ডা. মালেকা বানু: শ্রমিকদের শ্রমে-ঘামেই স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এই পর্যায়ে পৌঁচেছে দেশ। বাংলাদেশে অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল হয়েছে এবং মধ্যমআয়ের দেশের কাতারে পৌঁছে গেছে। আমাদের শ্রমিকদের মেধা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই এমনটি সম্ভব হয়েছে। কিন্তু সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য নিশ্চয়তা, বাসস্থান ও জীবনে বেঁচে থাকার ন্যূনতম বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারিনি। সেই জায়গায় আমাদের বড় ধরনের একটি ঘাটতি রয়ে গেছে। শ্রমিকদের একটি বিরাট অংশ নারী। সেই নারী শ্রমিকরা গার্মেন্টস, প্রবাসী আয়, অনুষ্ঠানিক খাত ও কৃষিতেসহ সব জায়গায় কিন্তু নারী শ্রমিকরা একটা বড় অবদান রাখছে। সেই অনুসারে নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে পারিনি। তার প্রাপ্য মজুরি নিশ্চিত করতে পারিনি এবং মজুরি বৈষম্য দূর করতে পারিনি।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে, সেখানে শ্রমিকদের অবদান অনেক কিন্তু শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি ও অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। এখনো মজুরির জন্য শ্রমিকদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। কারণে-অকারণে শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। ন্যায্য পাওনা দাবি করা হলে তাদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। এখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা দিতে চাচ্ছে না। আমরা জানি অনেক কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পাটকল বন্ধ হয়ে গেলো। সবকিছু মিলিয়ে আমরা বলতে পারি পঞ্চাশ বছরে শ্রমিকদের অবস্থা আমরা সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারিনি।
নারীর জন্য কর্মসহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। নারীর প্রতি মজুরি বৈষম্য দূর হবে। এটা একটি বড় ধরনের সমস্যা। এটি একটা অপরাধের পর্যায়ে পরে। অনানুষ্ঠানিক খাতে এখন পর্যন্ত মজুরি বৈষম্য রয়ে গেছে। নারীরা গার্মেন্টস শিল্পে ও অন্যান্য যে সমস্ত জায়গায় কাজ করে তাদের কাজের কোনো নিশ্চয়তা নেই। নারীর জমির মালিকানা নেই বলে একজন কৃষক হিসেবে তার যে অধিকার সেটা সে পাচ্ছে না। কৃষকদের সরকার যে সুযোগ-সুবিধা দেয় সেটা নারীরা পাচ্ছে না। বিভিন্ন সেক্টরে নারীর নিরাপত্তা, যৌন সহিংসতা, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ, টয়েলেটের ব্যবস্থা, পুষ্টির ব্যবস্থা, বিনোদন ও ডেয়ার সেন্টাররের সুবিধা এখনও আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। একটি চরম দুরবস্থার মধ্যে নারীরা কাজ করে। আমাদের দেশকে তারা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, আমাদের দেশের জন্য তারা পরিশ্রম করছে কিন্তু তারা নিজেরা বঞ্চিত হচ্ছে। নারী শ্রমিকদের জন্য আবাসন ও যাতায়াতের ব্যবস্থা অতি জরুরি। শ্রমিকদের বেঁচে থাকার জন্য যে ন্যূনতম মজুরি সেটা দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবছর ন্যূনতম মজুরি নিয়ে একটি তাল-বাহানা হয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি মালিকপক্ষ মুনাফা করলেও শ্রমিকদের স্বার্থের বিষয়টি খেয়াল করছে না। প্রবাসে যারা আছে এবং অনানুষ্ঠানিক খাতে যারা কাজ করছে সব জায়গাই অনেক বছর নজর দেওয়া দরকার। পরিচিতি : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ । সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমিরুল ইসলাম