আকাশ আহম্মেদ:[২] উপজেলায় মুসলিম ধর্মের ছেলের সাথে প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করার অপরাধে এক কিশোরীকে শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তার পরিবারের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের পাল পাড়া এলাকায়।
[৩] এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী সুত্রে জানা যায়, ওই এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী এক কিশোরীর(১৭) সাথে প্রতিবেশী ইসলাম ধর্মাবলম্বী আবু সাঈদের(২৩) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আবু সাঈদ একই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জলিল শেখের ছেলে। গত ৬ মাস আগে আবু সাঈদের সাথে ঐ কিশোরী বাড়ী থেকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে রাজৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল।
[৪] অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজৈর থানা পুলিশ তাদেরকে ৪ দিন পর উদ্ধার করে। পরে কিশোরীকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর এবং আবু সাঈদকে কারাগারে প্রেরণ করেছিল। সেই ঘটনায় পারিবারিক ও সামাজিক সমঝোতার কারনে কিশোরীর বাবা আবু সাঈদকে জামিনে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করেছিল। এরপর কিশোরীর বাবা তাকে (কিশোরীকে) সিলেটে নিয়ে যায়।
[৫] কিন্তু সেখান থেকেও দুজনে আবার পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা সিলেট থানায় মামলা দায়ের করেছিল। পালানোর প্রায় ১ মাস পর ঢাকার আশুলিয়া থেকে পুলিশ তাদেরকে আটক করে নিয়ে আসে। কিশোরীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়ায় তাকে পরিবারের হাতে এবং আবু সাঈদকে আবার কারাগারে প্রেরণ করে। এখন পর্যন্ত সে কারাগারেই রয়েছে। এরই মধ্যে ওই কিশোরী একাই আবার আবু সাঈদের বাড়ি চলে যায়।
[৬] পরে স্বজনরা তাকে নিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার রাজেশ্বরদী গ্রামে আবু সাঈদের বোনের বাড়ীতে রেখে একটি মহিলা মাদ্রসায় ভর্তি করে দেয়। কিশোরীর পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ আবার তাকে উদ্ধার করে বাড়ী পৌঁছে দেয়। বাড়ীতে আনার পর প্রায় ১০ দিন তাকে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে এবং শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন চালায় পরিবারের সদস্যরা।
[৭] পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে পরিবারের সদস্যরা তার পায়ের শিকল খুলে দিলেও বর্তমানে তাকে একা একটা রুমের মধ্যে তালাবদ্ধ করে রেখেছে।নির্যাতিতা কিশোরী জানায়, আবু সাঈদের সাথে আমার প্রায় সাড়ে তিন বছরের সম্পর্ক। আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে তাকে বিয়ে করেছি। আমাকে পরিবারের লোকজন ধরে এনে দুই পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে এবং শারিরীকভাবে নির্যাতন করে। আমি তার কাছে জেতে চাই।
[৮] কিশোরীর মা জানায়, মান-সম্মানের ভয়ে আমরা মেয়েকে শাসনে রেখেছি। এ ঘটনায় সমাজ আমাদের এক ঘরে করে রেখেছে। লজ্জায় মুখ দেখাতে পারিনা।আবু সাঈদের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জলিল শেখ জানান, আমার ছেলের মুক্তি চাই এবং যাতে নিরাপদে থাকতে পারে সে ব্যবস্থা করা দরকার।
[৯] রাজৈর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার কনা জানান, একজন নাবালিকা নির্যাতন মানবাধিকার লংঘনের সামিল। যদি এরকম ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান, রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সমাজ সেবা কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলো। মেয়ের সাথে কথা বলেছে। তারা আমাকে জানিয়েছে মেয়ে নাকি তার বাবার বাড়িতেই থাকার জন্য ইচ্ছে প্রসন্ন করেছে।সম্পাদনা:অনন্যা আফরিন