কাকন রেজা: মুক্ত গণমাধ্যম দিবস নিয়ে লিখতে পারিনি, নিজস্ব কাজে দৌড়ের ওপর ছিলাম বলে। আর লেখারই কী আছে। দুদিন আগেই গণমাধ্যম নিয়ে লেখা গেলো, ‘আত্মহনন : যখন গণমাধ্যম নিজেই মুনিয়া’। যে দেশে গণমাধ্যম ক্রমাগত আত্মহনন করে, সে দেশের মুক্ত কিংবা বন্দী সবই সমান। কথায় কথায় সরকারের দোষ দিই। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কথা বলি। বিপরীতে আত্মসমালোচনা করি না। করি কি? মুনিয়ার ব্যাপারটি আবার বলি। পুলিশ যেখানে তথ্য দিয়েছে। সেখানে নিশ্চয়ই সরকার বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সুতরাং এই খবরটি ব্ল্যাক-আউট করলো কারা। মুক্ত খবরকে বন্দী করলো কোন সে জনেরা। করেছে গণমাধ্যমের মানুষেরাই। সুতরাং এসব মানুষ থাকাকালীন গণমাধ্যম মুক্ত হবে কীভাবে! এদের লজ্জা-ঘেন্নাও নেই! এরাই আবার গণমাধ্যম নিয়ে বড় বড় কথা বলে।
সাগর-রুনি, ফাগুন রেজা- নিহত এসব সাংবাদিকদের বিষয়ে এদের তো দেখা হলো। এদের চরিত্র জানা হালো। সুতরাং এই দেশে মুক্ত গণমাধ্যম বিষয়ে কথা বলা বৃথা। সরকারের দমন-পীড়ন আর ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের চেয়ে বড় সমস্যা হলো এ দেশের গণমাধ্যমের কিছু মানুষ। স্বার্থান্ধ মানুষ। দলান্ধ মানুষ। ডগমাটিক মানুষ। এরা লাশও ভাগ করে। এটা আমার পক্ষের, ওটা তার পক্ষের। তারপর বিপক্ষের লাশের চরিত্র বিশ্লেষণ চলে। সে যে কতোটা খারাপ ছিলো, তার মৃত্যুটা একেবারে অকারণ নয়, এসব প্রমাণে উঠেপড়ে লেগে যায়। যেমন মুনিয়ার লাশ নিয়ে চলছে কাটাছেঁড়া। মর্গ থেকে বের হয়েও রেহাই পায়নি মেয়েটি। শরীরতো কেটেছেই এখন তার চরিত্র কাটা চলছে। কতোটা লজ্জাহীন হতে পারো কোনো কোনো গণমাধ্যমের মানুষ। একটা তরুণীকে নষ্টা প্রমাণিত করতে যাদের মরিয়া হয়ে উঠতে হয়। নিজেদের চরিত্রটাকেই বাজিতে লাগাতে হয়!
আবার বিপরীত মেরুর যারা। যারা বিচার চাইছেন, তাদের কাউকে কাউকে নিয়েও সংশয় রয়েছে। হয়তো ব্যবসায়িক বিরোধের সুযোগ নিতে চাইছেন তারা। প্রতিপক্ষকে বাটে পাওয়া গেছে বলে। তারা চরম দরদী সেজেছেন মুনিয়ার। অথচ এমন অনেক ঘটনাতেই তারা ছিলেন চুপচাপ। এখন মুনিয়া হয়ে উঠেছে তাদের প্রতিপক্ষ দমনের অস্ত্র। আবার কেউ কেউ সুযোগ নিচ্ছেন। দুষ্টু লোকেরা বলেন, দাম চড়াচ্ছেন। মুনিয়া হয়ে উঠেছে বানরের পিঠা ভাগের পিঠা। যেমন কারো কারো কাছে আমাদের দেশটা। পিঠার মতন ভাগ করে খেতে চায় সবাই। এক অর্থে আমাদের দেশটাই এখন মুনিয়া। যে যার স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত। এমন দেশে মুক্ত বা বন্ধ বলে কিছু নেই। কবন্ধ দেহের মুক্ত চিন্তার বিষয় বাতুলতা মাত্র।
পুনশ্চ : ক্রমাবনতি হচ্ছে আমাদের প্রেস ফ্রিডম সূচকে। প্রতিবছর এক ধাপ করে পেছনে যাচ্ছি আমরা। ভূতের পায়ের মতন, উল্টো পথে চলা। প্রেস ফ্রিডমের সূচকের উন্নতি করতে হলে আগে প্রেসকে ঠিক হতে হবে। এর সাথে যুক্ত মানুষদের নিজেদের মুক্ত হবে নিজের ভীরুতা, লোভ আর ডগমাটিজম থেকে। লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।