ইমতিয়াজ মাহমুদ: দিল্লির একটি বড়সড় হাসপাতালের প্রধান, ষাটোর্ধ শোক দীর্ঘদেহী একজন ডাক্তার- মুখ ঢাকা মাস্কের বাইরে চেহারার যতোটুকু দেখা যায় তার প্রতিটি কুঞ্চনে অভিজ্ঞতার চিহ্ন- এক জীবনে না জানি কতো কতো জীবন বাঁচিয়েছেন। সফেদ কেশরাশি ভিজে আছে ঘামে, চশমার নিচে চোখ থেকে জল ঝরছে আর ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলছেন, আর একঘণ্টা, এর মধ্যে যদি অক্সিজেন না আসে আমার রোগীরা একে একে মারা যাবে, আমার রোগীরা মারা যাবে। আমি দিল্লি সরকারকে বলেছি, কেন্দ্র সরকারকে বলেছি, তারাও বা কী করবে জানি না। আমি ভদ্রলোকের কান্না দেখি টেলিভিশনে। ভয়ে আমার হাত পা শীতল হয়ে আসে। দিল্লি হোক, রিও ডি জেনিরো, নিউ ইয়র্ক বা যেখানেই হোক- সাদা কালো বাদামি বা হলুদ, মরছে মানুষ। মানুষ। আমার এই প্রিয় নগর- ঢাকা, এখানেও অবস্থা যে খুব ভালো সেকথা তো বলতে পারছি না। প্রিয় বন্ধুরা, আর কটা দিন কি আমরা স্বাস্থ্য বিধি মানতে পারবো না? লকডাউনের কোনো নমুনা নেই চারপাশে কোথাও। ফ্যাক্টরিগুলো খোলা। পথে ট্র্যাফিক জ্যাম।
সবাই বলছে, সবকিছু খোলা আমি কেন ঘরে বসে থাকবো। অকাট্য যুক্তি। কি জবাব আছে এই কথার। আছে হয়তো- কিন্তু কাকে কি বলবেন। আমি একজন উকিল মানুষ, চিকিৎসাবিদ্যা জানি না, মহামারী বা অতিমারি এইসব বিদ্যা জানিনা, ভাইরাসতত্ব জানি না। খবরের কাগজ পড়া বিদ্যা নিয়ে কি কথা বলবো? কাজ কর্ম বন্ধ, ঘরে বসে আছি- একটা উত্তম ভদকা কেনার টাকাও নেই পকেটে। (না সেই জিনিস কিনতে চাচ্ছি না, অবস্থার ভয়াবহতা বুঝাতে বলা আরকি) ভাগ্যিস আমার স্ত্রী আমাকে ত্যাগ করে যাননি এখনো, দুবেলা খেয়ে পড়ে কাটিয়ে দিচ্ছি। কোভিড সংক্রান্ত বিজ্ঞান জানি বা না জানি,এই কথা ঠিকই বুঝতে পারছি- ভারতের ভয়াবহতা সে তো, ভারতেই আটকে থাকবে না, আমাদের কাছেও আসবে। কী করছি আমরা? ওই ভদ্রলোকের কান্নাভেজা কণ্ঠ মনে পড়ে, একঘণ্টার মধ্যে অক্সিজেন না এলে তার রোগীরা একজন একজন করে মারা যাবে। তিনি কি অক্সিজেন পেলেন? ঈষৎ সম্পাদিত। ফেসবুক থেকে