মিনহাজুল আবেদীন: [২] সোমবার বিবিসি বাংলায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার বলেন, ইয়াবা বা হেরোইনের মতো এলএসডি একাধিকবার বা দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার করলে আসক্তি তৈরি হয়। আসক্ত ব্যক্তিরা রাতের বেলা না ঘুমিয়ে জেগে থাকেন, আবার দিনের বেলা ঘুমিয়ে থাকেন। যা শরীরের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর।
[৩] তিনি বলেন, যারা এলএসডি ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে নানা ধরনের হ্যালুসিনেশন হয়। তার মনে হয় সে এমন কোনও রঙ বা ঘটনা দেখছেন যা আসলে বাস্তবে নেই। এলএসডি মাদক গ্রহণের পর অনেক সময় অলীক দৃশ্য দেখার কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয় মানুষ।
[৪] মেখলা সরকার বলেন, ব্যক্তিভেদে এই আসক্তির মাত্রা আলাদা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা মাদক হিসেবে এলএসডি গ্রহণ করেন তারা একক মাদক হিসেবে একে গ্রহণ করেন না। বরং অন্য মাদকের সঙ্গে এলএসডি গ্রহণ করে থাকেন। তাই অন্য মাদকদ্রব্যে আসক্তির কারণে যে ধরনের বৈশিষ্ট্য ব্যবহারকারীর মধ্যে দেখা যায় এলএসডির ক্ষেত্রেও বৈশিষ্ট্য অনেকটা একই রকম হয়।
[৫] তিনি বলেন, মানুষ মাদক গ্রহণ করতে থাকলে তার শরীরে এক ধরনের সহনশীলতা তৈরি হয়। অর্থাৎ আগে কোনও মাদক যে পরিমাণ গ্রহণ করলে যতোটা নেশা হতো পরবর্তীতে হয়তো সেই একই মাদকে আর সেই আগের মতো নেশা হচ্ছে না। তখন আসক্ত ব্যক্তি অন্য মাদক দ্রব্যের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। এলএসডিও সে ধরনের ভয়ানক মাদকদ্রব্য।
[৬] মেখলা সরকার বলেন, মাদক ব্যবহারকারীর জীবনযাত্রায় নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি হয়তো কারো সঙ্গে মিশতে চায় না বা বন্ধু বান্ধবের পরিমাণ কমে যেতে দেখা যায়। অনেক সময় আবার এর বিপরীতও দেখা যায়। আগের বন্ধুদের সঙ্গে না মিশলেও নতুন করে বন্ধুও তৈরি হয়। আর্থিক চাহিদা আগের তুলনায় বেড়ে যেতে পারে। নিজের প্রতি যত্ন নেয়ার বিষয়ে উদাসীনতা দেখা দেয়া। এমনকি ক্লাসে ফাঁকি দেয়ার মতো বৈশিষ্ট্য দেখা যেতে পারে।
[৭] জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, এলএসডি গ্রহণের পর ব্যবহারকারীরা নানা ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ করে। অনেক সময় মানুষ আত্মঘাতীও হয়ে উঠতে পারে।
[৮] তিনি বলেন, যারা এলএসডি-তে আসক্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের মধ্যে আক্রমণাত্মক হয়ে পড়ে। খুব ছোট ঘটনায়ও সহিংস হয়ে উঠতে পারেন তারা। আসক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। ঘুমের সমস্যা হয়। অনেকের মধ্যে চরম মাত্রায় অনিদ্রা দেখা দেয়। আবার অনেকের মধ্যে অতিরিক্ত ঘুমের বৈশিষ্ট্যও দেখা দেয়। অনেকে কোনও ধরনের কারণ ছাড়াই ঘুমাতে থাকেন।
[৯] ড. অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, এলএসডিতে আসক্তদের শারীরিক পরিবর্তন ঘটে, চোখের মণি বড় হয়ে যাওয়া, শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার মতো বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এছাড়া ব্যবহারকারীর শ্রবণ এবং দর্শন ইন্দ্রিয় মাত্রাতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে যায়।
[১০] মাদকাসক্তি বিষয়ক গবেষক ও ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এম ইমদাদুল হক বলেন, অনেক সময় দেখা যায় যে, সন্তানরা বাবা-মা থেকে আলাদা হয়ে পড়ছে বা তারা জীবন যাপনের ক্ষেত্রে ইচ্ছে করেই একাকী হয়ে পড়ছে। সে ক্ষেত্রে সন্তানদের এলএসডির মতো আসক্তি বুঝতে পারা কঠিন। সেক্ষেত্রে বাবা-মাকে সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। পরিবারের সদস্যদের আরও সচেতন থাকতে হবে। সম্পাদনা: মেহেদী হাসান