ফাহাম আব্দুস সালাম: বাংলাদেশে অনেক অনেক মানুষের ধারণা, বাংলাদেশসহ অনেক তৃতীয় বিশে^র দেশে কোভিড ভ্যাকসিন তৈরি করতে না পারার মূল কারণ হলো পেটেন্ট। সম্ভবত ফরহাদ মজহার সাহেবের বক্তব্যের (সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বিতর্কে বক্তব্য শুনে হয়তো) কারণে অথবা বাইডেন পেটেন্ট উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন- সেই প্রেক্ষিতে মানুষের মনে এই ধারণা জন্মেছে। এটা পুরোপুরি ভুল ধারণা। ধরেন যে ফাইজার বললো, সে তার ইন্টেলেকচুয়াল রাইট এনফোর্স করবে না কিংবা ধরলাম যে পেটেন্ট উন্মুক্তই করে দিলো (পেটেন্ট এপ্লিকেশনে আপনি অনেক ট্রেড সিক্রেট দিয়ে দেন) তাহলেও সেটার বেনিফিট নিতে পারবে খুব অল্প কিছু কোম্পানি এবং সেই বেনিফিট নিতেও লাগবে ২/৩ বছর। ইন্ডিয়ার সেরাম ইনস্টিটিউট যে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন বানাচ্ছে, তার কারণ অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন যারা ডেভেলপ করেছে, তারা সেরাম ইন্সটিউটের সঙ্গে কোলাবরেশানে গেছে, মানে হাতে কলমে শিখিয়েছে, ডিক্টেট করেছে এবং মেথড ট্রান্সফার করেছে। শুধু পেটেন্ট শেয়ার করলে আগামী বছরেও আপনারা ভ্যাকসিন পেতেন না। আমি জানি না বাংলাদেশে কয়জন মানুষ একচুয়ালি একটা পেটেন্টের ডকুমেন্ট পড়েছেন। পেটেন্টের ডকুমেন্ট পড়াটা ইটসেফ ইজ আ স্কিল। ওটা যিনি লিখছেন তিনি আপনার বোঝার সুবিধার জন্য লিখছেন না, তিনি লিখছেন কতো অল্প ইনফরমেশন দিয়ে সরকার থেকে ইন্টেলেকচুয়াল রাইট আদায় করা যায়। ইনফ্যাক্ট আপনি যদি আগে থেকে না জানেন, পেটেন্ট এপ্লিকেশান কীভাবে সার্চ করতে হয়, আপনি এই সামান্য কাজটাই করতে পারবেন না। চেষ্টা করে দেখতে পারবেন। মানে ধরেন যে আপনি ব্লেন্ডার আবিষ্কার করছেন এবং এখন ব্লেন্ডারের পেটেন্ট করতে চান। আপনি পেটেন্ট এপ্লিকেশনে কি ব্লেন্ডার শব্দটা উল্লেখ করবেন? কোনোদিনও না। আপনি হয়তো লিখবেন, ‘এ সিলিন্ড্রিকাল ডিভাইস টু পালভারাইস এডিবল কন্টেন্ট’। এখন আপনি যদি এমেরিকান পেটেন্টের ডেটাবেইজ সার্চ করতে চান, ব্লেন্ডার নিয়ে জানতে চান - কী লিখে সার্চ করবেন বলেন? পেটেন্ট এপ্লিকেশানের ল্যাঙ্গুয়েজ হোলো বোরখার মতন, বিকিনির মতো নয়।
এইটা একটা খুবই ভুল ধারণা যে পেটেন্ট উন্মুক্ত করে দিলেই আপনি সেটা রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করে জিনিসটা কী বের করে ফেলতে পারবেন। কিছু কোম্পানি পারবে- নো ডাউট। কিন্তু ফাইজারের ভ্যাকসিনের আদ্যোপান্তও যদি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফার্মা কোম্পানিকে দিয়ে দেওয়া হয় সে কিচ্ছু করতে পারবে না- এবসোলিউটলি নাথিং। তাছাড়া এমেরিকান পেটেন্ট কি বাংলাদেশে এনফোর্সেবল? এর সিম্পল উত্তর হলো, না এনফোর্সেবল না (১০ বছর আগে ছিলো না, এই মুহূর্তে অবস্থা কী বলতে পারবো না)।
কে আপনাকে মানা করেছে ওটা নকল করতে। আমি নিজে একটা ক্যান্সার ভ্যাকসিন ডেভেলাপ করেছিলাম। আমার ভ্যাকসিন এবং মডার্নার ভ্যাকসিনের বেসিক প্রিন্সিপাল একই। আমি লিপিড ন্যানোপার্টিকেলের মধ্যে ভরেছিলাম, প্লাজমিড ডিএনএ আর মডার্নার ভ্যাকসিনে আছে লিপিড ন্যানোপার্টিকেলের মধ্যে এমআরএনএ। পৃথিবীতে কম না হলেও কয়েকশ ল্যাব আছে, যারা লিপিড ন্যানোপার্টিকেলের মধ্যে এমআরএনএ ভরে ভ্যাকসিন ডেভেলপ করতে সক্ষম এবং আমি বাজি ধরে বলতে পারিÑ সেগুলো কমবেশি কাজ করবে। কিন্তু ল্যাব থেকে নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে ভ্যাকসিন বানানো খুবই খুবই দুরূহ কাজ। পেটেন্ট হলো এক্ষেত্রে আপনার লাস্ট দুশ্চিন্তা। আর তাছাড়া যে দামে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন বাজারে আসছে, সেই দামে চাইনিজরাও কম্পেয়ারেবল এফিকেসির ভ্যাকসিন বাজারে আনতে পারবে কি না সন্দেহ। ভ্যাকসিন ডেভেলপ করার এসব খুয়াবী পুলাও চিন্তা বাদ দিয়ে বাংলাদেশের উচিত হবে দ্রুত ইন্ডিয়া, চায়না, রাশিয়া এবং এমেরিকার সাথে দেন-দরবার করা। ফেসবুক থেকে