সুজন কৈরী : [২] লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপস, বিগো লাইভ ও লাইকির ডিজিটাল কয়েন সদৃশ (ডায়মন্ড) বিক্রির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগে একজন বিদেশি নাগরিকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-মোস্তফা সাইফ রেজা (২৬), আরিফ হোসেন (২৭), এস এম নাজমুল হক (২৭), আসমা উল হুসনা সেজুতী (২৮) ও একজন বিদেশি নাগরিক।
[৩] শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ৮টি মোবাইল ফোনসেট, ৫টি ল্যাপটপ, ১টি প্রাইভেটকার, বিভিন্ন ব্যাংকের ৭টি ক্রেডিট কার্ড, ৬টি চেক বই, নগদ ৫০ হাজার ৪৬০টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার বিদেশি নাগরিক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম বলেছেন। এ ছাড়া তার কাছে পাসপোর্টও পাওয়া যায়নি। এই জন্য তাৎক্ষণিক তার নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে সিআইডি।
[৪] রোববার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির সাইবার পুলিশের ডিআইজি জামিল আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তার বিদেশি নাগরিক বিগো লাইভের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। মোস্তফা সাইফ রেজা বিগো লাইভের বাংলাদেশি অ্যাডমিন। আরিফ বাংলাদেশে বিভিন মেয়েদের রিক্রুট করে বিগো লাইভের সঙ্গে যুক্ত করতেন। নাজমুল হক ভার্চুয়াল মুদ্রা ডায়মন্ড বিক্রির অন্যতম প্রধান বাংলাদেশি এজেন্ট ও আসমা উল হুসনা সেজুতী বিগো লাইভের প্রধান অ্যাডমিন।
[৫] তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও অনেকের নাম পাওয়া গেছে। তাদের বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস একাউন্টে গত এক বছরে প্রায় শত কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
[৬] অনুসন্ধানে সিআইডি জানতে পেরেছে, লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপস, বিগো লাইভ এবং লাইকিতে সাধারণত দেশের উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা যুক্ত হতেন। বিগো লাইভ অ্যাপসে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। ব্রডকাস্টার আইডি ও সাপোর্টার বা সেন্ডার আইডি। ব্রডকাস্টার আইডি ব্যবহার করে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা ভিডিও লাইভ স্ট্রিম করে থাকে। এই ভিডিও লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে তথাকথিত বিনোদনের আড়ালে বিভিন্ন ধরণের অশ্লিলতা ছড়িয়ে দেওয়া হতো।
[৭] সাপোর্টার বা সেন্ডার আইডির মাধ্যমে যারা ভিডিও স্ট্রিমিং করতো, বিনিময়ে তাদের ডিজিটাল কয়েন সদৃশ ডায়মন্ড গিফট করা হতো। পরে ডায়মন্ড টাকায় রূপান্তরের মাধ্যম অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতো। এদের টার্গেট মূলত দেশের যুব সমাজ এবং বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
[৮] ডিআইজি জামিল আহমেদ বলেন, লাইভ স্ট্রিমিংয়ে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার প্রলােভনে অ্যাপে ঢোকেন সাধারণ ব্যবহারকারীরা। এজন্য ডায়মন্ড নামে একটি ভার্চুয়াল মুদ্রা কিনতে হয় তাদের। সাধারণত বাংলাদেশে ব্যবহৃত মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে ডায়মন্ড কেনা যায়। সেই মুদ্রা উপহার হিসেবে দিয়ে আড্ডায় যুক্ত হতে পারেন ব্যবহারকারীরা। এই ডায়মন্ড সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রয়েছে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন এজেন্সি। এমন একাধিক এজেন্ট বাংলাদেশে রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে সিআইডি। এসব এজেন্সির প্রত্যেকের একাধিক পেমেন্ট গেটওয়ে রয়েছে।
[৯] তিনি আরও জানান, সাধারণত ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব এজেন্সির বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। সাধারণ ব্যবহারকারীরা এসব এজেন্সির পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে ডায়মন্ড কেনেন। লাখেরও বেশি বাংলাদেশি ব্যবহারকারী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, ভার্চুয়াল মুদ্রা ও ব্যাংকের মাধ্যমে এই ডিজিটাল মুদ্রা কিনছে। এজেন্সিগুলো ডায়মন্ড কিনে আনে অ্যাপের বিদেশি অ্যাডমিনদের কাছ থেকে। আর এই ডায়মন্ড কেনার জন্য এসব এজেন্সিগুলো বিভিন্ন অবৈধ মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশে অর্থ পাচার করছে। এর মাধ্যমে প্রতি মাসে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
[১০] ডায়মন্ড কীভাবে কেনা যায় এমন প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি জামিল আহমেদ বলেন, বিগো লাইভ থেকে মেসেজ দিয়ে অথবা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে ডায়মন্ড কেনা সম্ভব। গ্রেপ্তার নাজমুল মূলত বিদেশি এজেন্সির মাধ্যমে ডায়মন্ড কেনাবেচা করতেন।
[১১] এসব অ্যাপস বন্ধের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ সিআইডি নেবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লাইকি ও বিগো লাইভ অ্যাপস বিদেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমরা নিয়ন্ত্রণকারীদের এসব বিষয়ে নজরে আনব। এছাড়াও আমরা এসব অ্যাপস সার্বক্ষণিক নজরদারি করছি। যারা অশ্লীল ভিডিও দিচ্ছেন, তাদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এসব অ্যাপসের অফিস আমাদের দেশে খোলার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব।