সুজন কৈরী : করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে শুরু থেকেই সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে মাঠে রয়েছে পুলিশ।
বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের সময় পুলিশের কয়েকটি ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা হয়। এসব বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) পুলিশের কাজে সার্বিক সহায়তার জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানানোর পশাপাশি কোনও ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলেছে। জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেছে ডিএমপি।
বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগ জানিয়েছে, করোনার বিস্তার রোধে একদিকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যদিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নাগরিকদের অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা ও জরুরী পরিসেবাসহ জরুরী ও অত্যাবশকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং অতি জরুরি প্রয়োজনে নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া বিনা কারণে বা উপযুক্ত পাস ছাড়া কোনও ব্যক্তি যাতে রাস্তায় বের হতে না পারেন তা নিশ্চিতে ২৪ ঘন্টা ডিএমপি’র সদস্যরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করছেন। বুধ ও বৃহস্পতিবার সাধারণ মানুষের সহযোগিতা নিয়ে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের কাজ অনেকটা সফলতার সাথেই সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। যদিও বিনা কারণে রাস্তায় বের হওয়া ব্যক্তি এবং বিভিন্ন পরিসেবায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা কষ্টকর কাজ। কেননা কিছু কিছু ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া গাড়ী নিয়ে বের হওয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে যেয়ে পুলিশকে সারাদিনই গলদঘর্ম হতে হয়েছে।
কিছু মিডিয়ায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু কিছু ব্যক্তিবর্গ পুলিশের চেকপোষ্টে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। বর্ণিত ঘটনার একটিতে দেখা যায়, কাওরান বাজারে পুলিশ একটি প্রাইভেট কারের ড্রাইভারকে বাইরে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি গাড়ীটি জনৈক চিকিৎসকের বলে জানান। কিন্তু চিকিৎসক গাড়ীতে উপস্থিত ছিলেন না। ড্রাইভার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হওয়ায় গাড়ীর কাগজপত্র দেখাতে বলা হয়। কিন্তু গাড়ীর কাগজপত্রে বর্ণিত গাড়ীর মালিকের সাথে চিকিৎসকের সামঞ্জস্য না থাকায় ড্রাইভারের বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।
অন্যদিকে জাহাঙ্গীর গেট এলাকার এক ঘটনায় একজন নাগরিক নিজ বাসা থেকে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য বের হলে কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় স্মরণীসহ বেশ কয়েকটি চেকপোষ্টের মুখোমুখি হন। এতে স্বভাবতই হাসপাতালে পৌঁছাতে তার দেরি হচ্ছিল। জাহাঙ্গীর গেট সংলগ্ন চেকপোষ্টে তিনি ৩০ সেকেন্ডের মত আটকে ছিলেন বলে জানান। যাতায়াতের সময় যারা আইডি কার্ড প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদেরকেই যাচাই বাছাই করা হয়েছে যেটি চলমান বিধিনিষেধের প্রেক্ষিতে যৌক্তিক একটি বিষয়।
বিজ্ঞপ্তিতে ডিএমপি জানিয়েছে, কোভিড মহামারীর সংক্রমন নিয়ন্ত্রণে সরকার নির্দেশিত বিধিনিষেধ মেনে চলা সকল নাগরিকের সমান দায়িত্ব। এ সমস্ত বিধি নিষেধ বাস্তবায়নে পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনে ডিএমপি অঙ্গীকারবদ্ধ। কোনও পুলিশ সদস্য যাতে কোনো অপেশাদার আচরণ না করেন, সে জন্য সর্বদা তাদের আচার আচরণ মনিটর করা হয়ে থাকে এবং যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনে তাদের উদ্বুদ্ধ করা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজ চলছে। পুলিশের কাজে সার্বিক সহায়তা প্রদানের জন্য নগরবাসীদের অনুরোধ করা হচ্ছে। কোনও ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে