অঞ্জন রায়: সমাজের উঁচু তলার মানুষদের কখনোই অনটন স্পর্শ করে না। প্রান্তিকজনেরা প্রচণ্ড লড়াই করে কোনও না কোনওভাবে টিকে থাকেন, দাঁড়াতে পারেন ত্রাণের জন্য। প্রচণ্ড কষ্ট হলেও তারা টিকে থাকার লড়াইটা জানেন। কিন্তু সবচেয়ে বিপন্ন এখন মধ্যবিত্ত। কোভিডকালে তারা অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। ছোট ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন, ব্যাংক লোন আর ক্রেডিটকার্ডের চাপে ফোন ধরতে ভয় পাচ্ছেন, চাপ নিতে না পেরে মানসিক সংকটে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবুও বলতে পারছেন না নিজেদের অনটনের কথা। সহ্য করতেও পারছেন না। তাদের বাড়ছে ঋণের বোঝা, বাড়ছে মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তে নেমে যাওয়া। এই মানুষগুলোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এই দেশে অনেক বিত্তবান আছেন- যারা চাইলে বড় একটা শক্তি হিসেবে পাশে থাকতে পারেন এই বিপন্ন মানুষদের। সেই উদ্যোগটা এখন খুবই জরুরি। খাবারের অভার পূরণ করা যায়, রাষ্ট্র চেষ্টা করছে, পারছেও। কিন্তু অজস্র ধাবমান মধ্যবিত্ত জীবন এখন থমকে যাচ্ছে। বড্ড জরুরি এই বিপন্ন মধ্যবিত্তর পাশে দাঁড়ানো। আমি গত কদিনে এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা দান, অনুদান, নগদ সহায়তা চান না। চান এই অসুখকালে টিকে থাকা আর ও অনান্য চাপ থেকে মুক্তির জন্য সহজে ব্যাংক বা রাষ্ট্রের কাছে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ, যা তাদের প্রায় নিভে যাওয়া জীবনে আলো আনবে। কোভিডকালের আগের চড়া সুদে নেওয়া পার্সোনাল লোন বা ক্রেডিটকার্ডের লোনগুলো শোধ করার তাগাদা আর প্রচণ্ড মানসিক চাপ তাদের অসুস্থ করে দিচ্ছে। ব্যাংকের নিয়মে প্রতিদিন বাড়ছে ঋণের সেই টাকার পরিমাণ। তারা নিস্তার চান।
সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো, অথবা রাষ্ট্রের কোনও তহবিল থেকে কি সম্ভব এই মানুষদের রক্ষা করা। এখন তো জাতীয় পরিচয়পত্র সবারই আছে, টিআইএন নম্বর আছে অধিকাংশের। সেই সূত্র ধরেই এই বিপদমুক্তির জন্য যে টাকা সামান্য সুদে পাবেন, তারা সেটা নিশ্চয় ফেরত দেবেন। বিশেষ করে যে সক্ষম মানুষেরা কোভিডকালে বেকার হয়েছেন, ব্যাবসায় সর্বশান্ত হয়েছেন তাদের বিষয়টা ভাবা দরকার। এখন কোভিডের হাত ধরে এসেছে বিবিধ মানসিক সংকট। সেই সংকটের অন্যতম কারণ কিন্তু চাকরি বা ব্যাবসা হারানো। কোথাও কি কেউ আছেন, যারা রাষ্ট্র বা বেসরকারি খাতের এমন স্থানে রয়েছেন- এই বিষয়টি নিয়ে সদয় হয়ে ভাববেন। আবারও বলছি- দান, অনুদান, সহায়তা বা ত্রাণ নয়। মধ্যবিত্তের অস্তিত্ব বাঁচাতে জরুরি সামান্য সুদে ঋণ। যা তাদের আত্মমর্যাদাটুকু রক্ষা করবে। লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে