অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: ডেনমার্কের জনসংখ্যা হলো প্রায় ৫৮ লাখ, যা প্রায় আমাদের ময়মনসিংহ জেলার জনসংখ্যার সমান। ক্রোয়েশিয়ার জনসংখ্যা হলো মাত্র ৪০ লাখ, যা ময়মনসিংহ জেলার জনসংখ্যার কম। আর আইসল্যান্ডের জনসংখ্যা মাত্র ৩.৫ লাখ যা আমার কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে সামান্য বেশি। দেশগুলো ছোট হলেও খেলাধুলা, লেখাপড়া ও অন্যান্য বিষয়ে এরা বিশ্বের অনেক বড় দেশ থেকে অনেক এগিয়ে। এই রাষ্ট্রগুলো কি পরিমাণ এফিসিয়েন্ট রাষ্ট্র হলে পরে ৪০ থেকে ৬০ লক্ষ জনসংখ্যার দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়, বিখ্যাত ফুটবল টিম, বিখ্যাত গবেষক, বিখ্যাত অনেক লেখক থাকে? তাদের দেখলে প্রমাণ হয় সংখ্যা বা কোয়ান্টিটি নয় গুন বা কোয়ালিটিই মুখ্য।
অনেক পশু এবং কীটপতঙ্গের বাচ্চা বেশি হয় এবং তাদের জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ে। কিন্তু তাদের জীবনে রিপ্রোডাকশন আর খাওয়া ছাড়া আর তেমন কোনো কাজ নেই। মানুষের বাচ্চা কম হয়। মানুষের জীবন মানসম্পন্ন। পৃথিবীর মানুষের মধ্যে বাংলাদেশসহ আফ্রিকার কিছু দেশের মানুষের বেশি সন্তান হয় কিন্তু তাদের গুণ কম হয়। পশ্চিমা অনেক দেশের অনেকের বাচ্চা সর্বোচ্চ একজন কদাচিৎ দুজন। অনেকে সন্তানই নেয় না। কারণ তারা কোয়ান্টিটির চেয়ে কোয়ালিটির দিকে নজর বেশি।
খারাপদের সংখ্যা দ্রুতই বাড়ে। আমরা আসলে সংখ্যা দিয়েই আমাদের বড়ত্ব দেখাতে চাই। প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও আমাদের একই মানসিকতার প্রতিফলন। হাজার হাজার প্রাইমারি স্কুল কিন্তু কোনো মান নেই। শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় মানের কোনো বালাই নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ধশতাধিক গবেষণা সেন্টার কিন্তু মানসম্পন্ন কোনো গবেষণা নেই। আমাদের উচিত প্রতিটি বড় বড় জেলাকে (পুরনো জেলাগুলোকে অন্তত) স্বায়ত্বশাসিত প্রদেশ হিসাবে ঘোষণা দেওয়া। সেই প্রদেশের সদর জেলাটি হবে প্রাদেশিক রাজধানী। এইভাবে বাংলাদেশের প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
প্রত্যেকটি জেলাকে যদি উন্নত করতে পারি তাহলে বাংলাদেশ উন্নত হবে। ১৮ কোটি জনসংখ্যার মাত্র একটি রাজধানী এবং সকল কিছু এই রাজধানী কেন্দ্রিক এইটা ঢাকা আর নিতে পারছে না। কিছু একটা করতে হবে। এইভাবে একটি দেশ চলতে পারেনা। কল্পনা করা যায় ইউরোপিয়ান দেশগুলোর মত এফিসিয়েন্ট রাষ্ট্র বানাতে পারলে এই দেশ কি হতো? লেখক : শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়