ড. শোয়েব সাঈদ: যেসব দেশ লকডাউন সঠিকভাবে কার্যকর করতে পারছে তাদের ক্ষেত্রে লকডাউন সফল। বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন রকম, লকডাউনে শিথিলতা স্পষ্ট। তাছাড়া ১-২ সপ্তাহের লকডাউনে পরিস্থিতির উল্ল্যেখযোগ্য পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। লকডাউনের ফলে বাংলাদেশে বিপুল জনসংখ্যা স্থানান্তর অর্থাৎ গ্রামে গঞ্জে চলে যাওয়া বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ।
যে দেশের দুই কোটি মানুষ দিনে এনে দিনে খায় তাদের দীর্ঘ মেয়াদী লকডাউন মানতে বাধ্য করা অসম্ভব। লকডাউনের পরিবর্তে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে জনগণকে বাধ্য করার মধ্যে কোভিড ব্যবস্থাপনার সফলতা নির্ভর করবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। অনেক দেশে সেনাবাহিনী কোভিড নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। সঠিকভাবে মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা আর সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া/ স্যানিটাইজার ব্যবহারের সরকারে উচিত যথা সম্ভব বল প্রয়োগের কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। স্বাস্থ্যবিধিতে করোনা নিয়ন্ত্রণের সফল উদাহরণ হচ্ছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া।
আমাদের ভয় ছিল অতি সংক্রমক ইউকে ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে কিন্তু দেখা গেলো আমাদের ধারণার বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টের B484কে মিউটেশনটির ভ্যাকসিনকে ফাঁকি দেবার কারণে বেশি জটিলতা তৈরি হচ্ছে, ভ্যাকসিন নিয়েও সংক্রমিত হতে হচ্ছে। এই ফাঁকি দেবার ঘটনা শুধু এসট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনে নয়, কমবেশি সব ভ্যাকসিনেই হচ্ছে। তবে ভ্যাকসিনকে ফাঁকি দেওয়া সম্পূর্ণভাবে সম্ভব নয় বিধায় ভ্যাকসিন নেওয়া অনেক বেশী নিরাপদ। তাছাড়া ইউকে ভ্যারিয়েন্ট সহ উহান থেকে সৃষ্ট করোনার ভাইরাসের আসল রূপটি কিন্তু ভ্যাকসিনে ধরাসায়ী হচ্ছে। কানাডার তৃতীয় ঢেউ পরিস্থিতি খুব খারাপ অবস্থায় আছে, ভ্যারিয়েন্ট আর ভ্যাকসিনের লড়াই নিয়ে সারা বিশ্বই উদ্বিগ্ন। এই ক্ষেত্রে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ামক। কানাডার ২৬ শতাংশ জনসংখ্যা ভ্যাকসিনের আওতায় এসেছে সেখানে ৩.৫ শতাংশ নিয়ে বাংলাদেশকে অনেকদূর যেতে হবে।
ভাল খবর হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকায় ৯৫ শতাংশ ইনফেকশন কিন্তু এই দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্যারিয়েন্ট দিয়ে। তারপরেও দক্ষিণ আফ্রিকার সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতির গ্রাফিক্যাল উপস্থাপনা দেখলে দেখবেন বিগত কয়েক মাসের তুলনায় কেমন করে গ্রাফ ক্রমান্বয়ে বেশ নীচে নেমে আসছে, পরিস্থিতি অনেক নিয়ন্ত্রণে, সংক্রমণ দৈনিক হাজারের মত, আর মৃত্যু বাংলাদেশের চেয়ে কম। ভ্যারিয়েন্ট আর ভ্যাকসিনের এই লড়াইয়ের মধ্যে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই বাংলাদেশের সামনে পরিস্থিতি নিশ্চিতভাবে ভাল হবার আসল উপায়, তার সাথে অব্যাহত টিকাদান ভীষণ সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
লেখক : কলামিস্ট, অনুজীব বিজ্ঞানী, কানাডার একটি বহুজাতিক কর্পোরেটে ডিরেক্টর পদে কর্মরত
আপনার মতামত লিখুন :