[১] ভারতের বিজেপিশাসিত আসামে সরকারি জমি থেকে মুসলিমদের উচ্ছেদের তীব্র নিন্দা ও অবিলম্বে ওই কর্মসূচি বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ কামরুজ্জামান।
[২] সম্প্রতি অসমের শোনিতপুর, হোজাই ও অন্যত্র সরকারি জমিতে বসবাসকারী মুসলিমদের উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ায় বিভিন্নমহল থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।
[৩] কামরুজ্জামান রেডিও তেহরানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘করোনা মহামারি আবহের মধ্যে আসামে নিরীহ, সংখ্যালঘুদের, দরিদ্র মানুষদের যেভাবে উচ্ছেদ করা হচ্ছে তার নিন্দা জানানোর কোনও ভাষা নেই। গোটা দেশে যখন সরকারের দায়িত্ব দরিদ্র মানুষদের আশ্রয় দেওয়া, তাঁদের জন্য জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি নেওয়া। তখন আসামের বিজেপি সরকার দেখে দেখে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক কর্মসূচি নিয়ে তাঁদের হেনস্থা করছে, তাঁদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করার যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা ওই ঘটনার কঠোর নিন্দা জানাচ্ছি। প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
[৪] মুহাম্মাদ কামরুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি এ ধরণের আচরণ ‘মানবতাবিরোধী’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত কোনও সরকার এ ধরণের সরকারি জায়গা থেকে সাধারণ মানুষকে উচ্ছেদ করতে পারে না। দেশের নাগরিকদের উচ্ছেদ করতে পারে না। কেননা, যদি উচ্ছেদ করার প্রয়োজন হয় তাহলে তার আগে তাঁদের পুনর্বাসনের দরকার। এটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সরকারের জানা দরকার। মহামান্য গৌহাটি উচ্চ আদালত এসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়ার পরেও যেভাবে অসম সরকার হাই কোর্টের নির্দেশকে অবজ্ঞা করছে এবং বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে তা নিশ্চয়ই ক্ষমাহীন অপরাধ। আমরা অসম সরকারের কাছে অনুরোধ করব তাঁরা মানবিক দৃষ্টিতে দরিদ্র মানুষদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুক এবং যেকোনোমূল্যে করোনা আবহে নিরীহ ও দরিদ্র মানুষদের উচ্ছেদ বন্ধ করুক।’
[৫] গণমাধ্যমে প্রকাশ, উচ্ছেদ ইস্যুতে গৌহাটি হাই কোর্ট গত ১০ মে এক জনস্বার্থ মামলায় রায় দিতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া, বিচারপতি এন কোটিশ্বর রাও এবং বিচারপতি মানসরঞ্জন পাঠকের সমন্বিত বেঞ্চ কোভিডের কথা মাথায় রেখে কিছু নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরমধ্যে যেকোনও ধরণের উচ্ছেদ, ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়ার মতো অভিযান বন্ধ রাখার নির্দেশও ছিল। প্রথমে ৩১ মে এবং পরবর্তীতে এর মেয়াদ ১৫ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু হাই কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও করিমগঞ্জ, দরং, বিশ্বনাথ, হোজাই জেলায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে তা নিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
[৬] গৌহাটি হাই কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, সংখ্যালঘু সমন্বয়রক্ষী সমিতির সভাপতি হাফিজ রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্ছেদ ইস্যুতে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, কোভিডের ভয়ঙ্কর সময়েও সরকার যেভাবে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে দিচ্ছে সেটা অমানবিক এবং আইনেরও পরিপন্থী। কারণ কোভিড আবহে উচ্ছেদ বন্ধ রাখতে বলেছে হাই কোর্ট। একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের লোককেই টার্গেট করা হচ্ছে। এতেই স্পষ্ট যে বিজেপির এজেন্ডা রূপায়িত করছে বর্তমান সরকার।’
[৭] মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে রাজধর্ম পালন করার আহ্বান জানিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে এভাবে উচ্ছেদ করাটা ‘অমানবিক’ বলেও মন্তব্য করেছেন গৌহাটি হাই কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমদ চৌধুরী।