শিরোনাম
◈ ওড়না কেড়ে নিয়ে পুরুষ কর্মকর্তাদের উল্লাস, নারী বন্দিদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ◈ রেকর্ড উৎপাদনের সুফল কোথায়? চালের বাজারের চালকের আসনে কারা? ◈ পবিত্র আশুরা আজ ◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা ◈ চী‌নে জু‌নিয়র হ‌কি‌তে একদিনে বাংলাদেশ পুরুষ ও নারী দ‌লের জয়

প্রকাশিত : ১৮ জুন, ২০২১, ০৪:৪২ সকাল
আপডেট : ১৮ জুন, ২০২১, ০৪:৪২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দেশীয় মাছের বিলুপ্তি ঠেকাতে রাতারগুলে অভয়াশ্রম

নিউজ ডেস্ক: সিলেটের হাওর ও জলাশয়গুলো ছিল দেশীয় প্রজাতির মাছের আধার। কিন্তু প্রাকৃতিক আর মানসবসৃষ্ট নানা দুর্যোগের কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ এখন দুর্লভ। অনেক প্রজাতিই বিলুপ্তির পথে। হাওরপ্রধান জেলা সুনামগঞ্জের বাজারেও এখন খামারে চাষ করা মাছের ছড়াছড়ি।

এ অবস্থায় দেশীয় প্রজাতির মাছের সুদিন ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) গবেষকরা। সিলেটের বিরল প্রজাতির রাতারগুল জলাবনে তারা গড়ে তুলছেন দেশীয় মাছের অভয়াশ্রম। দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিস্তারের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুলে গড়ে তোলা হয় এ অভয়াশ্রম। এতে সাফল্যও মিলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। হারিয়ে যাওয়া দেশীয় অনেক প্রজাতির মাছের দেখা মিলছে স্থানীয় জলাশয়গুলোতে। রাতারগুল ছাড়াও একই উপজেলার গুরকচি নদীতে দেশীয় মাছের আরেকটি অভয়াশ্রম গড়ে তুলেছেন সিকৃবির গবেষকরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সিকৃবির মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের জলজসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্যোগে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রক্ষায় একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের আওতায় এনএটিপিফেজ-২ প্রকল্পের অর্থায়নে গৃহীত এ প্রকল্পে সহযোগিতা করছে সিকৃবি প্রশাসন, বন বিভাগ ও মৎস্য বিভাগ।

সিকৃবির মাৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. ফয়সাল আহমদের নেতৃত্বে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।

প্রকল্পের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু বলেন, শুষ্ক মৌসুমে আমাদের উন্মুক্ত জলাশয়গুলো শুকিয়ে যায়। এতে মাছের আশ্রয়স্থল দিন দিন কমে যাচ্ছে। এছাড়া প্রজনন মৌসুমে মাছ শিকার, হাওর ও বিল সেচে অবাধে মাছ আহরণের ফলেও মলা-ঢেলাসহ অনেক প্রজাতির দেশীয় মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। এ হারিয়ে যাওয়া প্রজন্ম রক্ষায় আমরা একটি প্রকল্প গ্রহণ করি।

তিনি বলেন, রাতারগুল ও গুরকচি নদীতে কিছু এলাকা আমরা দেশীয় মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তুলেছি। রাতারগুল ও গুরকচি নদীতে প্রায় তিন একর জায়গায় অভয়াশ্রমের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বরাদ্দ এনে এখানে সারা বছর পানি আটকে রাখার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া এ অভয়াশ্রমে যাতে দেশীয় প্রজাতির মাছ নির্বিঘ্নভাবে বেড়ে উঠতে ও নিরবচ্ছিন্নভাবে বংশবিস্তার করতে পারে, তারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু বলেন, এরই মধ্যে এ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা সাফল্য পেতে শুরু করেছি। অভয়াশ্রমে অনেকগুলো প্রজাতিই বংশবিস্তার করেছে। প্রতি বর্ষায় এগুলো উন্মুক্ত জলাশয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এ বর্ষায়ও কিছু ছাড়া হবে। এতে করে আমাদের দেশীয় প্রজাতির মাছের বিলুপ্ত রোধ করা সম্ভব হবে। মাছের উৎপাদনও বাড়বে।

সম্প্রতি রাতারগুলে গিয়ে দেখা যায়, রাতারগুলে বাঁধ দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে পানি। পানি আটকে জাল ও বাঁশ দিয়ে চারপাশ ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে অভয়াশ্রম। সুরমা কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদী থেকে ডিমওয়ালা দেশীয় প্রজাতির মাছ সংগ্রহ করে এ অভয়াশ্রমে প্রজনন ঘটানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মলা, ঢেলা, পুঁটি, শিং, কৈ, গুতোম, মাগুর, পাবদা, টাটকিনি, ঘারুয়া, রিটা, রানী, নাফতানি, বাচা, ছেপচেলা, বাঁশপাতা, টেংরা, দাড়কিনাসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ অভয়াশ্রমে সংরক্ষণ করে বংশবিস্তার ঘটানো হচ্ছে।

এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে রাতারগুল এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। মাছের দেখভাল, রক্ষণাবেক্ষণ কাজে যুক্ত হয়েছেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। গুরকচি অভয়াশ্রমে ৫০ জন ও রাতারগুলে ৩০ জন মৎস্যজীবীকে নিয়ে গঠন করা হয় অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা কমিটি। মাছ বিক্রির লভ্যাংশের টাকা স্থানীয় উপকারভোগীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন গবেষণাকাজে সম্পৃক্তরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, অভায়াশ্রম গড়ে তোলার দুই বছর পর থেকে বিলুপ্ত প্রজাতির অনেক দেশীয় মাছ এখন আশপাশের জলাশয়গুলোতে পাওয়া যাচ্ছে। যেগুলোর দেখা অনেকদিন পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় মৎস্যজীবী আব্দুল গাফ্ফার বলেন, এখন এমন কিছু প্রজাতির মাছ আশপাশের জলাশয়গুলোতে পাওয়া যায়, যা আমরা ছোটবেলায় দেখতাম। কিন্তু অনেকদিন ধরে এগুলো হারিয়ে গিয়েছিল।

সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে রাতারগুলের সংরক্ষিত কিছু জায়গা বরাদ্দ নিয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মাছ নিয়ে গবেষণা করছেন। চলতি বছর তাদের ইজারার মেয়াদ শেষ হবে। - বণিক বার্তা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়