অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: দেশের ইতিহাসে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু ৮৩! এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় ৭২০১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ভয়াবহতা বুঝতে পারছেন? কতোজন আক্রান্ত এবং মৃত্যু হলে ফিল্ড হাসপাতাল হবে? ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে বসুন্ধরায় একটি হাসপাতাল বানিয়েও কেন বন্ধ করা হলো? গত বছরের ১৭ মে হাসপাতালটি উদ্বোধনের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর আর কেউ পারে নাই, উন্নত দেশও পারে নাই।’ মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় গত বছর ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি করোনা হাসপাতাল করা হয়েছিলো। এটিকে ৫০০ শয্যার নগর হাসপাতালে রূপান্তরের পরিকল্পনা হচ্ছে বলে তখন জানানো হয়েছিলো। সেটি এখন ধুলো-ময়লার স্তূপে পরিণত হয়েছে। মাত্র কয়েক মাস আগে বানানো হাসপাতালটিতে কেন ধুলো-ময়লা জমলো? তাই এবার নতুন প্রকল্প। এখন একই ভবনের পঞ্চম তলায় করোনা চিকিৎসার জন্য আরেকটি হাসপাতাল বানানো হচ্ছে। আমাদের কী টাকা কামড়ায়?
বলা হয়েছে করোনা পরিস্থিতি গত বছরের শেষের দিকে ভালো হওয়ায় রোগী পাওয়া যাচ্ছিলো না। ভালো কথা। রোগী পাওয়া যাচ্ছিলো না। কিন্তু পৃথিবীর কেউ কী বলেছিলো যে প্যান্ডেমিক শেষ? বাংলাদেশে আর কখনো করোনা আসবে না। যতোদিন প্যান্ডেমিক শেষ হওয়ার ঘোষণা না আসে তার আগে কীভাবে করোনার জন্য তৈরি হাসপাতাল বন্ধ ঘোষণা হয়? কীভাবে মহাখালীর দ্বিতীয় তোলার হাসপাতালে ধুলো জমে। আর ধুলো ময়লা জমেছে বলে সেটাকে ঠিক না করে নতুন করে কেন পঞ্চম তলায় হাসপাতাল বানানো হচ্ছে? ও নতুন করে বানালে নতুন করে কেনাকাটা হবে। প্রচুর লাভ হবে। লাভটাই খালি দেখেন দেশের মানুষের দুঃখকষ্ট দেখেন না। করোনা রোগি কমে গিয়েছিলো বলে কীভাবে ক্রেডিট নিচ্ছিলো মনে আছে? যেন সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কারণেই করোনা কমে গিয়েছিলো। তবুও বিনা দ্বিধায় আমরা ক্রেডিট দিতে কার্পণ্য করিনি। কিন্তু ভবিষ্যতে আবার আসতে পারে সেই চিন্তাটা মাথায় রেখে কেন সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়নি?
দূরদৃষ্টি কাকে বলে সেটা সম্ভবত আমাদের অভিধানে নেই। মাত্র ৭ হাজার রোগী সনাক্তেই আমরা হিমশিম খাচ্ছি। এর বেশি হলে কী হবে? টিভিতে স্বাস্থ্য অধিপ্তরের এক ডাক্তারের বক্তব্য শুনছিলাম। কথাবার্তায় বোঝাই যাচ্ছিলো তারা নিজেদের কাজ নিয়ে কতো খুশি। আমাদের যে কিছুই ছিলো না এর মধ্যে এখন স্বল্প হলেও অক্সিজেন পাওয়া যায়, আইসিইউ বেড পাওয়া যায় ইত্যাদি। আমার তখন রাগে গা জ্বলছিলো। একটা সর্বাত্মক লকডাউন দিবে সেখানেও নাকি কল কারখানা খোলা রাখবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টা মালিকদের উপর ছেড়ে দিলো সরকার। আমরা কী জানি না আমাদের মালিকরা কেমন? তারাতো বাসাতেই থাকবে। এই কর্মীদের তারা কীভাবে ট্রিট করে বা করবে তা তো জানা। হঠাৎ করেতো মালিকরা বড় আত্মার মানুষ হয়ে যাবে না। সর্বাত্মক বলুন আর সীমিত আকারের লকডাউন বলুন একটা লকডাউন দিলে প্রথমে ভাবতে হবে নিম্নবিত্তের মানুষদের কথা। তাদের কীভাবে ঘরে রাখা যায় এবং সেটির একমাত্র রাস্তা হলো তাদের খাদ্য কিংবা আর্থিক সাহায্য ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া।
লেখক : শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়