তপু সরকার হারুন: শেরপুর যত্রঅত অবৈধ ভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উওোলন করে আসছে । অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে সংবাদমাধ্যমে অনেক খবর দেখা যায়। অবৈধ বালু উত্তোলন ক্ষতিকর-এ ব্যাপারে মোটামুটি সবাই একমত। কিন্তু তা কতটা ক্ষতিকর বা এর প্রভাব আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে কতটা পড়ছে, তা নিয়ে আরও গুরুতর ভাবনা জরুরি হয়ে পড়েছে।
আসলে সংবাদ পত্র/গনমাধ্যম শুধু আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও দেখা যায় ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ড্রেজার পুড়িয়ে অথবা জরিমানা এর বেশী নয় ।
বাংলাদেশে অবৈধ বালু উত্তোলনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমর্থন রয়েছে বলে বহু অভিযোগ পাওয়া যায়। অনেক জায়গায় এর সত্যতাও রয়েছে। অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু আবার জলাশয় অপদখলের অন্যতম পদ্ধতি। এসব বালু দিয়েই দখলের আগে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জলাশয় ভরাট করে থাকেন।
সরজমিনে দেখা যায় শেরপুরের বলাইয়ের চর দশআনী ও হাওড়াকান্দি পাড় মাঝখান থেকে দীর্ঘদিন থেকে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে লক্ষ্ লক্ষ্য সেপটি বালু উওোলন করে নির্মানাধীন রাস্তায় ব্যবহার করছে কেউ আবার নিজশ্ব জলাশয় ভরাট করছে ।
দশআনি এলাকার সবার পরিচিত সাবেক ঘুঘুরাকান্দি হাওড়া পাড় এর ছলো মেম্বার । তিনি নিজেকে সে এলাকার সবচেয়ে প্রভাবশালী একজন ব্যাক্তি মনে করে বালু উওোলনের বিষয়টি এরিয়ে যান । তিনিই তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে মামুন কে দিয়ে দুটি বড় ড্রেজার বসিয়ে বালু উওোলন করছেন ।
আশে পাশের বাড়ী ঘর ভেঙ্গে ভূমির খাত ও নদীগর্ভে চলে গেলেও তার কোন কৈফিত নেই । এ বিষয়ে- ঘুঘুরা কান্দি বেতমারী এলাকার চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মজিদ মজু কে জিজ্ঞেসে করলে তিনি বলেন আমি বহুবার বলেছি ছলো ভাই কে উনি কারো কথা শুনে না । এলাকার অনেক ঘরবাড়ী নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে ।
এদিকে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন দশআনী বাজারে সাবেক ছলো মেম্বার একজন প্রভাবশালী লোক । তিনি বর্তমান বলাইয়েরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ঈয়াকুব আলী মেলেটারী খুব ঘনিষ্ঠ আত্বীয় । তার প্রভাব বিস্তার করে স্থানীয় এলাকার মানুষের ঘরবাড়ী নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করলেও কোন কর্ণপাত করেন না । চেয়ারম্যান ঈয়াকুব আলী মেলেটারী কে বললে তিনি ও বিষয়টি এরিয়ে যান ।
সাবেক ঘুঘুরা কান্দি বেতমারী চেয়ারম্যান দুলালের সাথে কথা হলে তিনিও বলেন , আমি নিজেও একটি ড্রেজার বসিয়ে ছিলাম ..সেটি ভ্রাম্যমান আদালত এসে গত বছর জ্বালিয়ে দিয়ে যান ।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২০১০ সালের বালুমহাল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এ ছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ। কিন্তু বাংলাদেশে বাড়ি, রাস্তা, ব্রিজসহ যেকোনো ধরনের কংক্রিট নির্মাণসংক্রান্ত অবকাঠামো সম্পূর্ণ বৈধ বালু দিয়ে করা হয়েছে বলে কেউ দাবি করতে পারবে না।
পরিবেশের ক্ষতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলে নেতিবাচক পরিবর্তন, ভূগর্ভস্থ পানি ও বায়ুদূষণ, প্রাকৃতিক ভূচিত্র নষ্ট হওয়া ইত্যাদি।
বালু উত্তোলনে সৃষ্ট বায়ুদূষণে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের মধ্যে পরিবর্তন ঘটার ফলে তাদের আবাসস্থল যেমন ধ্বংস হচ্ছে, তেমনি তাদের খাদ্যের উৎসও ধ্বংস হচ্ছে। ফলে মৎস্য প্রজনন-প্রক্রিয়া পাল্টে যাওয়ার পাশাপাশি চাষাবাদের জমিও নষ্ট হচ্ছে।
বালু উত্তোলনে পানিদূষণসহ নদীগর্ভের গঠনপ্রক্রিয়া বদলে যাচ্ছে এবং নদী ভাঙছে। পুরো হাইড্রোলজিক্যাল কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বালু উত্তোলনের কাছাকাছি মাটির ক্ষয় যেমন ঘটছে, তেমনি মাটির গুণাগুণও নষ্ট হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া নলকূপে পানি পাওয়াও কষ্টকর হয়।
উন্নত ও উন্নয়নশীল সব দেশেই বালু উত্তোলন হয়। বিভিন্ন উৎস থেকে বালু উত্তোলনের ইতিবাচক দিকও রয়েছে। দারিদ্র্যবিমোচন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উদ্ভিদ ও প্রাণীর নতুন আবাস ও নতুন জলাধার সৃষ্টিতে এর অবদান রয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনাহীন যত্রতত্র বালু উত্তোলন পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এসব কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা করা হলেও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।
ঐতিহাসিকভাবেই নির্মাণ কাজের জন্য নদী থেকে বালু তোলা হতো। বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের কিছু নদী এজন্য নির্দিষ্ট ছিল। আপনি দেখবেন ‘সিলেট স্যান্ড’ নামে একটি বালির ব্র্যান্ড তৈরি হয়েছিল। সম্ভবত সবচেয়ে ভালো মানের বালু, নির্মাণ কাজের জন্য। এর বাইরে সারা দেশেই ব্যাপক মাত্রায় বালু উত্তোলন শুরু হয় আসলে নব্বইয়ের দশক থেকে। ওই সময় দেশে কংক্রিটের নির্মাণ কাজ ব্যাপক হাওরে শুরু হয়। এমনকি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এই দশক থেকে ব্যাপক মাত্রায় পাকা বাড়ি-ঘর নির্মাণ চলতে থাকে। রাস্তা-ঘাট পাকা হতে থাকে।
স্কুল, কলেজ, অফিস আদালত ভবন পাকা হতে থাকে। এর ফলে যেমন জাতীয়ভাবে, তেমনই স্থানীয়ভাবে বালুর চাহিদা বাড়তে থাকে। আপনি দেখবেন, একই সময়ে নিম্নভূমি, জলাভূমি, পুকুর, নালা, এমনকি বিল-ঝিলও ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ চলতে থাকে। ফলে হঠাৎ করেই বালির চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যায়। এই বালি কোথা থেকে আসবে? সহজ উৎস হিসেবে নদীর দিকে নজর দেয় বালু ব্যবসায়িরা।এটা আরও অনেক পরে। জলমহাল বা জঙ্গলমহাল যেমন কয়েক শতাব্দি প্রাচীন, বালুমহাল তেমন নয়। এমনকি কয়েক দশক পুরানোও নয়। জেলাওয়ারি প্রতিবছর নতুন করে বালুমহাল নির্ধারন করা হয়। সাধারণত বৈশাখ মাসের আগে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষে। তার আগে ওই বছরের জন্য বালুমহাল নির্ধারণ করা হয়।