আমিরুল ইসলাম : বিসিকের সাবেক পরিচালক আবু তাহের খান বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার পক্ষ থেকে খন্ড খন্ড ভিত্তিতে যখন যেমন তখন তেমন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এরকম সিদ্ধান্ত নিলে হবে না। করোনা মহামারী তো হঠাৎ করে চলে যাবে না। কবে যাবে, কীভাবে যাবে? এর একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আছে, তার শতভাগ বাস্তবের সঙ্গে মিলবে না। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এর একটি বড় অংশের প্রাক্কলন করা সম্ভব। সেভাবে প্রাক্কলন করে বুঝতে হবে করোনার সংক্রমণ নিচের দিকে কবে থেকে নেমে আসতে পারে।
করোনা আগে শুধু শহরে ছিলো এখন গ্রামেও পৌঁছে গেছে। তাহলে গ্রামের মানুষকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে হলে কী করতে হবে সেটা বের করতে হবে। গ্রামে অধিকাংশ মানুষ বাস করলেও সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা নেই। এতোদিন করোনার সমস্যাটা ছিলো ৬ কোটি মানুষের সমস্যা, বাকি ১১ কোটি মানুষ ভালো ছিলো। এই ১১ কোটি মানুষের কিছুটা অর্থনৈতিক সমস্যা ছিলো কিন্তু করোনার চিকিৎসা নিয়ে ভাবতে হতো না। এখন কিন্তু পুরো ১৭ কোটি মানুষ অ্যাফেক্টেড। চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে শুধু শহুরে ৬ কোটি মানুষের জন্য। বর্তমানে করোনার ঝুঁকি বহুগুণ। এটা মোকাবেলার জন্য অন্তত দুই বছরের পরিকল্পনা করতে হবে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, পরিকল্পনার মধ্যে প্রথমে থাকবে চিকিৎসার বিষয়টি। চিকিৎসার বিষয়টি আবার দুইভাগে ভাগ করতে হবে। প্রথমেই ১৭ কোটি মানুষকে কতোদিনের মধ্যে টিকা দিতে পারবো সেটা ভাবতে হবে। টিকা দিতে দেরি করলে অর্থনৈতিক ব্যয় আরও বেড়ে যাবে। ১৭ কোটি মানুষ টিকা দিতে একটি বড় অর্থ খরচ হবে কিন্তু তার চেয়ে বেশি খরচ হবে যদি টিকা দিতে বিলম্ব করা হলে। মোটা জনসংখ্যাকে কতোদিনের মধ্যে টিকার আওতায় আনা যায় এবং কোথা থেকে এই ৩৪ কোটি টিকা সংগ্রহ করা যায়, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। টিকা সংগ্রহের নানা বিকল্প উৎস নিয়ে চিন্তা করতে হবে।
বর্তমান সমচেয়ে সামনে মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যা আরও বেশি হবে কারণ সঞ্চিত অর্থ শেষ হয়ে যাওয়ায় তৃতীয় ওয়েবের সময় মানুষ আরও বেশি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। শুধু নির্দিষ্ট ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকে টিকিয়ে রাখার কথা চিন্তা করলে হবে না। যারা দিন এনে দিন খায়Ñ তাদের জন্যও কিছু করতে হবে। তাদের জন্য কিছু করতে না পারলে শুধু বড় ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রেখে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানো যাবে কিন্তু মানুষ বাঁচানো কষ্ট হয়ে যাবে।
এ বছর ধানের ফলন ভালো হলে এর মজুত নিয়ে সিন্ডিকেটগুলো কারসাজি করতে পারে। এর মজুত সরকার ভালো করে করতে পারলে জনগণ কিছু রক্ষা পাবে। কিন্তু মজুতদারদের এই ধান চলে গেলে পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্তে¡ও সাধারণ খেতে পারবে না। গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। গ্রামাঞ্চলে ছদ্ম বেকারের সংখ্যা বেড়ে গেছে। কৃষিজ পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষির ডাইভারসিফেকেশনের দিকে আসতে হবে। লেখাপড়া জানা ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে। তাদের বলতে হবে তোমরা কৃষির বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নিয়ে কৃষিতে যুক্ত হও।
গেলো দশ বছর ধরে জিডিপির গ্রোথের বড় কারণ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট। আমাদের দেশে কাজ করার মতো তরুণ লোকের সংখ্যা বেশি। তাদের একটি বড় অংশ লেখাপড়া জানে। তারা এখন ইনঅ্যাকটিভ হয়ে যাচ্ছে। তাদের জন্য গ্রামে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। শহর ছেড়ে যারা চলে যাচ্ছে, এ সমস্ত ছেলে-মেয়েদের জন্য গ্রামে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। অনলাইন সেবাকে শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। এর মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত আঞ্চলে বসেই বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জনের সুযোগ রয়েছে। এর সম্প্রসারণ করতে হবে।
তিনি বলেন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং জনগণের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় সরকারকে কাজে লাগাতে হবে। আমলাতন্ত্র দিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। এর জন্য ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদকে কার্যকর করতে হবে। এমপি, মন্ত্রীরা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আইন প্রণয়ন করে কিন্তু স্থানীয় বিষযে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে স্থানীয় সরকারকে। স্থানীয় সরকারকে স্থানীয় পর্যায়ে সম্পদ আহরণ, বাজেট প্রণয়ন ও বাজেট বাস্তবায়নের এখতিয়ার দিতে হবে। এসব কর্মকাÐে কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ সম্পদ দেবে কিন্তু হস্তক্ষেপ করবে না। স্থানীয় সরকারের প্রশাসনের দক্ষতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা হলে তারাই তাদের ক্ষমতাবলে সেখানে হাসাপাতাল বানাতে পারতো যার ফলে গ্রামের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত হতো তাদের ঢাকামুখী হতে হতো না। দশ-বিশ বছর আরও একটি মহামারি আসতে পারতে। করোন মহামারী থেকে শিক্ষা নিয়ে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে। নতুন কোনো মহামারী আসলে আমরা যেন সমস্যায় না পড়ি তার জন্য।