মাসুদ আলম: [২] গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে কলেজ ছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা সেই প্রশ্ন উঠেছে।
[৩] তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়াও পারিপার্শ্বিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করছেন। বাসা থেকে ফুট প্রিন্টসহ সব ধরনের আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। মুনিয়া আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে বিষয়টি ক্লিয়ার হতে কিছু সময় লাগবে। মুনিয়া যে ফ্ল্যাটে থাকতো সেই বাসার সবগুলো সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে। ফ্ল্যাট থেকে সর্বশেষ কে বের হয়েছে কিংবা ঘটনার দিন ওই বাসায় কারা গিয়েছিল বা বের হয়েছে তা যাচাই করা হচ্ছে। এছাড়া মুনিয়া ও সন্দেহভাজনদের কলরেকর্ডও পরীক্ষা করা হচ্ছে। ঘটনার সময় আনভীর কোথায় ছিলেন তা জানার চেষ্টা চলছে।
[৪] পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, মামলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হবে ডায়েরিগুলো। ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ ছয়টি ডায়েরি উদ্ধার করেছে। ঘটনার শিকার নারীকে হতাশা গ্রাস করেছিলো, তিনি মারাত্মক মনঃকষ্টে ছিলেন। ডায়েরির পাতায় পাতায় মানসিক বিপর্যস্ততার প্রমাণ আছে। মানসিক বিপর্যয়ের মুখেই তাকে হয়তো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সম্পর্কের সামাজিক স্বীকৃতি, দাম্পত্য জীবন নিয়ে তার প্রত্যাশা, প্রতিবন্ধকতা, তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব ও পারিবারিক সমস্যার কথা লিখে গেছেন ভুক্তভোগী নারী । এই মামলা প্রতিষ্ঠায় ডায়েরি আদালতে জরুরি হবে। এছাড়া ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ, ভিসেরা পরীক্ষাসহ সবকিছুই করা হচ্ছে। আত্মহত্যা করে থাকলে মেয়েটি কেন আত্মহত্যা করলো তার কারণও জানার চেষ্টা চলছে। আসামিকে আটকের চেষ্টা চলছে।
[৫] তিনি আরও বলেন, সুরতহাল ও ময়নাতদন্তে যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের প্রাথমিক ধারণা, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। শরীরের অন্য কোথাও জখম বা আঘাতের চিহ্ন ছিল না। ঝুলে থাকায় হাত-পা নীল হয়ে গিয়েছিল এবং কিছুটা ফুলে ছিল। পুলিশ ওই ফ্ল্যাটে সন্দেহজনক কোনো যাতায়াতের তথ্য পায়নি। তরুণী যেদিন আত্মহত্যা করেছেন, সেদিন বা তার আগের দিন আনভীর ওই বাসায় যাননি। তবে এর আগে পরপর দুই দিন তিনি ওই বাসায় যান এবং এ-সম্পর্কিত ফুটেজ পুলিশের কাছে আছে।
[৬] নিহতের বড় বোন নুসরাত জাহান বলেন, সোমবার সকাল ৯ টায় মুনিয়া আমাকে ফোন দিয়ে বলেন আমাকে আনভীর ধোঁকা দিছে, আমি অনেক বিপদে আছি, তুমি তাড়াতাড়ি ঢাকায় চলে আসো, আমাকে নিয়ে যাও। এরপর ১১টায় আবার ফোন দেয় মুনিয়া, সে বলেন, আপু তোমরা কোথায়? তোমরা তাড়াতাড়ি না আসলে অনেক বড় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমরা আসো। পরে ২টায় ব্যক্তিগত গাড়িতে কুমিল্লা থেকে বিকেল সোয়া ৪টায় মুনিয়ার গুলশানের ভাড়া বাসায় পৌঁছাই। দরজায় নক করে সাড়া না পেয়ে মিস্ত্রি ডেকে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে ফ্যানে সঙ্গে মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ দেখি। লাশটি ঝুলন্ত অবস্থায় থাকলেও তার পা দুটি হালকা বাঁকা হয়ে বিছানায় স্পর্শ করা ছিলো এবং বিছানা পরিপাটিভাবে গোছানো ছিলো। ওই বাসার তালাটি ছিল অটো। অর্থাৎ ভেতর ও বাইর যেদিক থেকে টান দেওয়া হোক না কেন, তা বন্ধ হয়ে যাবে। যেকোনো দিক থেকে দরজাটি খুলতে চাবির দরকার হবে। দরজায় দু’টি লক ছিলো। রুমের ভেতর একটি লকে চাবি ঝুলছিলো।
[৭] তিনি আরও বলেন, মুনিয়াকে আনভীর বলেছিলো তাকে বিয়ে করে বিদেশে স্থায়ী করবেন। মুনিয়া বিয়ের চাপ দেওয়াতে তাদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপের দিকে যেতে থাকে। ফোন রেকর্ডটিতে যে টাকার কথা হয়েছে এটি সম্পূর্ণ ভূয়া। আমার বোনের টাকার প্রতি কোন লোভ ছিলো না। আনভীরকে অনেক ভালোবাসতো কিন্তু আনভির ভালোবাসার অভিনয় করেছে। এর বড় প্রমান মুনিয়ার হাতে লেখা ডায়েরীগুলো। মুনিয়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো, তাহাজ্জুত পড়তো। আমার বোন আত্মহত্যা করেনি, তাকে হত্যা করা হয়। যদি সুইসাইড করেও থাকে তাহলে এমন ভাবে তাকে অপমান করা হইছে যে, সে সুইসাইড করতে বাধ্য হইছে।