বিশ্বজিৎ দত্ত: [২] গত দেড় বছরে প্রায় দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি) কমেছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা।এই বাস্তবতাকে মাথায় রেখে ২০২১-২২ সালের বাজেট প্রনয়ণ করা হচ্ছে। আগামী বাজেটের ব্যায় নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। যা চলতি বাজটের চেয়ে প্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। আর জিপিডির হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭.২ শতাংশ। এই হিসাবে জিডিপির হার ২০-২১ সালের চেয়ে ১ শতাংশ কম ধরা হয়েছে। চরতি বছর প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮.২ শতাংশ। উল্লেখ্য, ২০১৮-১৯ সালে দেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮.১৫ শতাংশ। কিন্তু কোভিডের কারণে ২০১৯-২০ সালে জডিপির হার কমে ৫.৪ শতাংশ হয়। দেশের বর্তমান পরিমান ৩১ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা।
[৩] অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী বাজেটের প্রধান প্রত্যাশার দিক হলো দেশে কোভিডের প্রকোপ কমে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপেও কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাতে দেশের রপ্তানি আয় ও আমদানি বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারি ব্যায় বৃদ্ধির মাধ্যমে যাতে অর্থনীতিতে অর্থের যোগান বাড়ে সেদিকেও লক্ষরাখা হচ্ছে বাজেটে। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। ঘাটতি নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। বাজেটে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, খাদ্য উৎপাদন ভালো হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য বিশ্ববাজারে কম থাকবে। করোনার কারণে জ্বালানি তেলের মূল্য খুব বেশি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। এর সুফল দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে এসে পড়বে।আসন্ন বাজেটে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় অগ্রাধিকার খাতগুলোয় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করাই হবে প্রধান অগ্রাধিকার। এজন্য স্বাস্থ্য, কৃষি, সমাজকল্যাণ, খাদ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ নজর দেওয়া হবে।
[৪] কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আগামী বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল থাকছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আকারও বাড়ছে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি বাজেটের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। আর বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠকে। এজন্য এসএমই খাতে আরও অর্থায়ন করা হবে। এ ছাড়া আগামী বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।
[৫] অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে জিডিপির আকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরে এগোচ্ছে। এটি টাকার অঙ্কে ৩৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এ জিডিপির ১৭ শতাংশের উপর ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয় নতুন বাজেটে। করোনার কারণে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার পুরোপুরি হয়নি। ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন খাত, পরিবহণ ও হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায় এখনো মন্দা চলছে। যে কারণে জিডিপির প্রবৃদ্ধি খুব বেশি হবে না-এমন হিসাব থেকে আগামী বাজেটে এ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়। চলতি অর্থবছরের শুরুতে ৮ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়।
[৬] আগামী অর্থবছরের বাজেটের প্রস্তাবিত আকার বছরে রাজস্ব খাতে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। রাজস্ব খাতে মোট আদায়ের হার জিডিপির প্রায় ১১ দশমিক ২ শতাংশ ধরে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
[৭] সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নাধীন। এসব খাতে বড় ধরনের বরাদ্দ রাখা হচ্ছে প্রতি বছর। সে ধারাবাহিকতায় আগামীতে বড় ধরনের বরাদ্দ থাকবে। তবে সরকারের দ্বিতীয় বছরে এডিপিতে বড় ধরনের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে না। ফলে উন্নয়ন খাতে সরকারি বিনিয়োগ অর্থাৎ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) নতুন বছরে বরাদ্দের আকার দাঁড়াবে ২ লাখ ২৫ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। এটি চলতি এডিপির তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। চলতি বছরে এডিপিতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ লাখ ২০ হাজার ৪৫ কোটি টাকা।এডিপিতে বৈদেশিক সাহায্যের পরিমান ধরা হয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা।
[৮] তবে চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নে এখনও পর্যন্ত অনেকটা শ্লথগতি বিরাজ করছে।করোনার কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটেছে। অর্থ বিভাগের হিসাবে এবারও ঘাটতি বাজেট ৫ শতাংশের উপরে থাকছে। বাজেট ঘাটতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ রেখে হিসাব মেলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এর বাইরে স্বাস্থ্যখাতে এবারেও থোক বরাদ্দ থাকছে ১০ হাজার কোটি টাকা। আর স্বাস্থ্য খাতে এবার বরাদ্দ রাখা হতে পারে ২৮ হাজার কোটি টাকা।