শিরোনাম
◈ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে ইসরা‌য়েল‌কে বহিষ্কারের দাবি জানা‌লেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী ◈ কূটনৈতিক সংকট ছাপিয়ে বাণিজ্যে ভারত–বাংলাদেশের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বাড়ছে ◈ বিএনপিকে চাপে রাখতে জামায়াতের যুগপৎ আন্দোলন ◈ এই সরকারও পুরোনো পথে, প্রশাসনে পদ ছাড়াই পদোন্নতি ◈ এ‌শিয়া কাপ, রা‌তে আফগানিস্তা‌নের মু‌খোমু‌খি বাংলাদেশ ◈ ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম: হিজাব–নন-হিজাব, সবার পোশাক ও পরিচয়ের সমান অধিকার নিশ্চিত হবে ◈ সঙ্কটে এশিয়া কাপ! দা‌বি না মান‌লে, প‌রের ম‌্যাচ আরব আ‌মিরা‌তের বিরু‌দ্ধে খেল‌বে না পাকিস্তান ◈ হ্যান্ডশেক বিতর্কে এবার মুখ খুললেন সৌরভ গাঙ্গু‌লি ◈ নেতানিয়াহুর পাশে আমেরিকা, লক্ষ্য হামাস ধ্বংস: রুবিও ◈ বিনা পাসপোর্টে ভারতে যাওয়া ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করল বিএসএফ

প্রকাশিত : ১২ এপ্রিল, ২০২১, ০১:৫২ রাত
আপডেট : ১২ এপ্রিল, ২০২১, ০২:১১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষশূন্য সালথার ৭০ গ্রাম

ডেস্ক রিপোর্ট : ফরিদপুরের সালথায় তাণ্ডবের ঘটনায় মামলার পর গ্রেফতার আতঙ্কে উপজেলার অন্তত ৭০ গ্রাম এখন পুরুষশূন্য। ঘটনায় জড়িত অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। আবার ঘটনায় জড়িত নন; এমন অনেক লোকও গ্রেফতার ও হয়রানির ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ঢাকা পোস্ট

উপজেলার ১০৭ গ্রামের মধ্যে ৭০ গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়ন, সোনাপুর ইউনিয়ন, ভাওয়াল ইউনিয়ন ও গট্টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রাম পুরুষশূন্য। পুরুষ মানুষ না থাকায় মাঠে থাকা হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। মাঠেই ফসলগুলো নষ্ট হতে শুরু করেছে।

সহিংসতার ঘটনায় এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে পাঁচটি। এসব মামলায় ২৬১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩ থেকে ৪ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।

রোববার (১১ এপ্রিল) সকালে সালথা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সাপ্তাহিক হাটের দিন হওয়ায় বিভিন্ন গ্রামের নারীরা পেঁয়াজ ও পাটসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করছেন। আবার কেউ কেউ বাজার করতে এসেছেন।

হাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা সালমা বেগম বলেন, বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য নেই। ওই ঘটনার পর থেকেই ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন সবাই। তাই বাড়িতে পেঁয়াজ ছিল; সেগুলো বিক্রি করতে এসেছি। বিক্রি করে যে টাকা পাব, তাই দিয়ে বাজার সদাই করব। বাকিটা কিস্তি দেব।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, নারী ও শিশু ছাড়া কেউ বাড়িতে নেই। বিভিন্ন বাড়ির নারীর ও শিশুদের চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ দেখা গেছে। তারা বাইরের মানুষ দেখলেই ভয়ে দৌড়ে পালাচ্ছেন। ফসলি মাঠেও দেখা মেলেনি কোনো কৃষকের।

যেখান থেকে ঘটনাটি শুরু সেই ফুকরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার সবগুলো দোকান বন্ধ। এ সময় কথা হয় স্থানীয় হাসি বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, সবসময় ভয়ে আছি। কোন সময় পুলিশ আসে আতঙ্কে থাকি। বাড়িতে পুরুষ লোক নেই। সবাই গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়েছেন।

মিলি আক্তার নামে এক গৃহবধূ বলেন, ভয়ে বাড়ির পুরুষরা পলাতক। বাড়িতে রয়েছে নারীরা। বাড়িতে বাজার সদাই নেই, কোনো পুরুষ লোক নেই; যে তাকে দিয়ে বাজার সদাই করাব। ঘরে যা ছিল; তা দিয়েই কোনোরকমে চলছি।

মারুফা নামের আরেক গৃহবধূ বলেন, ক্ষেতের ফসল উঠানোর সময় এখন। পুরুষ মানুষ বাড়িতে না থাকায় মাঠের ফসল ঘরে তুলতে পারছি না। এই ফসল বিক্রি করেই সারা বছরের সংসার খরচ চলে। এখন কি করব; ভেবে পাচ্ছি না।

শৌলডুবি গ্রামের মালেকা বেগম বলেন, ভয়ে আমার স্বামী বাড়িতে থাকেন না। ছেলেকে আগেই বাইরে আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। জমিতে ফসল রয়েছে, সেগুলো কেটে ঘরে তুলতে হবে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জামাল পাশা বলেন, সালথার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে মিরান মোল্লা নামের একজন ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এছাড়া দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গ্রেফতার রয়েছেন। তাদের পুলিশি পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

জামাল পাশা বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে এ পর্যন্ত আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে ৫৮ জনকে। এর মধ্যে ৪৮ জনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, যারা এ ঘটনায় জড়িত নন; তাদের আতঙ্কিত হয়ে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। পুলিশ কাউকে হয়রানি করছে না। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, কোনো সহিংস ঘটনা ঘটলে কয়েকদিনের জন্য বিভিন্ন গ্রামে এ জাতীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দ্রুতই এ অবস্থা কেটে যাবে।

সোমবার (০৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় করোনা মোকাবিলায় কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর করতে দুই আনসার সদস্য ও ব্যক্তিগত সহকারীকে নিয়ে সালথা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি ফুকরা বাজারে যান। সেখানে তিনি যাওয়ার পর মানুষের জটলা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় তিনি ওই স্থান থেকে ফিরে আসেন এবং সেখানে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পাঠান। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত জনতা এসআই মিজানুর রহমানের ওপর হামলা চালান। এতে তার মাথা ফেটে যায়।

পরে স্থানীয় জনতা পুলিশের গুলিতে দুইজন নিহত ও বাহিরদিয়া মাদরাসার মাওলানা আকরাম হোসেন এবং জনৈক আরেক মাওলানার গ্রেফতারের গুজব ছড়িয়ে দেয়। গুজবে কান দিয়ে হাজারো মানুষ এসে থানা ঘেরাও করে। সেই সঙ্গে উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কয়েকটি মসজিদের মাইক থেকে এবং বেশ কয়েকটি মোবাইল থেকে ফেসবুক লাইভে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন নিহত ও মাওলানাকে গ্রেফতারের গুজব ছড়িয়ে হাজার হাজার মাদরাসাছাত্র, মুসল্লি ও জনতাকে ডেকে জড়ো করা হয় উপজেলা পরিষদ চত্বরে। এরপর দফায় দফায় হামলা চালানো হয় বিভিন্ন সরকারি দফতরে। সোমবার রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চলে এ তাণ্ডব। পরে সালথা থানা পুলিশের পাশাপাশি ফরিদপুর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা ও নগরকান্দা পুলিশ এবং র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা যৌথভাবে ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট সদস্যসহ আহত হন ২০ জন। আহতদের মধ্যে জুবায়ের হোসেন (২৫) ও মিরান মোল্যা (৩৫) নামের দুই যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাসলিমা আলী ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসলাম মোল্যাকে প্রধান করে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়