আতাউর অপু : দ্বিতীয় দফায় লকডাউন শুরুর প্রথমদিন রাজধানীতে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে পুলিশের হয়রানির সাথে গুনতে হয়েছে জরিমানা । কর্তব্যরত প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড দেখানোর পরও কর্মস্থলে যেতে পুলিশের বাধা ও ভোগান্তিতে পড়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন চিকিৎসক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নিজস্ব গ্রুপগুলোতে তারা এ নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন।
কৃষ্ণা হালদার নামের এক চিকিৎসক লিখেছেন, ‘গত রাতে কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে আমার নাইট শিফটে ডিউটি ছিল। সকালে আমার ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার পিক-আপ করার সময় কারওয়ান বাজার সিগন্যালে ড্রাইভার আমার আইডি কার্ড দেখানোর পরও পুলিশ মামলা করেছে।’ অভিযোগ করে তিনি আরও লেখেন, ‘পুলিশ তাকে ফাইন (জরিমানা) করেছে, সব কাগজপত্র নিয়ে গেছে। পরে তিনি পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও পাননি। বারবার চেষ্টা করেও তিনি মুভমেন্ট পাস বের করতে পারেননি বলেও উল্লেখ করেছেন।’ ঢাকা পোস্ট
এফডিআরএস এর যুগ্ম মহাসচিব রাহাত আনোয়ার চৌধুরী জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা সম্মুখসারিতে থেকে কাজ করছেন। প্রজ্ঞাপনে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। “আমরা তো সাধে রাস্তায় বের হই না। আমরা তো চাকরি করি, হাসপাতালে না গেলে চাকরি থাকবে না। সরকার কি মেনে নেবে আমি হাসপাতালে না গেলে? যদি ঘোরাঘুরি করতে যায় তাহলে আটকালে ঠিক আছে। কিন্তু আমি কাজ করতে যাচ্ছি। আমার কার্ড দেখাচ্ছি। এরপরও হয়রানি করা হয় তাহলে তো দুঃখজনক। বিডিনিউজ
“আমার ধারণা অতি উৎসাহী কেউ কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমাদের এক চিকিৎসককে জাহাঙ্গীর গেট এলাকায় গালাগালি করা হয়েছে,” বলেন রাহাত আনোয়ার। রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হওয়ায় স্কয়ার হাসপাতালের এক চিকিৎসককে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বিডিনিউজ
স্কয়ার হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে কর্মরত চিকিৎসক নাজমুল হক জানান, সপ্তাহে তিনদিন তিনি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন। তার বাবাও করোনাভাইরাস আক্রান্ত। এ কারণে গত কয়েকদিন গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ থেকে অফিস করছেন। বুধবারও নিজের গাড়িতে করে অফিসে যাচ্ছিলেন। “হাই কোর্টের সামনে চেকপোস্টে আমাকে পুলিশ সদস্যরা আটকায়। আমি জানি চিকিৎসকরা চলাচল করতে পারবেন। এ কারণে আমার আইডি কার্ড দেখাই। তারপরও আমার গাড়ির নামে ৩ হাজার টাকা জরিমানা লিখে দেয়।” বিডিনিউজ
অন্যদিকে নাজমুল ইসলাম আরও বলেন, সন্ধ্যার আগে একজন পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে ফোন করেছিলেন। তিনিই জরিমানা হিসেবে আদায় করা টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানান। বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালের কাজ সেরে ফেরার পথে তিনি টাকা ফেরত নেবেন। প্রথম আলো
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আমিনুল ইসলাম। তার বাসা গ্রিন রোডে। মর্নিং শিফটে ডিউটি ছিল, নয়টা থেকে। ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমাহলের সামনে ব্যারিকেড ছিল। তিনি বলেন, তারা বললো ‘যেতে পারবেন না, ঘুরে যান’। রাজাবাজার দিয়ে ঘুরে গেলাম। কিন্তু জাহাঙ্গীর গেটে পুলিশ আটকালে পরিচয় দিই। বলি যে ৯টা থেকে ডিউটি, হাসপাতালের পরিচয়পত্র দেখাই। কিন্তু দায়িত্বরত পুলিশ বলে, ‘কসাই গিরি ফলাস, তোর কসাইগিরি বাইর করতেছি, লাথি দিয়া পা ভাইঙ্গা দিমু’। নাম কী ছিল তার জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আসলে একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না এর জন্য। অভিজ্ঞতাও নেই। তবে উনি খুব ঊর্ধ্বতন কেউ ছিলেন না। বাংলাট্রিবিউন
এই হাসপাতালের আরেক চিকিৎসক কৃষ্ণা হালদার। চিকিৎসকদের বেশকিছু ব্যক্তিগত গ্রুপের একটিতে তিনি লিখেছেন, গতরাতে হাসপাতালে নাইট শিফটের ডিউটি ছিল। সকালে আমার গাড়িচালক আমাকে নিতে আসার সময়ে কাওরান বাজারে গাড়ি থামিয়েছে, চালক আমাকে আনতে আসছেন জানানোর পরও পুলিশ মামলা করেছে, সব কাগজপত্র নিয়ে গেছে, গাড়িতে থাকা আমার আইডি কার্ড ছুড়ে মেরেছে। আমি অনেক চেষ্টা করেও গতকাল মুভমেন্ট পাস বের করতে পারিনি। তাহলে আমি কিভাবে কোভিড ডিউটি করবো—প্রশ্ন করেন তিনি। বাংলাট্রিবিউন
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র বলেছে, আজ সারা দিনে কয়েক হাজার চিকিৎসক কাজে বেরিয়েছেন। যাঁরা পরিচয়পত্র দেখিয়েছেন তাঁদের বেশির ভাগ কোনো সমস্যায় পড়েননি। অল্প কয়েকজন সমস্যায় পড়েছেন। জরুরি সেবায় নিয়োজিতরা পরিচয়পত্র দেখালে সমস্যায় পড়বেন না। প্রথম আলো