শিরোনাম

প্রকাশিত : ১১ জুলাই, ২০২১, ১২:০৫ রাত
আপডেট : ১১ জুলাই, ২০২১, ১২:০৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শামীম আহমেদ: গরিব মারা ‘শাটডাউন’ এবং কয়েকটি প্রশ্ন

শামীম আহমেদ: ডেইলি স্টারের একটা রিপোর্টে দেখলাম, করোনায় রাস্তায় বের হওয়া গ্রেফতারকৃত মানুষকে দেখতে জেলখানার সামনে শত শত মানুষ বিপজ্জনক দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছেন। যারা গ্রেফতার হয়েছিলেন তাদের বেশির ভাগই জীবিকার জন্য রাস্তায় বের হয়েছিলেন, ফূর্তি করতে নয়। একজন রিকশাচালক, মুদি দোকানদার বা ফেরিওয়ালা, রাস্তার সবজি বিক্রেতা ছয়ফুট দূরত্বেই থাকেন। তাদের গ্রেফতার করে গাদাগাদি করে জেলে রেখে আবার রাস্তার ওপর তাদের আত্মীয়-স্বজনকে দাঁড় করিয়ে রেখে কোন করোনা দূর করা হচ্ছে? এই গরিব মানুষগুলোকে এখন আবার পুলিশকে টাকা দিয়ে খাবার দিতে হবে, ছাড়াতে হবে, গরিব আরও গরিব হবে।

যে দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেড় বছর বন্ধ থাকে, সেখানে শাটডাউন না মানার জন্য মানুষকে গ্রেফতার করা কী ভয়াবহ অমানবিক, ঘৃণ্য একটা কাজ আমি বলে বোঝাতে পারব না। কানাডায় কয়েকমাস আগে করোনার অবস্থার অবনতি হলে গাড়ি থামিয়ে একই গাড়িতে একাধিক ঠিকানার মানুষ আছেন কিনা তা চেক করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ব্যাপারটা আমি সেভাবে খেয়াল করিনি, কিন্তু পরের দিন দেখলাম আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত গ্রুপে, চ্যাটে সব পিএইচডি করছে বা প্রফেসর, উচ্চ পর্যায়ের গবেষক, প্রশাসকরা সরকারকে তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। মানুষকে ঘরে রাখতে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া তারা মেনে নিতে পারেননি। মাত্র সপ্তাহ খানেক পরে অন্টারিও সরকারের প্রধান অশ্রুসজল চোখে মানুষের কাছে তার এই সিদ্ধান্তের জন্য ক্ষমা চান।

গরিব মানুষকে পিটিয়ে মেরে ঘরে রেখে করোনা প্রতিরোধ করা যাবে না। গরিব মানুষের জীবিকা নষ্ট করে করোনা প্রতিরোধ করা যাবে না। কই গুলশান বনানীর ধনীদের গাড়িতে রাস্তায় জ্যাম, ব্যাংকে ঢোকা যাচ্ছে না, ওখানে কিছু করতে পারবেন? কাউকে গ্রেফতার করতে পারবেন? রোজার ঈদের আগে ‘ভাসাবি’তে শপিং করার জন্য যে ভিড় হয়েছে, সেখানে সরকার কী করেছে? মানুষকে পিটিয়ে যে বস্তিতে পাঠাচ্ছেন সেখানে প্রটি ১ ফুটে ২ জন দাঁড়িয়ে থাকে মাস্ক তো দূরের কথা। বরং বাইরে থাকলে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখতো। যে দেশের সরকার, নীতি-নির্ধারক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নিজের দেশের সমাজব্যবস্থা, সংস্কৃতি, নৃবিজ্ঞান, মানুষের সামাজিক ও আচরণগত বিজ্ঞানের দিকগুলো বোঝে না, তারা এই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে এটাই স্বাভাবিক।

এসব না করে যদি শুরুতেই ভ্যাকসিন আনায় মনোযোগ দেওয়া হতো এবং মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে মোটামুটি ঐতিহাসিকভাবেই অবিশ্বাসযোগ্য ভারতের ওপর নির্ভর না করে থাকতো, তাহলে করোনার অবস্থা অনেকটাই ভালো হতো। গরিবের ওপর অত্যাচার, নিপীড়ন বন্ধ করে ভ্যাকসিন আনায় মনোযোগ দিন সরকার বাহাদুর। আর গরিবের ঈদ যাওয়া নিয়ে মশকরা করা মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তরা আগে শপিং আর রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করুন।
লেখক : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়