সোহাগ হাসান : [২] উল্লাপাড়া উপজেলার অলিপুর গ্রামে অনেক স্বপ্ন নিয়ে কোরবানী ঈদে বিক্রির জন্য এআরএস ফার্মে খামারে ১২শ কেজি ওজনের (৩২ মণ) শেরখান ও ৯শ কেজি ওজনের (২৪ মণ) বাহাদুর তৈরি করেছেন।
[৩] তরুণ উদ্যোক্তা মেহেদী ও আশরাফুল পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতি বছরই তাদের খামারে কোরবানীর জন্য ষাঁড় গরু লালন-পালনসহ সম্পুর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করেন।
[৪] বিশাল আকৃতির শেরখান ও বাহাদুর ষাঁড়কে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। মেহেদী ও আশরাফুলের মতো একই চিত্র জেলার প্রান্তিক খামারীদের।
[৫] কিন্তু এতোবড় গরু কিভাবে বিক্রি করবে তা নিয়ে চিন্তিত এই তরুণ খামারীরা।
এদিকে বড় বড় খামারীরা অনলাইনের মাধ্যমে নিজেদের খামারের গরু কেনাবেচা করার সুযোগ পেলেও প্রান্তিক খামারীরা তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে কিছুই না জানায় তারা চরম বিপাকে পড়েছে।
[৬] জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার আমডাঙ্গা অলিপুরে মেহেদী ও আশরাফুল তাদের খামারে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের দুটি ষাঁড় দুই বছর ধরে লালন-পালন করে আসছেন। শান্ত স্বভাবের হওয়ায় ষাড় দুটির নাম রেখেছেন ‘শেরখান ও বাহাদুর’। শেরখানের দাম হাকা হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা আর বাহাদূরের ৮ লাখ টাকা। দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি উপজেলার সবচেয়ে বড় বিশালাকৃতির দুটি গরু দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন দেখতে বাড়িতে। বিশাল আকৃতির ষাঁড়গুলো এলাকাবাসীর নজর কেড়েছে। তবে কিছুটা শঙ্কায় রয়েছেন করোনাভাইরাসের প্রকোপে এর ন্যায্য দাম নিয়ে।
[৭] এআরএস ফার্মের পরিচালক মেহেদী হাসান আশিক ও আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমাদের খামারে ছোট-বড় মিলে প্রায় ৫০টি ষাঁড় গুরু রয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ‘শেরখান ও বাহাদুর’কে আমরা ২/৩ বছর ধরে লালন-পালন করছি। গত বছরও কোরবানির হাটে বিক্রি করিনি। উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী ষাঁড় দুটিকে প্রাকৃতিক উপায়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের থাকার ঘরে রয়েছে দুটি সিলিং ফ্যান আর মশারি।
[৮] নিয়মিত খাবারের তালিকায় রয়েছে খড়, ভুষি, কাঁচাঘাস, মাল্টা, পেয়ারা, কলা, মিষ্টি কুমড়া ও মিষ্টি আলু। রোগ জীবাণুর হাত থেকে বাঁচতে প্রতিদিন তাদের সাবান ও শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানো হয়। এই দুটি ষাঁড়ের পেছনে প্রতিদিন খরচ হয় ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা। এভাবে দেড়/দুই বছর লালন পালন শেষে বাহাদূরের ওজন ২৪ মণ ও শেরখানের ওজন দাঁড়িয়েছে ৩০ মণে।’ তাদের প্রতিদিন দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন আসছেন। শান্ত স্বভাবের হওয়ায় ষাড় দুটি নাম ধরে ডাকলে মাথা ও কান নাড়িয়ে সাড়া দেয়। তবে করোনাভাইরাসের প্রকোপে এর ন্যায্য দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি।
[৯] এই খামারী আরও বলেন, ‘আমরা বাড়ি থেকেই ষাঁড় দুটি বিক্রি করার চেষ্টা করছি। সেক্ষেত্রে আমরা নিজ খরচে গরু দুটি ক্রেতাদের বাড়িতে পৌঁছে দেব।’ তারা আরও বলেন, ৩০ মণ ওজনের শেরখানের দাম ১৫ লাখ টাকা আর ২৪ মণ ওজনের বাহাদুরের দাম ৮ লাখ টাকা হাকা হয়েছে। তবে খামারে এসে ষাঁড় দুটি দেখে পছন্দ হলে দামে-কম বেশি করা যাবে।
[১০] এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোর্শেদ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, চলতি বছর কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য এ উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার গবাদি পশু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ষাঁড় রয়েছে প্রায় ২৬ হাজার।
[১১] তার মধ্যে উপজেলার আমডাঙ্গা অলিপুরে মেহেদী-আশরাফুল ইসলামের ‘শেরখান ও বাহাদুর’ অন্যতম। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতি অবলম্বন করে ষাঁড় দুটি ঈদুল আজহার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আমরা ষাঁড় দুটিকে নিয়মিত দেখাশোনা করেছি।’ এখন ন্যায্যমূল্য পেলে এদের মালিক উপকৃত হবেন। তবে করোনার কারণে হাট বন্ধ থাকায় খামারিদের কথা চিন্তা করে আমাদের জেলা প্রশাসনের সহায়তায় পশুর হাট নামে একটা অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। এই অ্যাপসের মাধ্যমে খামারিরা তাদের গরু বিক্রি করতে পারবে। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