শিরোনাম
◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫

প্রকাশিত : ০৩ জুলাই, ২০২১, ০৪:১৪ সকাল
আপডেট : ০৩ জুলাই, ২০২১, ০৪:১৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দেশে বড় বন্যার আশঙ্কা, তিন অঞ্চলে মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান

যুগান্তর: এই মৌসুমেই দেশে বড় বন্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় রয়েছে। পাশাপাশি বিরাজ করছে লঘুচাপ পরিস্থিতি। এতে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের দিক থেকে ধেয়ে আসছে প্রচুর জলীয়বাষ্প। ফলে আগামী ১০ দিন ভারি বৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি ভারতের পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ি ঢলের শঙ্কাও আছে। দুটি মিলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং মেঘনা অববাহিকায় অস্বাভাবিক হারে পানিপ্রবাহ বেড়ে যাবে। এই পানিই তৈরি করতে পারে ১০ থেকে ১৫ দিন স্থায়ী বন্যা।

উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের তিন নদী কংস, খোয়াই ও মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা পেরিয়ে এরই মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। তবে শুক্রবার সেই পানি বিপদসীমার নিচে নেমে গেছে। এরপরও শঙ্কামুক্ত নয় ওই তিন নদী সংশ্লিষ্ট এলাকা। পাশাপাশি দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ বেড়ে যেতে পারে। ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি অব্যাহত আছে। আরও অন্তত ৭২ ঘণ্টা এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে শুধু উল্লিখিত তিন নদী সংলগ্ন এলাকা নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ এবং ফেনীই নয়, নতুন নতুন এলাকাও বন্যাকবলিত হয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলা বন্যাকবলিত হওয়ার আশঙ্কা খুবই বেশি। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা আছে। সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) এসব আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির বর্তমান পরিস্থিতি আরও ৭ থেকে ১০ দিন অব্যাহত থাকতে পারে। আন্তর্জাতিক কয়েকটি আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আগামী ১০ দিনে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ১ হাজার থেকে দেড় হাজার মিলিমিটার আর মেঘনা অববাহিকায় ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। এতে মধ্য থেকে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা হতে পারে। বর্তমানে ‘লা নিনা’ পরিস্থিতি নেই। নভেম্বরে ফের ‘লা নিনা’ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এক বছরে এই দ্বৈত লা নিনা পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে আবহাওয়া অস্বাভাবিক রূপ ধারণ করেছে।

বাংলাদেশে বন্যার প্রধান কারণ হচ্ছে অব্যাহত ভারি বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি। বিএমডি বলছে, বাংলাদেশের ওপর বর্তমানে মৌসুমি বায়ু খুবই সক্রিয়। ভারতের উত্তরপ্রদেশ থেকে বিহার, হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আবার ভারতের আসাম পর্যন্ত এই মৌসুমি বায়ুর অক্ষ বিস্তৃত। এর একটি অংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। যে কারণে এই এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আর ভাটি অঞ্চল হিসাবে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বৃষ্টির পানি বাংলাদেশের প্রধান দুই নদী গঙ্গা-পদ্মা এবং ব্রহ্মপুত্র যমুনার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিছু পানি মেঘনা দিয়ে বঙ্গোপসাগরে যায়। ফলে অতি বৃষ্টি হলে যে বন্যা তৈরি হয় তাতে বাংলাদেশ ভেসে যায়।

বৈজ্ঞানিক সূত্র অনুযায়ী, সাধারণত কোনো এলাকায় ২৪ ঘণ্টায় ন্যূনতম ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তা স্থানীয় বন্যার সৃষ্টি করে। আর ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তা ১০ দিনের স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা সৃষ্টি করে। বিএমডি জানিয়েছে, তিন দিন ধরে বন্যা সৃষ্টির মতোই বৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টার রেকর্ডে দেখা যায়, অন্তত ১৮টি স্থানে সর্বনিু ৫৪ এবং সর্বোচ্চ ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে সাতক্ষীরায়, আর ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় নরসিংদীতে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ১১০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়া এলাকাগুলো হলো-খুলনা, ভৈরববাজার ও কক্সবাজার।

আবহাওয়াবিদ একেএম রুহুল কুদ্দুস জানান, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত) ময়মনসিংহ, সিলেট, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারি (৮৯ মিলিমিটারের নিচে) বৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।

আবহাওয়া বিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, যখন কোনো এলাকায় লঘুচাপের সৃষ্টি হয় তখন সেখানে বায়ুর চাপ কম থাকে। এ অবস্থায় আশপাশের এলাকা থেকে বায়ু এসে সেখানকার বায়ু চাপের ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় এবং একটা লঘুচাপ পরিস্থিতি বিরাজ করায় ভারত ও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোতে বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরের দিক থেকে জলীয়বাষ্পসহ প্রচুর বাতাস আসছে। আর বায়ু হালকা হওয়ায় তা ঊর্ধ্ব আকাশে চলে যাচ্ছে। ফলে এই সিস্টেমে প্রচুর মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। যার কোনোটি গভীর সঞ্চালনশীল আবার কোনোটি হালকা বা সামান্য ভারি। এসব মেঘমালা কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি ঝরাচ্ছে।

এফএফডব্লিউসি বলছে, বিএমডি এবং ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের (আইএমডি) গাণিতিক মডেল অনুযায়ী, আগামী তিন দিন দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা প্রদেশে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকা এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি সমতলে দ্রুত বাড়তে পারে। এতে কতিপয় স্থানে আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে।

সংস্থাটি আরও বলছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি স্থিতিশীল আছে। যমুনার পানি বাড়ছে। পদ্মার পানি হ্রাস পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সুরমা বাদে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ছে। পানি বৃদ্ধির ধারা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সাধারণত আপার মেঘনা বলতে বাহ্মণবাড়িয়ার ভৈরব বাজারের ওপরে প্রবাহিত সুরমা-কুশিয়ারাসহ সিলেট বিভাগ এবং নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও আশপাশের জেলায় প্রবাহিত যেসব নদী এসে মেঘনায় মিলেছে সেগুলোকে বোঝায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়