শিরোনাম
◈ রাতে বাংলামোটরে জুলাই পদযাত্রার গাড়িতে ককটেল হামলা (ভিডিও) ◈ যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক মোকাবেলায় বাংলাদেশের চার দফা কৌশল ◈ বিআরটিএর মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন নিয়ে কঠোর নির্দেশনা ◈ সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় গ্রেপ্তার ◈ শ্রীলঙ্কার বিরু‌দ্ধে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ধসে বাংলাদেশ হার‌লো ৭৭ রা‌নে ◈ ২০ বছরেও অধরা এমআই-৬'র ভেতরের রুশ গুপ্তচর! (ভিডিও) ◈ নারী ফুটবলের এই অর্জন গোটা জাতির জন্য গর্বের: প্রধান উপদেষ্টা ◈ প্রবাসীদের জন্য স্বস্তি: নতুন ব্যাগেজ রুলে মোবাইল ও স্বর্ণ আনার সুবিধা বাড়লো ◈ একযোগে ৩৩ ডেপুটি জেলারকে বদলি ◈ 'মধ্যপ্রাচ্যে সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকেরা ঘোষণা দিয়ে মারামারি করে' (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১১ জুলাই, ২০২১, ০২:১৩ রাত
আপডেট : ১১ জুলাই, ২০২১, ০২:১৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাজিয়া সুলতানা জেনি: ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান’- স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম রিভিউ

রাজিয়া সুলতানা জেনি: জি ফাইভ ওয়েব প্ল্যাটফর্মে রিলিজ হয়েছে ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান’। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত। শুধু পরিচালিত না, কাহিনি এবং চিত্রনাট্যও তার। বেশ বড় রকমের তারকা সমাবেশও ছিলো ওয়েব সিরিজটায়। প্রত্যাশাও ছিলো। তাই রিলিজের সাথে সাথেই দেখতে বসলাম।

কাহিনির শুরুটা দুর্দান্ত। সাবিলা একজন ওয়ার্কিং ওম্যান। সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রে একটা টেম্পোরারি জবে আছে। সেই সাথে আছে নিজস্ব একটা ব্যাবসা। একটা অনলাইন শপ রয়েছে তাঁর। সেখানে সে ড্রেস বানাবার অর্ডার নেয়। স্বামী আবির আর পিতাকে নিয়ে তাঁর ছোট্ট সংসার। সাবিলার বর্তমান পোস্টিং ঢাকায় হলেও স্বামীর এই মুহূর্তের পোস্টিং গাজীপুরে। বাবা ডিমেনশিয়ার পেশেন্ট। বাসায় একজন ফুল টাইম কাজের বুয়াও আছে।
যাই হোক, ডুব আর পিঁপড়াবিদ্যার পরে, ফারুকীর কাছ থেকে খুব ভালো কিছু আশা এমনিতেও আমার ছিলো না। তার স্টোরি টেলিং অনেক বেশি ডায়ালগ নির্ভর লেগেছিলো। আর সে কারণেই এবার বেশ অবাক হয়েছিলাম, সেই সাথে আনন্দও লেগেছিল। মনে হয়েছিল, হি ইজ ব্যাক। একজন ইম্প্রুভড ফারুকীর দেখা পেতে যাচ্ছি। শুরুতে যেভাবে বিভিন্ন ভিজুয়াল দিয়ে সাবিলা চরিত্রটা স্টাবলিশ করছিলেন, মনে হচ্ছিল দারুণ একটা কিছু দেখতে যাচ্ছি।

প্রথম দুই পর্ব চলে যায় কাহিনির বেজ স্টাবলিশ করতে। সাবিলার বাবাকে নিয়ে উৎকণ্ঠা, স্বামীর সাথে সম্পর্ক, অফিসের কাজকর্ম, চাকরি পার্মানেন্ট না হওয়ার ফ্রাস্ট্রেশান, এসব নিয়েই ছিল প্রথম দুই পর্ব। দ্বিতীয় পর্বের শেষে মূলত কাহিনি বাঁক নেওয়া শুরু করে। একাকী পেয়ে বস খায়রুল সাবিলার সাথে ফিজিক্যাল হওয়ার চেষ্টা করে। হতচকিত সাবিলা সেখান থেকে পালিয়ে আসলেও ব্যাপারটা নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করে না। বস, যিনি সাবিলার এক সময়ের প্রিয় কবি, তাঁর ধারণা চুরমার হয়ে যায়। এরপর যখন সেই বস ক্ষমা চায়, ব্যাপারটার সাথে একমত না হলেও প্রথম অপরাধ এবং বসের ভুল বুঝতে পারা দেখে ক্ষমা করে দেয়।

