নিউজ ডেস্ক: দেশে শুরু হয়েছে এইচআইভি/এইডসের সেলফ টেস্ট ব্যবস্থা। এখন থেকে প্রেগনেন্সি পরীক্ষার মতো যে কেউ এইডসের পরীক্ষা ঘরে বসেই করতে পারবেন। এটি এক ধরনের এন্টিবডি পরীক্ষা। যা রক্ত বা মুখের লালা দিয়ে করা সম্ভব। টেস্টকিটে নমুনা দেওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যায়। সম্প্রতি সরকরের এইডস/এসটিডি কর্মসূচির পক্ষ থেকে এ ধরনের কিট বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে।
বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে, এইচআইভির এই সেলফ টেস্ট কিটের সেনসিটিভিটি (সংবেদনশীলতা) ৯২ শতাংশ। শরীরে এইচআইভি ভাইরাস প্রবেশের ৬ সপ্তাহ পর এ টেস্টের মাধ্যমে ভাইরাস নির্ণয় করা যায়। দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফডিএ ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই টেস্ট কিটের অন্যতম সুবিধা হলো এটি নির্ভুল এবং স্বল্প সময়ে ফলাফল নির্ণয়ে সহায়ক। ব্যবহারকারীর আস্থা তৈরি হয় এবং কুসংস্কার বা বৈষম্যের আশঙ্কা থাকে না। গোপনীয়তা রক্ষা করা যায়, মূল্যও কম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিবি-এলএএসপি/এইডস-এসটিডি কর্মসূচির লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম বলেন, সেলফ টেস্টিং পদ্ধতি জনপ্রিয় করার মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের মধ্যে পরীক্ষার হার বাড়ানো যেতে পারে।
ইউএন এইডসের বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা ৯০-৯০-৯০ (৯০ শতাংশ আক্রান্তদের পরীক্ষার আওতায় আনা, শনাক্তদের ৯০ শতাংশকে চিকিৎসার আওতায় আনা এবং চিকিৎসাধীন ৯০ শতাংশ রোগীর ভাইরাল লোড নিয়ন্ত্রণে রাখা) অর্জনে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা দেশে শুরু করা প্রয়োজন। যত বেশি পরীক্ষা হবে তত বেশি রোগী চিহ্নিত করা যাবে। চিহ্নিত হলেই তাৎক্ষণিক চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হবে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির ভাইরাল লোডের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। রোগী নিজে যেমন সুস্থ থাকবে, তেমনি সে অন্য কাউকে সংক্রমণও করতে পারবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এইচআইভি পরীক্ষার সঙ্গে কুসংস্কার ও বৈষম্য জড়িত। তাই সাধারণ মানুষ এইচআইভি পরীক্ষা স্বেচ্ছায় করতে আগ্রহী হয় না। প্রতিবেশী বা পরিচিত ব্যক্তিরা বিষয়টি জেনে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে অনীহা প্রকাশ করেন। অনেক সময় পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর সময়ের সাথে ও ক্লায়েন্টের সময়ের সমন্বয় হয় না। এ ক্ষেত্রে ‘সেলফ টেস্টিং’ হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা।
তারা বলেন, প্রাথমিকভাবে এই পদ্ধতিতে এইচআইভি পজিটিভ হলে ব্যক্তিকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালের চূড়ান্ত এইচআইভি পরীক্ষা করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। দেশে মূলত রক্তের নমুনা নিয়ে করতে হয়। বর্তমানে ২৩টি অগ্রাধিকার জেলার হাসপাতালে এই পরীক্ষা বিনা মূল্যে করা হয়। সম্প্রতি দ্যা গ্লোবাল ফান্ডের সহায়তায়, বাংলাদেশের বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনা করে দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষা করা সম্ভব বলে দেশের এইচআইভি কর্মসূচিকে ছয় হাজার সেলফ টেস্ট কিট অনুদান দিয়েছে। -যুগান্তর