ফাহমিদা সাহেদ: বর্তমানে দেশজুড়ে ইতিবাচক আলোচনাগুলোর কেন্দ্রে রয়েছে কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত ‘রেহানা মারিয়াম নূর’ ছায়াছবি এবং এ ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয়কারী আজমেরী হক বাঁধন।
প্রথমবারের মতো কানের অফিশিয়াল সিলেকশনে আঁ সার্তেঁ রিগায় সিনেমাটি দেখানো হয়। ওই দিন বাঁধন পরেছিলেন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি।
যেহেতু জামদানি নিয়ে কাজ করছি তাই আমার যত আগ্রহ তার পরিহিত জামদানি শাড়িটি নিয়েই। চলুন আপনাদের সাথেও শেয়ার করি শাড়িটির খুঁটিনাটি বিস্তারিত নিয়ে।
শাড়িটি হাফসিল্ক জামদানি। অর্থাৎ, এ শাড়ি তৈরি হয়েছে সিল্ক ও সুতি সুতায়। শাড়ির টানায় দেওয়া হয়েছে সিল্কের সুতা আর বানায় দেওয়া হয়েছে ১০০ কাউন্ডের সুতি সুতা। নিখুঁত এ বয়ন আমাদের দেশের জামদানি বয়নশিল্পীদের পক্ষেই করার সম্ভব।
এই শাড়ির জমিন, পাড় ও আঁচলে রয়েছে নানা ধরনের মোটিফ, যেগুলো সোনালি জরির সুতায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ শাড়ির পাড় হলো শাল ও ইঞ্চি পাড়। সেখানে রয়েছে রাখনলী ফুলের মোটিফ। আঁচলজুড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সুরমাদানি গাছ মোটিফ। এ মোটিফ আবার নানা নামে পরিচিত। কেউ বলেন বাঘের পাড়া আবার কেউ বলেন ইয়ারিং ফুল। এ ধরনের শাড়ি বুনতে টানায় অন্তত ২২০০ থেকে ২৪০০ বা তার বেশি সুতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে এই শাড়িতে ধারণা করা যায় অন্তত ২৪০০ সুতা ব্যবহার করা হয়েছে। এটাকেই বয়নশিল্পীরা তাঁদের ভাষায় ২৪০০ সানা বলে থাকেন।
হালকা জলপাই রঙের এই হাফসিল্ক জামদানি শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে ব্লাউজ। শাড়িটি তৈরি করতে বয়নশিল্পীরা সময় নিয়েছেন তিন মাস। তবে তাদের ভাষ্যমতে খুবই অল্প সময়ে তারা শাড়ি ও ব্লাউজটা বানিয়ে দিয়েছেন। দিনরাত কারিগরেরা কাজ করেছেন। এই শাড়ি আর ব্লাউজ বানাতে যে সময় লাগার কথা তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ সময় নিয়েছেন তারা। বোঝেন তাহলে আমাদের একেকটা জামদানী শাড়ি কতটা শ্রম আর সময় নিয়ে তৈরি করে আমাদের জামদানি কারিগরেরা।
বাংলাদেশি সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে কানের লালগালিচায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বাঁধন বেছে নিয়েছেন আমাদের ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়িকেই। তার এই সিদ্ধান্তকে মন থেকে সাধুবাদ জানাই।