বস যখন দ্বিতীয়বার একই ঘটনা ঘটাবার চেষ্টা করে, তখন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে নাবিলা এবং প্রথমে মামলা করতে যায় কিংব এইচআরের অনুরোধ এবং আশ্বাসে, পুলিশে মামলা না করে অফিশিয়াল কমপ্লেইন করে। এনকোয়ারি কমিটি বসে এবং শুরু হয় অভিযোগের তদন্ত। ঠিক যখন কাহিনি মূল বিষয় নিয়ে অ্যাড্রেস করবে ভেবেছিলাম, ঠিক তখনই কাহিনি অন্য এক ট্র্যাকে চলে যায়। কাহিনি খেই হারাতে শুরু করে। তদন্ত কমিটির কেবল একজনের প্রশ্নোত্তর দেখানো হয়, আর সেসব প্রশ্নও একেবারেই যাচ্ছেতাই হয়েছে। আমার মনে হয় না, এ ধরনের তদন্ত এভাবে শুরু হয়। যদিও কাহিনিকারের উদ্দেশ্য ছিল, ওয়ার্কিং ওম্যানকে পুরুষরা কি চোখে দেখে তার একটা আইডিয়া দেওয়া, কিন্তু সেটা করতে গিয়ে তিনি তদন্ত কমিটি ব্যাপারটাকে খেলো করে দিয়েছেন।

এ ধরনের সিচুয়েশানে এবং আমাদের ওয়ার্ক কালচারে একজন মেয়েকে যে ধরনের প্রশ্ন করা হয়, তা থেকে বাছাই করা কিছু প্রশ্ন আশা করেছিলাম। অ্যাকিউজডকেও প্রশ্ন করা হবে ভেবেছিলাম। একজন মেয়েকে তদন্তের নামে কীভাবে হ্যারাস করা হয়, তারও একটা চিত্র আশা করেছিলাম। আমি ডিসাপয়েন্টেড। প্রশ্নগুলো অনেক বেশি বানোয়াট মনে হয়েছিল। তপন সিনহার ‘আদালত ও একটি মেয়ে’ কিংবা ঋতুপর্ণের ‘দহন’ সিনেমায় যেভাবে হ্যারাসমেন্ট পরবর্তী অংশটা ডিল করা হয়েছিল, তেমনটা না হলেও, কাছাকাছি কিছু একটা প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু যখন ‘স্লিভলেস ব্লাউজ’ প্রসঙ্গ আনা হল, তখন বুঝতে বাকী থাকলো না এই দৃশ্য হ্যান্ডল করার মতো দক্ষতা চিত্রনাট্যকারের নেই।

আর চতুর্থ এপিসোডের পরে তো কাহিনি তার রাস্তাই হারিয়ে ফেলে। সোশ্যাল ড্রামা দিয়ে শুরু হওয়ার পরে মাঝপথে এসে এভাবে ক্রাইম পেট্রোলে বাঁক নেওয়াটা আসলেই হতাশ করা ছিল। শেষ চার পর্ব মনে হয়েছিল অন্য এক গল্প। আর সেটাও ঠিক গোয়েন্দা গল্প হয়নি। গোয়েন্দা গল্পের যে ফ্রেমওয়ার্ক থাকে, একটি খুন, কিছু সাসপেক্ট যাদের সবারই মোটিভ আছে খুন করার, কিছু ক্লু, আর সেসব কালেক্ট করতে আসা দুঁদে গোয়েন্দার মিস্ট্রি সলভ করা, এর কোনোটাই প্রায় ছিল না। এ ধরনের গল্পে অডিয়েন্সের সাথে চলা খেলা, কে হতে পারে খুনি, এই পুরো সেটিংটাই ছিল মিসিং। ক্লু বলতে ছিল ফুটপ্রিন্ট আর ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হিসেবে ছিল তদন্তকারী অফিসারের ইন্টিউশান।

