হাসান মামুন: মগবাজার ওয়্যারলেস নয়, রিকশাওয়ালা ভাইকে বললাম কাল যেখানে অ্যাক্সিডেন্ট হলো, ওইখানে নিয়া চলো। ফাঁকা রাস্তা ধরে অকুস্থলে যেতে বেশি সময় লাগলো না। ওখানে গ্র্যান্ড কনফেকশনারির ওই শাখা থেকে সেদিনও তো টুকটাক খাবার কিনে ঘরে ফিরেছি। কিছু কথা হয়েছিল তাদের সঙ্গে। পাশেই লাবনী টেইলার্স। ১৯৭৪ সাল থেকে এক ভদ্রলোক ওটা চালিয়ে আসছেন। এখন বয়োবৃদ্ধ। সেদিন না কথা হলো তার সঙ্গে। বলেছিলেন, কাজের মধ্যে থাকতে চান। আর জীবনে অল্প চাহিদা নিয়ে তুষ্ট থাকার কথাও বলেছিলেন।
যে পুরনো দালানটায় বিস্ফোরণ ঘটে, তার দোতলায় সিদ্দিক টেইলার্স। সিদ্দিক সাহেব উন্নতি করেছেন ব্যবসায়। চোখের সামনে তার দোকানটি বড় হলো। তাতে এসি বসলো। কতোবার ওখানে গেছি নিজের আর অন্যদের জামাকাপড় বানাতে। কেমন আছেন তারা? গিয়ে দেখি ওখানে লোকের ভিড়, পুলিশের তৎপরতা, মিডিয়ার লোকজন আর দেখি দালানের পেছনটা জাস্ট উড়ে গেছে। নিচতলায় যেন কামানের গোলা এসে পড়েছিলো। বিস্ফোরণের শব্দে রাস্তার ওপাশে আড়ংয়ের কাচের দেয়ালগুলো ধসে যাওয়ার পর অদ্ভুত লাগছে। তার পাশে বিশাল সেন্টারের দোকানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত। দোকানপাটের শাটার, কলাপসিবল গেট দুমড়ানো অবস্থায় পড়ে আছে রাস্তায়। লোকজন এখনো হতবাক যা ঘটেছিলো, তাতে। উপস্থিত দু-একজনকে জিজ্ঞেস করে চেনাজানা লোকদের বিষয়ে পরিষ্কার কিছু জানতে পারলাম না। লাবনী টেইলার্স পাশের ভবনে আর কম ক্ষতিগ্রস্ত দেখে একটু আশ্বস্ত হলাম অবশ্য। অতঃপর রাস্তার ওই ধারে গলিতে গ্র্যান্ড কনফেকশনারির মূল আউটলেটে গিয়ে জানলাম তাদের দুই কর্মী কীভাবে বিস্ফোরণস্থল থেকে বেরিয়েছেন, সেটা তারাও বলতে পারছেন না। মনে পড়লো, আগের ফোনসেটে সিদ্দিক সাহেবের নম্বর ছিলো। তার আর তাদের খবরও তো জানতে চাই।
ওই ঘটনায় সাত-আটজন ইতোমধ্যে মারা গেছে। অনেকে আহত। ওই মুহূর্তে পাশের রাস্তা দিয়ে যেতে থাকা বাসের লোকজনও আহত হয়। মারা গেছেন এক হতভাগ্য বাসচালক। গত এক মাসে না হলেও তিন-চারবার গেছি ওই ভবনে কিংবা তার সামনে দিয়ে। ভাবতেই গা ছমছম করে উঠলো। আমরা অনেকেই সৌভাগ্যবশত বেঁচে আছি যথেচ্ছ উন্নয়নের শিকার এ শহরে। বেঘোরে মারা পড়লে হয়তো বলছি, আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছেন! অগত্যা ঘটনা ভুলে যেতেও সময় লাগছে না। ফেসবুকেও তো একের পর এক ইস্যু এসে আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কোথায় যেন। ফেসবুক থেকে