আব্দুল্লাহ মামুন : [২] বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলিমুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক নতুন গবেষক তৈরি হয়েছে। গবেষণা খাতকে গুরত্ব দিয়ে প্রত্যেক গবেষককে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিলে উদ্ভাবনী ও ভালো অনেক আবিস্কার হবে।
[৩] বর্তমানে অনেক গবেষক ভালো বিষয়ে পিএইচডি করে এসে গবেষণায় বরাদ্দের অভাবে বসে থাকছে। পরবর্তীতে সময় কাটানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোষ্ট বা হাউস টিউটর হিসেবে যুক্ত হোন, যা একজন মেধাবী শিক্ষকের জন্য ক্ষতিকর দেশ ও জাতির জন্যও ক্ষতিকর। প্রত্যেক গবেষককে যদি পরিপূর্ণ সুযোগ ও পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া যায় তাহলে গবেষণায় অনেক অগ্রগতি হবে, যা দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে।
[৪] আলিমুল ইসলাম উদাহরণ দিয়ে বলেন, বিজ্ঞানী মোবারক আহমদ খান প্রাকৃতিক উপাদান থেকে আবিষ্কার করেছেন পরিবেশবান্ধব নানা ব্যবহারিক পণ্য। আবিষ্কৃত পাটের প্লাস্টিক থেকে তৈরি সোনালি ব্যাগ ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় সাড়া ফেলেছে। একইভাবে যদি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া যায় তাহলে আরো মেধা বিকশিত হবে।
[৫] তিনি আরও বলেন, দেশের বাহিরে গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবে যখন জাপানের নাগাসাকিতে গবেষণা করি, তখন কোনো ক্যামিকেল প্রয়োজন হলে নিজেই ১০ লাখ ইয়েন পর্যন্ত সংগ্রহ করা যেতো এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে পেয়ে যেতাম। শুধু প্রফেসরকে জানালেই হতো যে, আমার একটি ক্যামিকেল প্রয়োজন আবেদন করেছি।
[৬] বাংলাদেশে গবেষণার ক্ষেত্রে ২ লাখ টাকার বেশি প্রয়োজন হলে দরপত্র আহবান, মিটিং ও ক্রয় কমিটির অনুমোদন নিয়ে আবার ক্রয়উত্তর কমিটির মেয়দ পর্যবেক্ষণ হয় এবং গবেষণা ব্যবস্থায় প্রধানদের ক্লিয়ারেন্স নিতে হয় এরপর অর্থ সংগ্রহ করতে হয় এক কথায় ঢিলে ব্যবস্থাপনা। জাপানে দেখেছি একটি বিভাগের জন্য একজন প্রফেসর তিনিই সবকিছু দেখভাল করেন। লেকচারার, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক করেসপন্ডিং অফারের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে গবেষণা ও থিসিস জমা দেন।
[৭] আমাদের দেশে গবেষণা ব্যবস্থাতো সেরকম নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শর্ত অনুযায়ী ১২ বছর পর সংয়ক্রিয় ভাবে অধ্যাপক হোন। এখন অধ্যাপকদের নিজ নিজ গবেষণার ক্ষেত্রও পছন্দ আলাদা যারফলে তাদের প্রজেক্ট পেতে হলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়। সরকারের পর্যাপ্ত ফান্ড থাকলে প্রত্যেক গবেষকের মঞ্জুরি অনুযায়ি স্টাফদের নিয়ে গবেষণার ডিজাইন করবে গবেষণার বিষয়বস্তু নিয়ে। বর্তমানে আমাদের সমস্যা ভিত্তিক গবেষণা করতে হবে তাহলে আমরা দ্রুত এগিয়ে যাবো। তবে আমরা নির্বিচারে গবেষণায় করি যেমন; আজ এই বিষয়, কাল অন্য বিষয় অর্থ্যাৎ আজ এখানে ফান্ড নেই, অন্যখানে ফান্ড আছে সেখানে গবেষণা করতে হয়, এভাবে তো গবেষণা হয় না।
[৮] শিক্ষক নিয়োগে নতুন নিয়ম করা হয়েছে ১ম শ্রেণি না হলেও হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আগের ও এখনকার অবস্থান তুলনামূলক ব্যাপক ভিন্ন। তবে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মোহাম্মদ আখতার হোসেন মাত্র ৬ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমূল পরিবর্তন আনেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েশন শেষে মেধা তালিকায় ১ থেকে ৭ এর মধ্যে যারা থাকবে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এগুলো তোয়াক্বা করে না।
[৯] এছাড়া এসএসসি ও এইচএসসিতে ভাল গ্রেড পেতে হবে। তবে অঞ্চল ভিত্তিক, রাজনৈতিক, ধর্ম বা বিশ্বাস ভিত্তিক বিবেচনা করা যাবে না। সবকিছু ছাড়িয়ে যদি রাজনীতির উর্দ্বে উঠা যায় তাহলে মেধাবী শিক্ষক পাওয়া যাবে। এই মেধাবী শিক্ষকরাই আবার মেধাবী ছাত্র তৈরি করবে। এই সংস্কৃতি আমাদের বাস্তবতায় নেই যা প্রয়োজন।
[১০] শিক্ষক নিয়োগে বৈষম্যের কারণে অনেকে দুই, তিনবার ইন্টারভিউ দিয়ে শিক্ষক হয়, আবার অনেকে পদোন্নতির জন ইন্টারভিউ দিয়ে সময় মতো প্রমোশন পান না এই অনিশ্চয়তায় ভালো কিছুর আশায় অনেকে দেশের বাহিরে উন্নত দেশগুলোতে পড়ি জমায়।
[১১] কোনো সরকারকে দোষ দিয়ে এই দায় এড়ানো যাবে না প্রত্যেক সরকারের নীতি অলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক তবে মেধা পাচার বন্ধ করতে হবে।
[১২] আলিমুল ইসলাম বলেন, আজ থেকে ২০ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভাইস চ্যান্সেলরদের যেসকল মানদন্ডে মাপা হতো বা তাদের যে প্রজ্ঞা, দুরদর্শিতা ছিলো এখনকার ভাইস চ্যান্সেলরদের তা নেই বললেই চলে। সরকার ভিসি নিয়োগে সবদিক থেকে যোগ্য লোককে নিয়োগের দেয়, পরে নানা কারণে নিজেকে ও প্রতিষ্ঠানকে দূষিত করে। সম্পাদনা: মেহেদী হাসান