কাহিনিতে অযথা কিছু প্লট ঢোকানো হয়েছে মনে হয়েছে। টেন্ডার ঘটিত দুর্নীতি, মিজু সাহেবের দ্বৈত জীবন, তার ড্রাইভারের ফোনের ফাঁদে পা দেওয়া কিংবা হঠাৎ এক ব্যক্তির দেখা করতে আসা, এই ঘটনাগুলোকে যতোটা না প্রয়োজনীয় মনে হয়েছে তার চেয়ে বেশি মনে হয়েছে কাহিনি লম্বা করার চেষ্টা হিসেবে। খায়রুল সাহেব কীসের ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন? সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের চেয়াম্যানের ভোটে? তাহলে রাস্তায় ভোট চাওয়া কেন? এর ভোটার কি কোনো এলাকাবাসী? ব্যাপারগুলো পরিচালকের মাথায় ছিলো কি না জানি না। তবে বেশ বেমানান লেগেছে।

মূল কথা, দুই পর্বের পরে, সিরিজটি যে প্রত্যাশা জাগিয়েছিল, সেটা নস্যাৎ করে দেয় কাহিনির পরের অংশ। কর্মক্ষেত্রে ওম্যান হ্যারাসমেন্ট নিয়ে যথেষ্ট রিসার্চ উনি করেছেন বলে মনে হয়নি। তদন্ত কমিটির কেবল একজনের তিনটা প্রশ্ন ছাড়া আর কিছুই দেখানো হয়নি। বাকি সদস্যদের দুজন কিছুটা হলেও প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু কোনো প্রশ্ন করেননি। বাকিরা? তাদের কাজ কি ছিলো? চুপচাপ বসে থাকা? তাদের কোনো প্রশ্ন ছিল না?
এনিওয়ে, সিরিজটির পজিটিভ দিক ছিল অভিনয়। কেন্দ্রীয় চরিত্রে ফারিন অনবদ্য অভিনয় করেছে। হ্যাটস অফ পার্ফম্যান্স বলতে যা বোঝায়, তেমনটা। মামুনুর রশিদও দুর্দান্ত করেছেন। আফজাল হোসেনের চরিত্রটা খুব ডিফাইন্ড লাগেনি। তিনি কি এবারই প্রথম ঘটনাটা ঘটালেন? কিংবা তাঁর চরিত্রটাই এমন? না হঠাৎ এক্সাইটেড হয়ে করে ফেলেছেন? প্রথম অনুশোচনাটা কি অভিনয় ছিল? না পার্ট অব প্ল্যান? এ ব্যাপারগুলো আরেকটু ডিটেইল বোঝালে হয়তো পরিষ্কার হতো তাঁর চরিত্র চিত্রণটা কতোটা অ্যাকিউরেট হয়েছে।
পার্থের অভিনয় অনেকটাই সাবলীল ছিল, তারপরও মাঝে মাঝে অযথাই উচ্চস্বরে কথা বলেছেন মনে হয়েছে। ইরেশ যাকেরকে ভালো লেগেছে। এছাড়া বাকিদের ভেতর সাবিলার স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করা মোস্তফা মনোয়ারের অভিনয় ভ্যারি করেছে। বাকিদের অভিনয় ইনক্লুডিং হাসান মাসুদ, মোটামুটি।
ডিরেকশান ভালো লেগেছে। অনেক ভিজুয়ালের ব্যবহার আনন্দ দিয়েছে। একটা সিনেম্যাটিক ফিলিং দিয়েছে। ডায়ালগ, খুব খারাপ না। মাঝে মাঝে স্টান্ডার্ড ফল করেছে। তবে ওভারঅল, গুড। জানি না সিরিজটা হিট করবে কিনা। যেহেতু বাংলায় ভালো ওয়েব সিরিজ এখনও তেমন একটা হয়নি, তাই হয়তো এ যাত্রা পার পেয়ে যাবে। তবে কাহিনিটায় পোটেনশিয়াল ছিল, দারুণ একটা সিরিজ হওয়ার। সেটা আমলে নিলে বলবো, অ্যা গ্রেট অপারচুনিটি ওয়েস্টেড।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়