ইসমাঈল ইমু : [২] করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। চারিদিকে লকডাউন। এর মধ্যেই রাতের আঁধারে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নিজেদের সক্রিয়তা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম সচল রাখতে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার সাটিয়ে দিচ্ছে এই সংগঠনের নেতামকর্মীরা। দেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের লক্ষে ননা উস্কানিমূলক স্লোগান সমৃদ্ধ এসব পোস্টার দেখে অনেকেই হতবাক হয়েছেন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া তৎপরতার মধ্যে তারা কিভাবে এসব কান্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
[৩] গত ৪ মার্চ সূত্রাপুর থানা এলাকায় হিযবুত তাহরীর সদস্য সন্দেহে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দুই ছাত্রসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন, জবির ইসলাম শিক্ষা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আতিকুর রহমান ও মাকসুদুর রহমান এবং সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্র এস এম সজিব। তাদের কাছ থেকে সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর লেখা পাঁচটি বই, মাসিক রিপোর্টের একটি বই, বার্ষিক রিপোর্টের একটি বই, স্পাইরাল বাইন্ডিং করা একটি বই ও একটি সাদা প্যাড জব্দ করা হয়।
[৪] সূত্র জানায়, ২০০০ সালে হিযবুত তাহরীর ‘লিবারেটেড ইয়ুথ’ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গোপনে কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে সংগঠনটি প্রকাশ্যে তৎপরতা চালায়। পরে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি এ জঙ্গি সংগঠনটি আত্মগোপনে যায়। আর ২০০৯ সালের ২০ মার্চ ছাত্র মুক্তির ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় পুনরায় বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে। হিযবুত তাহরীরের কেন্দ্রীয় নেতারা ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থিত হন।
[৫] ওই সম্মেলনে হিযবুত তাহরীরসহ সরকারবিরোধী সংগঠনগুলোর ওপর গ্রেপ্তার ও দমন পীড়নসহ বিভিন্ন নির্যাতনের ডকুমেন্টারি ফুটেজ এক প্রদর্শনীতে উপস্থাপনের চেষ্টা চালায়। ২০০৯ সালের অক্টোবরে মতিঝিলে তৎকালীন সংসদ সদস্য ও বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপসের ওপর বোমা হামলা করা হয়। তখন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হিযবুত তাহরীরকে সন্দেহের তালিকায় রাখে। পরে ২২ অক্টোবরে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সংগঠনটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
[৬] হিযবুত তাহরীর পাকিস্তানসহ পৃথিবীর ১৮টি দেশে নিষিদ্ধ। দেশে হিযবুত তাহরীরের ১০টি পাঠচক্র রয়েছে। পাঠচক্রে পাকিস্তান, প্যালেস্টাইন, ইরাক, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের যুদ্ধ, মুসলমানদের ওপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ভিডিও ফুটেজ, স্থির চিত্র ও বিভিন্ন পুস্তিকার মাধম্যে মেধাবী শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ছাত্র মুক্তির পাঠচক্রের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদের মগজ ধোলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। হিযবুত তাহরীর কর্মী ও সমর্থকরা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা বিনষ্ট করাসহ দেশকে অস্থিতিশীল করে জনমনে ভীতি সঞ্চার করার উদ্দেশ্যে নাশকতামূলক কার্যক্রমের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা মনে করছে।