শিরোনাম
◈ নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির জয়: কেন ক্ষুব্ধ মোদি সমর্থকেরা? আল–জাজিরার প্রতিবেদন ◈ ওড়না কেড়ে নিয়ে পুরুষ কর্মকর্তাদের উল্লাস, নারী বন্দিদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ◈ রেকর্ড উৎপাদনের সুফল কোথায়? চালের বাজারের চালকের আসনে কারা? ◈ পবিত্র আশুরা আজ ◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা

প্রকাশিত : ১৪ জুন, ২০২১, ০৫:১৯ সকাল
আপডেট : ১৪ জুন, ২০২১, ০৫:২২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আম নিয়ে বিপাকে বিক্রেতারা: দামে জোয়ার-ভাটা খেলা

নিউজ ডেস্ক: রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে। আগে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলত আম বেচাকেনা। পাইকার আর বিক্রেতার পদচারণে মুখর থাকত হাট। কিন্তু এখন আমের দামে জোয়ার-ভাটা খেলা- সকালে চড়া তো, বিকালে খরা। গোপালভোগ শেষ পর্যায়ে।

দু-একজনের কাছে থাকলেও দাম ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ। তার পরও নেই ক্রেতা। করোনা ও লকডাউনে উভয় সংকটে আমের বাজার। এমন সংকটে কমেছে দামও। রাজশাহীর বৃহত্তর আমের হাট বানেশ্বরে মণপ্রতি দাম কমেছে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন আমের ভরা মৌসুম। রানীপছন্দ, ফজলি ও আশি^না ছাড়া সব আমের পর্যাপ্ত জোগান আছে। তবে করোনা ও লকডাউনের কারণে আসছেন বাইরের ব্যবসায়ীরা। বাজারটিতে গতকাল ল্যাংড়া আম বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১৪০০ টাকা। ক্ষীরশাপাতি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা মণ দরে। এ ছাড়া লক্ষণভোগ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ। আম ব্যবসায়ী ও চাষিদের দাবি, বাইরের ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না লকডাউন ও করোনায় সংক্রমণের ভয়ে। এমন অবস্থায় প্রতিদিনই লোকসান হচ্ছে তাদের। ফলে মণপ্রতি ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

সবুজ ইসলাম নামে এক চাষি জানান, আম বিক্রি না করে উপায় নেই। আমে পরিপক্বতা এসেছে, গাছে থাকলেও পেকে যাবে। কয়েক দিন থেকে ঘন ঘন বৃষ্টি হচ্ছে। এতে পাকা আমগুলো মাটিতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। উপায় না দেখে আম নামাতে হচ্ছে। এ ছাড়া দাম ভালো পাওয়ার আশায় সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নেই। পবার কুখুন্ডী এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন জানান, এখন আম শেষ পর্যায়ে। তারপরও দাম নেই। দাম বাড়ার আশায় দেরিতে নামালাম আম। কিন্তু তিন থেকে চার দিনের তুলনায় দাম পড়ে গেছে। বাজারে ল্যাংড়া আম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ। তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা মনে করছেন রাজশাহীতে লকডাউন। তার মানে বানেশ্বর হাট এলাকাতেও। তাই হাটে ব্যবসায়ী কম আসছে। আড়তদার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এবার তেমন পাইকাররা নামছেন না। লকডাউন ও করোনায় আক্রান্তের ভয়ে অনেকেই আসছেন না। এ কারণে আমের দাম অনেকটা কম।

পাইকারি ব্যবসায়ী মহিরুল ইসলাম বলেন, ‘গতবার করোনা থাকলেও আমের দাম কম ছিল না। ঢাকা বা চট্টগ্রামের আড়তেও ৭০-৮০ টাকার ওপরে আম বিক্রি করা যাচ্ছে না। কিন্তু অন্যান্যবার এই সময় গোপালভোগ, ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া ৮০-১০০ টাকা কিনতে হয়েছে বাজার বা বাগান থেকেই। বানেশ্বর হাটের ইজারাদার ওসমান আলী জানান, বাজারে আম ভালো আছে। তবে ক্রেতা কম। তার পরও প্রতিদিন ৬ থেকে ৭টি ট্রাকভর্তি আম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে আরও বাড়ত আম পরিবহন। অনলাইনে আম বিক্রেতা মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমের ক্রেতা কম। অর্ডার পাচ্ছি কম। কোনো দিন ফাঁকাও যাচ্ছে। আর সকালে আমের দাম বেশি থাকে। সেই তুলনায় বিকালে আমের দাম পড়ে (কম) যায়। তিনি আরও বলেন, দূর-দূরান্তের আমচাষি ও ব্যবসায়ী আসছেন কম।

প্রথমদিকে প্রতিদিন চার থেকে ৬ মণ আমের অর্ডার পেয়েছি। কিন্তু কয়েক দিনে অল্প পাচ্ছি।’ ট্রাকচালক আবুল কালাম জানান, ‘আমের ট্রিপ চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেটে নিয়ে যান। করোনার আগে সপ্তাহে দুই-তিনটা ট্রিপ হতো। এ বছর সপ্তাহে একটি করে ট্রিপ হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আম কম পাঠাচ্ছেন।’ বানেশ্বর হাটের ইজাদার ওসমান আলী জানান, ‘আমের ক্রেতা কিছুটা কম।’ রাজশাহীতে এ মৌসুমে ২ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের। যার বাজার মূল্য হাজার কোটি টাকা। এবার রাজশাহীতে ঝড় কম হওয়ায় আমের উৎপাদন বেশি হয়েছে। ফলে বর্তমান অবস্থায় বাজার দরে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ। তবে এ অঞ্চলের মানুষের তিন মাসের যে অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য সেটিতে ভাটা পড়েছে শুধু পাইকার সংকটে। তারপরও বিকল্প নানা উপায়ে আম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কেজেএম আবদুল আউয়াল।

করোনা ছড়ায় না : আমের গত মৌসুমে করোনায় এক রকম আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন বাইরের জেলার মানুষরা। আমের ঝুড়ি বা কার্টনে করোনার সংক্রমণের আতঙ্ক ছিল। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, আম করোনা ছড়ায় না বা আমের ঝুড়ি, কার্টনে করোনা ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই। মানুষ বেশি চলাচল না করলেই এটি নিরাপদ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমে করোনাভাইরাস ছড়ায় না। তবে হাট-বাজারে আম কিনতে গেলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, ‘আমের মাধ্যমে করোনা ছড়িয়েছে, এমন বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণ নেই। আম নিরাপদেই মানুষ গ্রহণ করতে পারে। যারা তারপরও আতঙ্কের মধ্যে আছেন, আম স্যানিটাইজ করে কিছুক্ষণ রেখে দিলে নিশ্চিতে সেটি খেতে পারেন। এ নিয়ে ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, ‘যারা এ নিয়ে আতঙ্কিত তারা আম কেনার পর সাবান পানিতে ভিজিয়ে কিছুক্ষণ পর খেতে পারেন।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়