নুর উদ্দিন: যেতে চেয়েছিলেন প্রবাসে ,কয়েকবার ব্যর্থ হয়ে যখন হতাশ হন তখন উদ্যোগ নেন গরু খামারের। আজ নজরুল ইসলাম মানিক ডেইরি ফার্ম ও গরু খামারের একজন সফল ব্যবসায়ী।
উপজেলা পরিষদ থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে চরহাজারী গ্রাম, সে গ্রামে গেলে চোখ এড়ায় না নজরুলের গরুর খামার। প্রায় ৯৭টি উন্নত মোটাজাত করণের গরু রয়েছে এ খামারে,রয়েছে ১৮ টি দুধের গরু।নজরুল ইসলাম এ খামারের মালিক।এক বিঘাজমির ওপর গরুর এ খামার গড়েছেন। খামারের কাছের এক জমিতে বুনেছেন ঘাস। সেখান থেকে ঘাস এনে খাওয়ান গরুকে।
নজরুল পরিবারের বড় ছেলে। বাবার সংসার চালাতে গিয়ে কিছু জমি বিক্রি করে দেন।এরপর পরিবারের বড় সন্তান হিসেবেসংসারে তাঁরই দায়িত্ব ছিল বেশি। হাতে সামান্য কিছু পুঁজি ছিল। তা দিয়ে ও ধার করে যা টাকা পেলেন, তা দিয়ে বাজার থেকেদুটি উন্নত জাতের গাভি কেনেন নজরুল। ভালোমতো যত্ন নিলে পরে গাভি দুটি বেশ মোটাতাজা হয়। একসময় বাছুর হয়।গাভিগুলো দুধ দিতে থাকে। দিন দিন নজরুলের দিন বদলাতে থাকে। দুধ বিক্রির টাকা দিয়ে সংকর জাতের গরু কেনেন এবংগরুর বংশবৃদ্ধিতে মনোযোগী হন। এখন গরুর খামার থেকে দুধ বিক্রি করতে পারছেন প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৪০ লিটার।
বিপদও আসে তার সংগ্রামী জীবনে ,কয়েক বছর আগে একটি অজ্ঞাত ভাইরাস আসে ,সেসময় প্রায় ১০ টি গরু মারা যায়।প্রায়১৫ লক্ষ টাকার ক্ষতিতে আমি প্রায় ভেঙ্গে পড়েছিলাম।তা কেটে উঠতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে।
তিনি জানান, অনেক সময় ডাক্তার পাওয়া যায় না। নিজে নিজে প্রাণিসম্পদ অফিসে গিয়ে বিভিন্ন সময় পরামর্শ শুনেছেন।সাময়িকী ও বই পড়ে গবাদি পশুর রোগ সম্পর্কে জেনেছেন। বিভিন্ন রোগের কারণ ও তার প্রতিকার এবং প্রতিরোধের ব্যাপারে বেশভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।নজরুলের খামারের পরিবেশ ভালো। ভেতর-বাইর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন সবসময়। এ ছাড়া মশা-মাছি আর পোকা-মাকড় প্রতিরোধেরও ব্যবস্থা আছে। গরুর খাবার নিয়ে বললেন, ‘প্রতিদিন কাঁচা ঘাস, খড়, ভুসি, ভুট্টা, খৈল খাওয়াই।বড় একটি জমিতে উন্নত জাতের ঘাস নিজেই চাষ করি। বাজার থেকে খাবার বেশি কিছু কিনতে হয়না। এ জন্য গরুগুলোর স্বাস্থ্যঝুঁকি কম।’
আয়-ব্যয় সম্পর্কে নজরুল জানান ,খামারে আটজন কাজ করেন তারা।তার মধ্যে ৫ জন বাইরের।তাদের প্রত্যেককে ৮ হাজার-১০ হাজার টাকা করে বেতন দিতে হয়।প্রতি মাসে সাড়ে চার লাখ টাকার খাদ্য কিনতে হয়।তিনি সরকারের কাছ থেকে কোনোসহায়তা চান না, তবে চান সরকার যেন উন্নত মানের ভ্যাকসিন সরবরাহ করে।নজরুলের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এলাকারঅনেকেই এ কাজ করছেন আর তাতে সফলতাও পেয়েছেন।
নজরুলের সংসার জীবনে তিনি এখনো অবিবাহিত।মা কে হারিয়েছেন কয়েক বছর আগে ,তারপর ছোট দু বোনকে বিয়েদিয়েছেন।ছোট ভাইকে একটি ইউনিভারসিটি তে পড়িয়েছেন।বাবা আ ভাই ,বোন নিয়েই তার সংসার।
তিনি পরামর্শ দিলেন, শিক্ষিত যুবকরা চাকরির জন্য ঘুরে ঘুরে হতাশ না হয়ে গরু খামারের ব্যবসায় নজর দিলে ভালো করতেপারবে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলমগীর মাহমুদ বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য থাকলে জীবনে সফলতাআসে,নজরুল তার উদাহরণ।’
তিনি জানান, এরই মধ্যে সরকারি ভাবে খামারিরা বিভিন্ন সমিতি করছে। এ সমিতি থেকেখামারিদের সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়া হবে। এতে এ ব্যবসায় অনেকেই মনোযোগ দেবেন।
এদিকে ঈুদল-আযহাকে কেন্দ্র করে নজরুলের খামারে বিভিন্ন এলাকা থেকে ভীড় করছে মানুষ।