ডেস্ক রিপোর্ট : রাষ্ট্রবিরোধী উস্কানি ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য এবং সহিংসতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা। এদের মধ্যে অন্তত ৩২ জন কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন আরো অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী। গ্রেফতার আতংকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে।
সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হওয়া হেফাজতের হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে আছেন নারীকাণ্ডে বিতর্কিত মাওলানা মামুনুল হক, আজীজুল হক ইসলামাবাদী, ইলিয়াস হামিদী, ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানী, লোকমান হোসেন আমিনী, শাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মুফতি বশির উল্লাহ, মাওলানা জুবায়ের, মাওলানা জালাল উদ্দিন ও জুনায়েদ আল হাবীব। এসব নেতাই হেফাজতের মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।
একের পর এক কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেফতারের ঘটনার মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে তবে কি হেফাজত আমির মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরীও গ্রেফতার হবেন নাকি এই যাত্রায় রক্ষা পাবেন?
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থার সংগে যোগাযোগ করে জানা গেছে, আপাতত জুনাইদ বাবুনগরীকে গ্রেফতারের সম্ভাবনা কম। তবে তিনিও নজরদারিতে রয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, বাবুনগরী অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। হেফাজতের আরো যেসব নেতাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে তাঁরা গ্রেফতার হলে তিনি জিম্মি পরিস্থিতিতে পড়ে যাবেন। ফলে তাঁকে গ্রেফতারের বিষয়ে সেভাবে ভাবছে না গোয়েন্দা পুলিশ।
গোয়েন্দা সংস্থার অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রবিরোধী কাজে উস্কানির অভিযোগে হেফাজতের ১৯৪ জন নেতার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন জুনাইদ বাবুনগরী। তবে আপাতত তাঁকে নজরদারিতে রেখে বাকিদের গ্রেফতারে জোর দিচ্ছেন গোয়েন্দা পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সূত্রটি আরও বলছে, জুনাইদ বাবুনগরীকে গ্রেফতারের মতো পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ এখনও হাতে আসেনি। তবে অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।
অন্য একটি গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ২০১৩ সালে হেফাজতকাণ্ডে দায়েরকৃত মামলার আসামি জুনাইদ বাবুনগরী। সম্প্রতি দায়েরকৃত মামলাগুলোতেও তাঁকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের যেসব অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে আনা হচ্ছে, সেগুলোর শক্ত কোনো প্রমাণ এখনও সংগ্রহে করতে পারেননি তদন্তকারীরা।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি হেফাজতের মামুনুল হকসহ যেসব নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের জবানবন্দিতে রাষ্ট্রবিরোধী যেসব কর্মকাণ্ডের তথ্য উঠে এসেছে তাতে বাবুনগরীর জড়িত থাকার বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলছে না। তবু তদন্ত অব্যাহত রেখেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, মূলতঃ বর্তমানে যেসব হেফাজত নেতা গ্রেফতার হয়েছেন এবং যাদের বাবুনগরীপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাঁদের অনেকেই বাবুনগরী'র কমান্ড মানতেন না। বিশেষ করে মামুনুল হক বাবুনগরী'র সিদ্ধান্ত সব সময় উপেক্ষা করতেন। সম্প্রতি জবানবন্দিতেও তিনি এসব বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন। একইসংগে অন্য যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাঁদের জবানবন্দিতেও এটি স্পষ্ট নয় যে, বাবুনগরী নাশকতার কোনো নির্দেশনা বা উসকানি দিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, জুনাইদ বাবুনগরী'র বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধেও আমাদের তদন্ত অব্যাহত আছে। তদন্তে নাশকতা কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রমাণ মিললে অবশ্যই তাঁকেও গ্রেফতার করা হবে। তিনি আমাদের নজরদারির বাইরে নন।