নিজস্ব প্রতিবেদক: [২] এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যশোর শহরের শংকরপুরে চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ একাধিক মামলার আসামি শাওন ওরফে টুনি (২৫) নামে এক যুবককে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা।
[৩] সন্ত্রাসীরা তার বুক পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১২টি ছুরিকাঘাত হত্যা করে। জীবন বাঁচাতে শাওন আশ্রয় নিয়েছিলো কমিউনিটি পুলিশের অফিসে। কিন্তু তাতেও রক্ষা পাননি তিনি। হত্যাকান্ডের ঘটনায় কোতয়ালি থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। পুলিশ তিন জনকে আটক করেছে। এঘটনার জের ধরে অনি (২২) নামে এক যুবকের বাড়ি ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় স্থানীয় লোকজন।
[৪] বৃহস্পতিবার ২২ জুলাই রাত ১০টার দিকে যশোর শহরের শংকরপুর ছোটনের মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাওন যশোর শহরের শংকরপুর জমাদ্দারপাড়া এলাকার হালিম ওরফে তিলে মুন্সির ছেলে। এ ঘটনায় শেখ শাওনের পিতা শংকরপুর জমাদ্দারপাড়ার আব্দুল হালিম শেখ বাদী হয়ে আটজনকে আসামি করে শুক্রবার ২২ জুলাই কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় অজ্ঞাত নামা আরো ৪/৫ জন আসামি রয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন, শংকরপুর এলাকার আলতুর ছেলে অনিক ওরফে অনি, একই এলাকার গোল্ডেন ফিরোজ, মাজেদ ওরফে মেজের ছেলে আকাশ, আলমের ছেলে দিপু, আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মোহাম্মদ আলী, মিন্টু শেখের ছেলে বিল্লাল হোসেন মৃদুল, মৃত কটার ছেলে মানিক ও ফক্কুর ছেলে সুজন। শুক্রবার ২৩ জুলাই রাতে পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদ আলী, বিল্লাল হোসেন ও মানিককে আটক করে শনিবার ২৩ জুলাই আদালতে সোপর্দ করে।
[৫] মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, ২২ জুলাই তার ছোট ছেলে শাওন বাড়িতে বসে টিভি দেখছিলেন। এমন সময় আসামি মানিক তাদের বাড়িতে আসে, কাজ আছে বলে মোটরসাইকেলে করে শাওনকে জমাদ্দারপাড়ার দিকে নিয়ে যায়। পরে শাওনকে ছোটনের মোড় গলির নুরনবী মেম্বারের ফাঁকা জায়গায় নিয়ে ছুরিকাঘাত করে। শাওন প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে এসে ছোটনের মোড়ের কমিউনিটি পুলিশের অফিসে আশ্রয় নেয়। পরে আসামিরা অফিসের মধ্যে ঢুকে শাওনের গলা, চোয়াল, কাঁধ, বুক ও হাতসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি জানতে পারেন শাওনকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। ছোটনের মোড়ের কমিউনিটি পুলিশের অফিসে যেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় শাওনকে দেখতে পান তিনি। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসা শুরুর কিছু সময়ের মধ্যে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার সালাহ উদ্দিন স্বপন শাওনকে মৃত ঘোষণা করেন।
[৬] স্থানীয় এক সূত্র জানায়, নিহত শাওন এলাকার একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে জড়িত। অন্যদিকে আসামিরাও এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাদের নামে একাধিক মামলাও রয়েছে। এলাকায় আধিপত্ব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ড ঘটতে পারে বলে স্থানীয়দের ধারণা। অপর একটি সূত্র বলেছে, নিহত শাওনের খালাতো ভাই আল আমিনের সাথে দ্বন্দের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
[৭] এদিকে শাওন হত্যাকান্ডের জের ধরে শংকরপুর ছোটনের মোড়ে অনি নামে এক যুবকের বাড়ি ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে দমকল বাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যেয়ে ঘণ্টা ব্যাপী চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অনি শংকরপুর ছোটনের মোড়ের পাশে রেললাইন এলাকার আকামুর রহমান আলতুর ছেলে। অনির মা রওশনআরা অভিযোগ করেন, বেলা ১২টার দিকে স্থানীয় শতাধিক লোক মাস্ক পরে তাদের বাড়িতে হামলা করে। তারা ঘরের টিন কেটে সব মালামাল ভাংচুর করে। গ্যাস সিলিন্ডারের লাইন খুলে তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
[৭] যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন মাষ্টার আজিজুল হক বলেন, খবর পেয়ে আমাদের চারটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হাজার পঞ্চাশেক টাকা হতে পারে।
[৮] কোতোয়ালি থানার ইনসপেক্টর (অপারেশন) সুমন ভক্ত বলেন, পুলিশের একাধিক টিম ঘটনা স্থলে পৌঁছায়। এলাকার পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। স্থানীয় লোকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, শাওন ওরফে টুনির চারিত্রিক দোষ ছিল। নারীঘটিত কারণে এলাকার লোকজন তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। এসব কারণে একই এলাকার অনি, দিপু, গোন্ডেন ফিরোজ, আকাশ প্রমুখের সাথে তার শত্রুতা ছিল। বৃহস্পতিবার ২২ জুলাই রাতে সংঘটিত হত্যাকান্ডে তাদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।
[৯] ইনসপেক্টর সুমন ভক্ত বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে শাওন হত্যাকান্ডের ঘটনার জের ধরে এই ভাংচুর ও অগ্নিকান্ড। পুলিশ সবকিছু বিবেচনায় রেখে তদন্ত করছে। হত্যাকান্ডের সাথে কারা জড়িত তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। শোর কোতোয়ালি থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, হত্যাকান্ডে জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত অন্যদেরও আটকের চেষ্টা চলছে। উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার ২২ জুলাই রাত ১০টার দিকে যশোর শহরের শঙ্করপুর ছোটনের মোড় এলাকায় দুর্বৃত্তরা ছুরি মেরে শাওনকে হত্যা করে। শুক্রবার সন্ধ্যায় জানাজা শেষে তাকে শহরের কারবালায় দাফন করা হয়।