শিরোনাম
◈ 'হাসিনার রায়ের দিন কেন বন্দরের চুক্তি স্বাক্ষর হল', প্রশ্ন আব্দুন নূর তুষারের (ভিডিও) ◈ প্রথম খেল‌তে নে‌মেই তা‌মি‌মের সেঞ্চু‌রি, ঢাকা - রাজশাহী ম‌্যাচ ড্র  ◈ রায়ের দিন কলকাতায় আ'লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের মিটিং (ভিডিও) ◈ ৫৩ ‘জুলাই যোদ্ধার’ গেজেট বাতিল ◈ হাসিনাকে যে কারণে ফেরত দেবে না ভারত ◈ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে যা বলছে  ◈ রাজধানীতে ১০ মাসে ১৯৮ হত্যাকাণ্ড: ডিএমপি ◈ বড় জয়ে নারী কাবা‌ডি বিশ্বকাপ শুরু ভারতের ◈ আবেদনের ‘পাঁচ মিনিটেই’কুয়েতে মিলছে ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা ◈ সাত কলেজ নিয়ে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত : ১২ জুলাই, ২০২১, ০৪:৪৯ সকাল
আপডেট : ১২ জুলাই, ২০২১, ০৪:৪৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রূপগঞ্জের অগ্নিকাণ্ড: পুড়ে যাওয়া মৃতদেহের পরিচয় শনাক্তে সময় লাগবে বেশি

নিউজ ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারানো ৫২ জনের মধ্যে ৪৮ জনের শরীর এমনভাবে পুড়েছে যে তা দেখে পরিচয় শনাক্ত করার কোনো উপায় নেই। পুড়ে অঙ্গার হওয়ায় রক্ত-টিস্যু সংগ্রহেরও সুযোগ নেই। তাই মৃতদেহের হাড় ও দাঁত থেকে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বা ডিএনএ প্রোফাইলিং করতে হচ্ছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক উইংয়ের এ কাজে সময় লাগবে অন্তত তিন সপ্তাহ। পরিচয় শনাক্তে ঘটনার পরদিন থেকেই নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

মৃতদেহের হাড় ও দাঁত থেকে ডিএনএ প্রোফাইলিং সম্পন্ন করতে অন্তত তিন সপ্তাহ সময় লেগে যাবে বলে জানান সিআইডির ফরেনসিক উইংয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার রোমানা আক্তার। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে কারখানায় আগুনে পুড়ে যাওয়া কর্মীদের শরীর এতটাই পুড়েছে যে কিছুই বোঝার উপায় নেই। আমরা সাধারণত রক্ত থেকে নমুনা সংগ্রহ করি। কিন্তু এসব মরদেহের রক্ত কিংবা শরীরের টিস্যু কোনোটাই নমুনা হিসেবে নেয়ার উপযোগী নেই। বণিক বার্তা

তাই বিকল্প হিসেবে হাড় ও দাঁতের নমুনা নেয়া হচ্ছে। ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য আমরা আলামত হিসেবে স্বজনদের মধ্য থেকে বাবা-মা কিংবা সন্তানের রক্ত সংগ্রহ করেছি। বিপরীতে মরদেহ থেকে দাঁত ও হাড় সংগ্রহ করেছি। দাঁত ও হাড় থেকে ডিএনএ প্রোফাইলিং করতে এমনিতেই সময় বেশি লাগে। এক্ষেত্রে মোট ৪৮টি মরদেহের প্রোফাইলিং করতে হবে। ফলে সব মিলিয়ে আমাদের তিন সপ্তাহ বা এর বেশি সময় লেগে যেতে পারে।

গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬৩ জন দাবিদারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিআইডির ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবের এএসপি দৃষ্টি ইসলাম।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে স্থান সংকুলান না হওয়ায় সেখানে কেবল ২৫টি মরদেহ রাখা গেছে। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের মর্গে আটজনের ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে ১৫ জনের মরদেহ।

ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা থেকে যারা বেঁচে ফিরেছেন তারা কোনোভাবেই ভুলতে পারছেন না সেদিনের স্মৃতি। তাদেরই একজন হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কর্মী আশরাফুল ইসলাম (২৬)। আগুন লাগার পর কারখানা থেকে লাফ দেন তিনি। এখন আহত অবস্থায় নারায়ণগঞ্জের ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আশরাফুল। তিনি বলেন, নিচতলা থেকে লাগা আগুন ওপরে উঠতে শুরু করে। ফলে নিচে নামার সুযোগ ছিল না তাদের। নিচে নামার জন্য দড়িও পাননি। অনেকটা বাধ্য হয়েই ভবন থেকে লাফ দেন তিনি। আশরাফুল বলেন, ‘যাতে লাশটা অন্তত পরিবার পায়, এজন্য নিচে লাফ দিছি, আমার সঙ্গে যারা লাফ দিছে তারা কেউ বাঁচে নাই।’

আশরাফুলের পাশেই বসে ছিলেন তার মা। তাকে অন্তত নিজের সন্তানের মরদেহ খুঁজতে হাসপাতালের মর্গে বসে থাকতে হয়নি। যেমনটা হয়েছে সোমা আক্তারের। অভাবের তাড়নায় ১৩ বছরের শান্তা মনিকে কারখানাটিতে কাজে পাঠিয়েছিলেন এ মা। এখন মেয়ের মরদেহও খুঁজে পাচ্ছেন না। বাঁধভাঙা কষ্ট নিয়ে সোমা আক্তার সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘কোথায় পাব মনিকে?’

অন্যদিকে মা মিনা খাতুনের (৪৩) মৃতদেহটি অন্তত দেখতে চান মেয়ে চম্পা আক্তার। মা-মেয়ে দুজনেই ছিলেন কারখানাটির কর্মী। সেদিন অল্প সময়ের জন্য বাইরে বের হয়েছিলেন চম্পা। এরপর ফিরে দেখেন আগুনে পুড়ছে পুরো ভবন। এখন পর্যন্ত মায়ের কোনো খোঁজ পাননি। তিনি ও তার ভাই সিআইডির কাছে ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন। এখন শেষবারের মতো কেবল মায়ের মৃতদেহটি দেখতে চান তারা।

গত বৃহস্পতিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের ওই কারখানা ভবনে আগুন লাগে। সে সময় জীবন বাঁচাতে ভবন থেকে লাফ দেন অনেকে। তাদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়। প্রায় ২২ ঘণ্টা চেষ্টার পর ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস।

ঘটনাটি তদন্তে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাসেমসহ মামলার আট আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের চারদিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতিও দিয়েছেন আদালত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়